সাংবাদিকের নিরাপত্তা এবং সাংবাদিকতার স্বাধীনতা

সোহরাব হাসান

বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের ১-এ বলা আছে, ‘চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হইল।’ একই অনুচ্ছেদের ২-এ আছে, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে (ক) প্রত্যেক নাগরিকের বাক ও ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতার অধিকারের এবং (খ) সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান করা হইল।’

সে ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, নাগরিকের চিন্তা ও ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। নাগরিকের চিন্তা ও ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতা না থাকলে সংবাদক্ষেত্র বা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা অর্থহীন। সংবাদমাধ্যম তো মানুষের কথাই বলে। মানুষ মানে বিশেষ শ্রেণি বা গোত্রের মানুষ নয়, রাষ্ট্রের সীমানাভুক্ত সব মানুষ। এ প্রেক্ষাপটেই বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়টি আলোচনা করতে হবে।

১৯৭২ সালে যখন সংবিধান প্রণীত হয়, তখন সংবাদক্ষেত্র বলতে প্রিন্ট মিডিয়া বা মুদ্রিত পত্রিকাকে বোঝাতো। বেতার-টেলিভিশন ছিল সম্পূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণাধীন; যেখানে সাংবাদিকতার সুযোগ ছিল না, এখনো নেই। হালে সংবাদক্ষেত্রের পরিসর বেড়েছে। মুদ্রিত পত্রিকার পাশাপাশি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বেসরকারি টিভি চ্যানেল, এফএম রেডিও ইত্যাদিও সংবাদক্ষেত্রের আধেয় ধরা হয়।

সাংবাদিকতার স্বাধীনতার প্রশ্ন এলে অনেকে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসংগত বাধা-নিষেধের কথা বলেন। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালনার কোনো ক্ষেত্রে আইনের দ্বারা আরোপিত বিধিনিষেধ নেই? সংবাদক্ষেত্র থেকে রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রই আইনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আইনপ্রণেতা, নির্বাহী বিভাগের অধিকর্তা কিংবা বিচারকও আইনের বাইরে যেতে পারেন না।

গেলে দেশে নৈরাজ্য তৈরি হয়, আইনের শাসন থাকে না। কয়েক বছর আগে রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণী ধর্ষণ মামলায় ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক ৭২ ঘণ্টা পর ধর্ষণ মামলা নেয়া যাবে না বলে যে মন্তব্য করেছিলেন, উচ্চ আদালত তা আইনবহির্ভূত আখ্যা দিয়ে তাকে বিচারিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। ফৌজদারি অপরাধ কখনো তামাদি হয়ে যায় না। সাংবাদিকসহ রাষ্ট্রের প্রত্যেক নাগরিকই আইন মেনে চলতে বাধ্য।

১৭৮০ সালে জেমস অগাস্টাস হিকির বেঙ্গল গেজেট প্রকাশের মধ্যদিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে মুদ্রিত গণমাধ্যম বা সংবাদপত্রের যাত্রা শুরু হয়; যদিও বাংলা ভাষায় প্রথম পত্রিকা সমাচার দর্পণ প্রকাশিত হয় আরও ৩৮ বছর পর; ১৮১৮ সালের ২৩ মে। এরপর ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক রাজত্বে ইংরেজি ও স্থানীয় ভাষায় বহু পত্রিকা প্রকাশ পেয়েছে। এসব পত্রিকায় ক্ষুদ্র একটি অংশ সরকারের তল্পিবাহক হিসেবে কাজ করলেও অন্যরা  প্রশাসনের দুর্নীতি ও আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড পাঠকের সামনে তুলে ধরেছে। রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ধূমকেতু ঘোষণা করল, ‘স্বরাজ-টরাজ বুঝি না। ভারতবাসীর পূর্ণ স্বাধীনতা চাই।’ কাঙাল হরিনাথ কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে গ্রামবার্তা প্রকাশিকা বের করে গ্রামের দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের অভাব-অভিযোগের পাশাপাশি জমিদার-মহাজনদের শোষণের চিত্র তুলে ধরেন।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের আগে কলকাতা ছিল অবিভক্ত বাংলার রাজধানী এবং শিল্প-সাহিত্যচর্চা ও সাংবাদিকতার কেন্দ্র। সে সময় পাকিস্তান আন্দোলনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালনকারী বাংলা পত্রিকাগুলোও প্রকাশিত হতো কলকাতা থেকে। সাতচল্লিশের আগে পূর্ববঙ্গ থেকে প্রকাশিত পত্রিকার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল রংপুর বার্তাবহ, দেশের বাণী, জাগরণ, দৈনিক জ্যোতি, ইস্টবেঙ্গল টাইমস, ঢাকা নিউজ, ঢাকা প্রকাশ ইত্যাদি।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আগে থেকে দেশটির রাষ্ট্রভাষা নিয়ে যে বিতর্ক শুরু হয়, তাতে বাংলা পত্রিকাগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য সৈয়দ জিয়াউদ্দিন উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করলে বাঙালি লেখক-বুদ্ধিজীবী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, মুহম্মদ এনামুল হক, আবদুল হক প্রমুখ এর প্রতিবাদ করে পত্রিকায় প্রবন্ধ লেখেন।

১৯৪৮ সালে গণপরিষদের কংগ্রেসদলীয় সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে ইংরেজি ও উর্দুর পাশাপাশি বাংলা ব্যবহারের প্রস্তাব করলে পাকিস্তানি শাসকেরা তা নাকচ করে দেন। এর প্রতিবাদে ১১ই মার্চ প্রদেশব্যাপী ধর্মঘট পালিত হয়। তখনো মাওলানা আকরম খাঁ প্রতিষ্ঠিত দৈনিক আজাদ, সোহরাওয়ার্দী প্রতিষ্ঠিত ইত্তেহাদ কলকাতা থেকে প্রকাশিত হতো এবং এখানকার রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক খবরগুলো গুরুত্ব দিয়ে ছাপতো।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ঢাকা থেকে প্রথম যে দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়, তা বাংলা নয়, ইংরেজি, পাকিস্তান অবজারভার। অবশ্য চট্টগ্রাম থেকে দৈনিক পূর্ব পাকিস্তান ও পয়গাম নামে দুটি পত্রিকা প্রকাশিত হয় দেশ বিভাগের আগে-পরে। ১৯৪৮ সালে কলকাতা থেকে দৈনিক আজাদ, ইত্তেহাদ ও মিল্লাতও ঢাকায় চলে এলে তৎকালীন পূর্ব বাংলার সাংবাদিকতা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করে। ১৯৫০ সালের ১৫ই মে ৬৯টি সংবাদপত্র ও সাময়িকপত্রের সম্পাদকেরা সম্মেলন করে পূর্ব পাকিস্তান সাংবাদিক সমিতি গঠন করেন। এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন যথাক্রমে আবুল কালাম শামসুদ্দীন ও মোহসীন আলী।

১৯৫১ সালের ১৭ মে খায়রুল কবিরের সম্পাদনায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। এক বছরের ব্যবধানে আর্থিক কারণে পত্রিকার মালিকানায় পরিবর্তন ঘটে এবং ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে দৈনিক আজাদ ও সাপ্তাহিক ইত্তেফাক, পাকিস্তান অবজারভার, দেশের দাবি, সিলেট থেকে প্রকাশিত নওবেলাল সাহসী ভূমিকা রাখে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের ভরাডুবির পর ফের সংবাদ-এর মালিকানা বদল হয় এবং আহমদুল কবির এর দায়িত্ব নেন। সেই থেকে সংবাদ বামপন্থিদের পত্রিকা হিসেবে পরিচিত। ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগ ভেঙে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠিত হলে সংবাদ হয় এর অলিখিত মুখপত্র। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর নামেই সাপ্তাহিক ইত্তেফাক প্রকাশিত হয়। ১৯৫৩ সালের ২৪শে ডিসেম্বর দৈনিক ইত্তেফাক প্রকাশিত হয় তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সম্পাদনায়। রাজনৈতিকভাবে পত্রিকাটি আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। রাজনৈতিক মতভেদ সত্ত্বেও পাকিস্তান আমলে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন, তথা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির লড়াইয়ে ইত্তেফাক ও সংবাদ দৃঢ় অবস্থান নেয়।

১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করলে সাংবাদিকতার ওপর গুরুতর আঘাত আসে। অনেক পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়। যেসব পত্রিকা প্রকাশিত হতো, সেগুলোর ওপর কঠোর সেন্সরশিপ জারি করা হয়। সামরিক কর্মকর্তাদের ছাড়পত্র না নিয়ে কোনো খবর প্রকাশ করা যেত না। সে সময় পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা ছিল খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। গোয়েন্দা বিভাগের চোখে দেশদ্রোহী কিংবা বামপন্থি লোকজনই পত্রিকায় চাকরি করতেন। সংবাদ অফিস ছিল বংশালে। আর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ছিল উর্দু রোডে। অনেকে জেলখানা থেকে বেরিয়ে সরাসরি সংবাদ অফিসে এসে কাজ শুরু করতেন। ইত্তেফাক ছিল বামবিরোধী পত্রিকা। কিন্তু সেখানে অনেক বামপন্থি কাজ করতেন। ১৯৬৪ সালে শাসকগোষ্ঠীর প্ররোচনায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগলে আজাদ, সংবাদ ও ইত্তেফাক অভিন্ন সম্পাদকীয় লেখে, ‘পূর্ব পাকিস্তান রুখিয়া দাঁড়াও’।

১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলে ইত্তেফাক, সংবাদ, আজাদ প্রভৃতি পত্রিকা সে খবর গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করে। প্রেস ট্রাস্টের মালিকানাধীন দৈনিক পাকিস্তান ও মর্নিং নিউজও ছয় দফার বিপক্ষে অবস্থান নেয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালেও এই দুটি পত্রিকার ভূমিকা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ; যে কারণে উনসত্তররে গণ-অভ্যুত্থানের সময় বিক্ষুব্ধ জনতা দৈনিক পাকিস্তান ও মর্নিং নিউজ অফিস পুড়িয়ে দেয়। তবে সত্তরের নির্বাচনের পর বাঙালি মালিকানাধীন সব পত্রিকাই বাঙালির স্বাধিকারের পক্ষে অবস্থান নেয়। এমনকি প্রেস ট্রাস্টের মালিকাধীন দৈনিক বাংলাও এই নীতি অনুসরণ করে। ২৫শে মার্চ পর্যন্ত  তাদের এই অবস্থান অটুট ছিল। পরে কেউ কেউ সুর বদল করে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী ২৫শে মার্চের অভিযানের প্রথম প্রহরে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পিলখানায় ইপিআর সদর দপ্তর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি সংবাদপত্র অফিসগুলোকেও লক্ষ্যবস্তু করে। ২৫শে মার্চ রাতেই তারা ইত্তেফাক ও দ্য পিপলস অফিস জ্বালিয়ে দেয়। আক্রমণ করা হয় তোপখানা রোডে অবস্থিত জাতীয় প্রেস ক্লাব ভবনে। আগুন লাগানো হয় সংবাদ অফিসেও। প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক শহীদ সাবের এই অফিসেই পুড়ে মারা যান। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ সাংবাদিক তিনি। মুক্তিযুদ্ধের শেষ দিকে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসররা বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে সিরাজুদ্দীন হোসেন, নিজামউদ্দিন আহমদ, আ ন ম গোলাম মোস্তফা প্রমুখকে ধরে নিয়ে যায় এবং হত্যা করে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মুক্তাঞ্চল তথা মুজিবনগর থেকে বহু পত্রিকা বের হয়; যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল জয়বাংলা, মুক্তিযুদ্ধ, নতুন বাংলা, বাংলার বাণী, বিপ্লবী বাংলাদেশ, দাবানল, বাংলার মুখ। এসব পত্রিকা ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান ছিল স্বাধীনতাকামী মানুষের সাহসের উৎস। বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম হোতা চৌধুরী মইনউদ্দিন, যিনি পূর্বদেশ পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন, স্বাধীনতার পরপরই পালিয়ে যুক্তরাজ্যে চলে যান। ডেভিড বার্গম্যানের ডকু-ফিল্ম ওয়ার ক্রাইম ফাইলস-এ চৌধুরী মইনউদ্দিনসহ তিন ঘাতকের কথা আছে। একাত্তরে মুজিবনগর ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অনেক পত্রিকা বের হয়েছে। এসব পত্রিকার সাংবাদিকেরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাঠকের কাছে মুক্তিযুদ্ধের খবর পৌঁছে দিয়েছেন। ফয়েজ আহমদ, কামাল লোহানী, সন্তোষ গুপ্ত, এম আর আখতার মুকুলসহ অনেক সাংবাদিক যুক্ত ছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের মানুষের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

স্বাধীনতার পর যে উদ্দীপনা ও উচ্ছ্বাস নিয়ে বাংলাদেশের সাংবাদিকতা যাত্রা শুরু করেছিল, তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। এর অনেকগুলো কারণ ছিল। সাংবাদিকতার স্বাধীনতা বিষয়ে সংবিধানে যা-ই লেখা থাকুক না কেন, রাষ্ট্র কাঠামোয় মৌলিক পরিবর্তন না এলে তা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। রাষ্ট্রীয় প্রচারযন্ত্র তথা বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার, সরকারি বার্তা সংস্থা চলেছে পাকিস্তান আমলের মতো সরকারের ইচ্ছায়; সেখানে বিরোধী দল বা সমাজের অন্যান্য অংশীজনের কথা একেবারেই ছিল না। তদুপরি পাকিস্তানি মালিকানাধীন ও পরিত্যক্ত সংবাদপত্রগুলোর দায়িত্বও নেয় সরকার। সরকারি পত্রিকা মানেই ক্ষমতাসীনদের গুণগান গাওয়া।

এ ছাড়া সেই সময়ের অস্থির রাজনীতির ছাপও সংবাদমাধ্যমে পড়ে। অতি বাম ও অতি ডানপন্থিরা বাংলাদেশের অস্তিত্বই অস্বীকার করে বসে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের মধ্যে যে বিভক্তি দেখা দিয়েছিল; উত্তরকালে তা প্রকাশ্য রূপ নেয়। ১৯৭২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর আশীর্বাদ নিয়ে প্রকাশিত দৈনিক গণকণ্ঠ কিছু দিন না যেতেই সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উপযোগী গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠা করতে যে সহিষ্ণু রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবেশ দরকার, তা তখন বাংলাদেশে ছিল না। এখনো নেই। সরকার ও বিরোধী দল একে অপরকে দেশের শত্রু মনে করতো। এ অবস্থায় বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা কেবল দুরূহ নয়, প্রায় অসম্ভব।

বাংলাদেশের গণমাধ্যম কয়েকটি পর্বে ভাগ করা যায়। স্বাধীনতা-উত্তর আওয়ামী লীগের শাসনামল, জিয়াউর রহমান ও এরশাদের সামরিক-বেসামরিক শাসনামল এবং নব্বই-পরবর্তী গণতান্ত্রিক শাসনামল। আমাদের এখানে যারা ক্ষমতার রাজনীতি করেন, বা অতীতে করেছেন, তাদের মধ্যে কতগুলো সাধারণ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। ক্ষমতার বাইরে থাকতে তারা গণমাধ্যমের পূর্ণ স্বাধীনতার বিষয়ে উচ্চকণ্ঠ থাকেন; গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সব কালাকানুন বাতিল করার ওয়াদা দেন। কিন্তু ক্ষমতায় এসে এই রাজনীতিকেরাই নতুন আইন করেন সাংবাদিকতার হাত-পা বেঁধে দিতে। এর একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের স্বল্পায়ু শাসন। নব্বইয়ে স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের পর আন্দোলনরত তিন জোটের ইচ্ছা অনুযায়ী বিচারপতি সাহাবুদ্দীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ১৬, ১৭ ও ১৮ নম্বর ধারা বাতিল করেন। ফলে সেন্সরশিপ ও সংবাদপত্রের প্রকাশনা বাতিল সংক্রান্ত আইনের বিলুপ্তি ঘটে। এই আইন বলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সরকার বহু পত্রিকার ডিক্লিয়ারেশন বাতিল করে দিয়েছিল। প্রকাশিত পত্রিকায় আইনবিরোধী কিছু ছাপা হলে সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু ভবিষ্যতে পত্রিকা কী লিখবে, তা অনুমান করে পত্রিকা বন্ধ করা ছিল চরম স্বেচ্ছাচারিতা।

স্বাধীনতার পর প্রায় প্রতিটি দল নিজ নিজ রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ প্রচারের জন্য পত্রিকা প্রকাশ করতে থাকে। ফলে দলীয় বৃত্তের বাইরে যে বৃহত্তর জনগণ, তাদের অভাব-অভিযোগ, আশা-আকাক্সক্ষার বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। সে সময়ে সরকার-সমর্থক পত্রিকা পড়লে মনে হতো দেশে কোনো সমস্যা নেই; সবকিছু ঠিকঠাকমতো চলছে। বিরোধী দলগুলো দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। আবার বিরোধী দলের পত্রিকা পড়লে মনে হতো সরকারের অস্তিত্বই নেই। এই বিপরীতমুখী ধারায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সত্য; যার ওপর সাংবাদিকতা পেশা দাঁড়িয়ে থাকে। আওয়ামী শাসনামলে প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা হলো: ইত্তেফাক, সংবাদ, দৈনিক পাকিস্তান, বাংলার বাণী, পূর্বদেশ, আজাদ, জনপদ, গণকণ্ঠ, দৈনিক স্বদেশ, গণবার্তা, হক কথা, অভিমত, ইত্তেহাদ, চরমপত্র, নয়া যুগ, গণ বার্তা, বাংলার ডাক, আজাদী, জাগ্রত জনতা,হলি ডে, বাংলাদেশ টাইমস, বাংলাদেশ অবজারভার, পিপলস প্রভৃতি।

আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৭৫ সালে সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে একদলীয় শাসন কায়েম করে এবং চারটি  দৈনিক পত্রিকা রেখে বাকি পত্রিকা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু সে সময় খুব কম সাংবাদিকই সরকারের এই নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পেরেছেন। দলে দলে গিয়ে তারা বাকশালে যোগ দিয়েছেন। এদের মধ্যে এমন সাংবাদিকও আছেন, যারা পরবর্তীকালে প্রচণ্ডভাবে আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতি করেছেন।

পঁচাত্তরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যার পর যারা ক্ষমতা দখল করেছিলেন, তারা বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। ৭ই নভেম্বরের কথিত সিপাহি জনতার বিপ্লবের মধ্যদিয়ে জিয়াউর রহমান ক্ষমতাসীন হন। তিনি আওয়ামী-বাকশাল বিরোধী মনোভাবকে কাজে লাগিয়ে বিএনপি নামে একটি দল করেন এবং নিজেই এর চেয়ারম্যান হন। জিয়ার আমলে অনেক দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে। পত্রিকার ক্ষেত্রে তিনি শতফুল ফোঁটার নীতি নিলেও তা সাংবাদিকতার স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছেন এ কথা বলা যাবে না। বাংলার বাণীসহ অনেক পত্রিকাকে ছাড়পত্র নিতে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে হয়েছে। সরকারের হাতে একাধিক বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকা থাকার পরও জিয়া দলীয় মুখপত্র হিসেবে দৈনিক দেশ বের করেছিলেন।

পূর্বসূরির মতো এরশাদও বিভিন্ন দল থেকে লোক ভাগিয়ে এনে নতুন দল করেন। জাতীয় পার্টি। এই দলে যেমন সাবেক বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা ছিলেন, তেমনি ছিলেন মাওলানা মান্নানের মতো মৌলবাদী নেতাও। এরশাদই রাজনীতির সঙ্গে ধর্মকে সরাসরি যুক্ত করেন, রাষ্ট্রধর্ম আইন জারি করেন। তার সময়ে সবচেয়ে বেশি পত্রিকা বন্ধ করা হয়েছে, অনেক সাংবাদিক জেলে গিয়েছেন। আবার তার সময়ে সাংবাদিকতার স্বাধীনতার জন্য আন্দোলনও হয়েছে বেশি। এরশাদের আমলে নিয়মিত প্রেস অ্যাডভাইস আসতো, ‘এটা ছাপা যাবে, ওটা ছাপা যাবে না।’

সরকারের বিধিনিষেধ মোকাবিলায় সাংবাদিকরাও নানান কৌশল অবলম্বন করেন। যেমন সরকার ঘোষণা দিলো, বিরোধী দলের হরতালের খবর ছাপা যাবে না। সাংবাদিকরা হরতালের বদলে লিখলেন কর্মসূচি। একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা সম্পাদকীয় পাতা পুরোটাই খালি রেখেছিল। এই অবস্থান পাকিস্তান আমলে দৈনিক ইত্তেফাক-এর কথা মনে করিয়ে দেয়। কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ববঙ্গে যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙে দিয়ে ৯২/ক ধারা জারি করার পর  ইত্তেফাক সম্পাদকীয় স্তম্ভ খালি রেখে লিখেছিল: কিছুই লেখা গেল না। বাংলাদেশের সাংবাদিকরা কিছুই না লেখার অবস্থায় অনেকবার পড়েছেন। তারা প্রতিবাদও করেছেন।

এরশাদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের চূড়ান্ত লড়াই হয় ১৯৯০ সালের ২৭শে নভেম্বর। বিরোধী দলকে মোকাবিলা করতে সরকার জরুরি অবস্থা জারি করে, সংবাদপত্রের ওপর আরোপ করা হয় কঠোর বিধিনিষেধ। বলা হয়, সরকারের অনুমতি ছাড়া কিছুই লেখা যাবে না। ছাপার আগে সবকিছু তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দেখিয়ে নিতে হবে। সাংবাদিক সমাজ সিদ্ধান্ত নিলো, কঠোর বিধিনিষেধ প্রত্যাহার না করলে অনির্দিষ্টকাল ধর্মঘট চলবে। এরপর এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে আর কোনো পত্রিকা বের হয়নি। সাংবাদিকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকার কারণেই এই আন্দোলন করা সম্ভব হয়েছিল। সে সময়ে সরকারি পত্রিকা ও বার্তা সংস্থায় কর্মরত সাংবাদিকরাও সিদ্ধান্তের বাইরে যাননি। বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে অনন্য নজির এটি।

নব্বইয়ে স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের পর গণতন্ত্রের অভিযাত্রা শুরু হয়। সাংবাদিকতায়ও আসে নতুন উদ্দীপনা। প্রকাশনার সংখ্যাও দ্রুত বেড়ে যায়। ১৯৯০ সালে প্রকাশিত পত্রিকার সংখ্যা ছিল ৬৬৯, পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৪০। ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলের আসনে বসে। জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব মিলে রাষ্ট্রপতি শাসনব্যবস্থার বদলে সংসদীয় ব্যবস্থা চালু করে। কিন্তু সংসদীয় ব্যবস্থায় যেভাবে জাতীয় সংসদ রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র হওয়ার কথা, সেটি হয়নি। যখন যারা ক্ষমতায় ছিলেন, সবকিছু দখল করতে চেয়েছেন। বিপরীতে বিরোধী দল রাজপথে সমস্যার সমাধান খুঁজেছে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ, দুই সরকারের আমলে প্রায় অর্ধেক সময় বিরোধী দল সংসদ বর্জন করেছে। ১৯৯৪ সালে মাগুরা উপনির্বাচনকে নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে রূপ নেয় এবং বিএনপির বাইরে প্রায় সব দল আন্দোলনে যোগ দেয়। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রতি সাংবাদিক সমাজ এই আশায় সমর্থন জানিয়েছিল যে সুষ্ঠু নির্বাচন হলে গণতন্ত্র সুদৃঢ় হবে এবং সাংবাদিকতার স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, গণতান্ত্রিক শাসনের তিন দশক পরও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা অধরাই থেকে গেল।

পূর্বাপর সরকারগুলো সাংবাদিকতার স্বাধীনতা নিশ্চিত না করলেও এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা কম করেনি। বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা মনে করলেন সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়াতে যুক্তরাজ্য থেকে দৈনিক বাংলার একটি সংস্করণ প্রকাশ করা প্রয়োজন। এ জন্য সরকারের কোষাগার থেকে মোটা অঙ্কের বরাদ্দও পাওয়া গেল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেই প্রকল্প বাতিল হয়। এমনকি কিছু দিন পর তারা সরকারের মালিকাধীন সব পত্রিকা বন্ধ করে দেয়। তাদের আমলে টেলিভিশন ও বেতারের স্বায়ত্তশাসন দেয়ার উদ্দেশ্যে সাবেক সচিব আসাফউদ্দোলার নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল। কমিশনের সদস্যরা বিভিন্ন দেশ ঘুরে সুপারিশও পেশ করেছিলেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয় বেতার-টিভি চলেছে আগের নীতিতেই। একসময় বিটিভিকে সাহেব-বিবি-গোলামের বাক্স বলা হতো। পরবর্তী সময় সাহেব চলে যাওয়ায় এটি হয় বিবি-গোলামের বাক্স। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে প্রথম বেসরকারি টিভি চ্যানেল চালুর ছাড়পত্র দেয়; যা বাংলাদেশে টিভি সাংবাদিকতার দ্বার মুক্ত করেছে। বর্তমানে দেশে তিন ডজনেরও বেশি বেসরকারি টিভি চ্যানেল আছে। ডজনখানেক এফএম রেডিও আছে। তবে এ ক্ষেত্রেও সরকারগুলো দলীয়করণের বাইরে যেতে পারেনি। যখন যেই দল ক্ষমতায় আসে, তাদের আস্থাভাজন ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তারাই ছাড়পত্র পেয়ে থাকেন। বিরোধী মনোভাবের ব্যক্তিরা পান না। বাংলাদেশের মানুষ কখনো নিরঙ্কুশ গণতন্ত্র ভোগ করেননি; সাংবাদিকতার নিরঙ্কুশ স্বাধীনতার স্বাদও তারা পাননি।

নব্বই পরবর্তী  গণমাধ্যমের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে আমরা কয়েকটি প্রবণতা লক্ষ্য করি। প্রথমত রাজনৈতিক পক্ষপাতমুক্ত থেকে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনা। এজন্য সব সরকারের আমলেই সাংবাদিকদের প্রতিকূলতার মধ্যে পড়তে হয়েছে। দ্বিতীয়ত দলীয় রাজনীতির বাহন হিসেবে পত্রিকা প্রকাশ করা। তৃতীয়ত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রচ্ছন্ন রেখে যতটা সম্ভব পেশাদারি বজায় রাখা। চতুর্থত গণমাধ্যমকে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে ব্যবহার  করা। প্রবণতা যাই থাকুক না কেন গণমাধ্যমকে টিকে থাকতে হয় সাংবাদিকতা করেই।  শেষ বিচারে সেই গণমাধ্যমই পাঠক বা দর্শক গ্রহণ করবেন, যাতে তারা বস্তুনিষ্ঠ খবরটি পাবেন।

রাজনৈতিক দলের মতো গণমাধ্যমের জনপ্রিয়তাও স্থায়ী নয়। বিশেষ সময়ে কোনো বিশেষ গণমাধ্যমের জনপ্রিয় হওয়া আবার অন্য সময়ে সেই জনপ্রিয়তায় ধস নামলে বুঝতে হবে কোথাও মস্ত বড় গলদ আছে। সংবাদপত্র কিংবা টিভি চ্যানেল হোক গণমাধ্যমের জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে হলে পেশাদারিত্বের ক্ষেত্রে আপসহীন হতে হবে; প্রভাবশালী কিংবা ক্ষমতাধরদের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করতে হবে। আগে গণমাধ্যমের অংশীজনদের মধ্যে ঐক্য ছিল। এখন ঐক্যের চেয়ে বিভেদই বেশি দৃশ্যমান।

নব্বই পরবর্তী সময়ে যেসব পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ডেইলি স্টার, জনকণ্ঠ, আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ, প্রথম আলো, সকালের খবর, মানবজমিন, যুগান্তর, সমকাল, কালের কণ্ঠ, আমাদের সময়, আমাদের অর্থনীতি, আমাদের নতুন সময়, বাংলাদেশ প্রতিদিন, দ্য সান, ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস, নিউজ টু ডে, নিউ এজ, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, বণিক বার্তা, দেশ রূপান্তর, আজকের পত্রিকা। চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও নতুন নতুন পত্রিকা প্রকাশিত হচ্ছে। নতুন নতুন টেলিভিশন চ্যানেল চালু হচ্ছে। এর অর্থ গণমাধ্যমের চাহিদা আছে।

বর্তমানে সাংবাদিকদের নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। কর্তৃত্ববাদী শাসনের চ্যালেঞ্জ, জঙ্গিবাদী আক্রমণের চ্যালেঞ্জ। সন্ত্রাসী আক্রমণের চ্যালেঞ্জ, যে দেশে মত প্রকাশের জন্য লেখক ও প্রকাশককে হত্যা করা হয়, যে দেশে সংবাদ প্রকাশের কারণে সাংবাদিক খুন হন, সে দেশে সাংবাদিকতা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। গত তিন দশকে প্রায় অর্ধশত সাংবাদিক খুন হয়েছেন। পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কখনো তারা চরমপন্থিদের, কখনো সন্ত্রাসীদের, কখনো জঙ্গবাদীদের জিঘাংসার শিকার হয়েছেন। কিন্তু দুই একটা ব্যতিক্রম ছাড়া কোনোটার বিচার হয়নি। এ কারণে সাংবাদিকেরা এক সময় স্লোগান তুলেছিলেন ‘বিচার পাই না, তাই বিচার চাই না।’ সাংবাদিকের নিরাপত্তা এবং সাংবাদিকতার স্বাধীনতার জন্য এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

সংবাদপত্র ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া আঙ্গিক ও বৈশিষ্ট্যে ভিন্ন হলেও দুটোই শক্তিশালী গণমাধ্যম। বেসরকারি টিভি চ্যানেল আসার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে সংবাদপত্রই ছিল প্রধান গণমাধ্যম। এমনকি গত শতকে টেলিভিশনের বিপুল জনপ্রিয়তাও সংবাদপত্র বা মুদ্রিত গণমাধ্যমের অবস্থানকে  টলাতে পারেনি। সে সময় টেলিভিশন সংবাদমাধ্যমের চেয়ে বিনোদন মাধ্যম হিসেবেই বেশি সমাদৃত ছিল। অধুনা  ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলো ২৪ ঘণ্টা সংবাদ পরিবেশ করে দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। ফলে সংবাদপত্রকে সংবাদ পরিবেশনায় নতুনত্ব আনতে হয়েছে। প্রতিটি পত্রিকাই এখন অনলাইন প্রথম নীতি নিয়ে এগোচ্ছে। মানুষ কোন মাধ্যম থেকে খবরটি পেলো তা  গুরুত্বপূর্ণ নয়, গুরুত্বপূর্ণ হলো কত দ্রুত খবরটি পাওয়া গেল। তথ্যপ্রযুক্তি প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বব্যাপী সংবাদপত্র বা মুদ্রিত গণমাধ্যমে মন্দা চলছে। বিশেষ করে উন্নত পশ্চিমা বিশ্বে অনেক নামকরা পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেছে। একাধিক পত্রিকা একীভূত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অনেক বিখ্যাত পত্রিকা মুদ্রণ সংস্করণ বন্ধ করে অনলাইন সংস্করণ চালু করেছে। পত্রিকার পাঠকের চাহিদা কমে গেলে এর বিক্রি কমে যায়। আর বিক্রি কমে গেলে আয়ের প্রধান উৎস বিজ্ঞাপনও কমে যায়। কোনো দেশেই পত্রিকা বিক্রি করে খরচ ওঠে না। বিজ্ঞাপন থেকেই খরচ ওঠাতে হয়। অনেক দেশে সংবাদপত্রকে অনেক কর সুবিধা দেয়া হয়। সংবাদপত্র কেবল ব্যবসা নয়, সেবাও।  অতিরিক্ত করারোপের কারণে বাংলাদেশে নিউজপ্রিন্টসহ মুদ্রণশিল্পের প্রায় সব কাঁচামালের দাম বেশি।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মূলধারার সংবাদমাধ্যমের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচনা করেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ। তাদের মতে, মানুষ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সব খবর পেয়ে যান। তারা পয়সা খরচ করে পত্রিকা কিনবেন কেন? টিভি চ্যানেল দেখবেন কেন? দেখবেন এ কারণে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সঠিক তথ্যটি পাওয়া যায় না। অনেক সময় শোনা কথার ভিত্তিতে ‘খবর’ প্রচার করে। পরে দেখা যায় তথ্যটি ঠিক নয়। এ ধরনের ভুল খবর জনমনে শুধু বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে না, মারাত্মক ক্ষতিরও কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই, মূলধারার গণমাধ্যমকে অধিক দায়িত্বশীলতা ও সৃজনশীলতার সঙ্গে প্রকৃত তথ্য পাঠকের কাছে পৌঁছাতে হবে। তরুণেরা পত্রিকা না পড়ে মুঠোফোনেই খবর দেখে নেয়। সেজন্য মুদ্রিত পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে প্রতি মুহূর্তে হালনাগাদ তথ্য দিতে হয়। দুটো মাধ্যম পাশাপাশি থাকলেই পাঠক বুঝতে পারবেন, কোনটি খবর আর কোনটি গুজব। আমাদের  মনে রাখতে হবে, যে খবর সাংবাদিকের কাছে এসে ধরা দেয়, সেটি খবর নয়। খবর হলো সেটি, যেটি তত্ত্ব তালাশ করে বের করতে হয়। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির যুগে পাঠক ধরে রাখতে হলে যেমন বিষয় বৈচিত্র্য থাকতে হবে, তেমনি প্রচারের মাধ্যম হতে হবে বহুমুখী। একজন সচেতন মানুষের জন্য কেবল তথ্য পাওয়াই যথেষ্ট নয়, তথ্যের সঙ্গে তিনি বিশ্লেষণও দেখতে চাইবেন। খবরের পেছনের খবর জানতে চাইবেন। অন্যের ভাবনার সঙ্গে নিজের ভাবনাকে মিলিয়ে দেখবেন।  

বাংলাদেশে বর্তমানে ৪০টির মতো টিভি চ্যানেল থাকলেও এর অভিগম্যতা কয়েকটি বড় শহর ও আশপাশের এলাকায় সীমিত;  এফএম রেডিওর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বাংলাদেশে বর্তমানে সহস্রাধিক  দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হয়। কিন্তু এর মধ্যে ক’টি পাঠকের কাছে যায়? খুব বেশি হলে ৫০টি। বাকি পত্রিকা প্রকাশিত হয় সরকারি বিজ্ঞাপন পাওয়ার জন্য। সব সরকারের আমলেই ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা নানা রকম প্রভাব খাটিয়ে পত্রিকার ডিক্লারেশন নেন। কিন্তু তারা একটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ক্ষেত্রে যেসব শর্ত আছে তার কোনোটি পূরণ করেন না। অনেক দৈনিক পত্রিকার নিজস্ব অফিসই নেই। পেশাদার সাংবাদিক নেই।

বাংলাদেশের মতো বিকাশমান সমাজে সংবাদপত্রগুলো শুধু সংবাদই পরিবেশন করে না; দেশের ও বহির্বিশ্বের রাজনীতি, কূটনীতি, অর্থনীতি, কৃষি, পরিবেশসহ বিচিত্র বিষয়ে পাঠকের সঙ্গে মতের আদান-প্রদান করে। মানুষের মনের ও চিন্তার খোরাক জোগায়। পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন নিবন্ধ জনমত গঠনে বিশাল ভূমিকা রাখে। ইলেকট্রনিক মিডিয়া তাৎক্ষণিকতা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তাদের পক্ষে যা অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। তা ছাড়া অনুসন্ধিৎসু পাঠক দীর্ঘদিনের অভ্যাসের কারণে রাতে টেলিভিশনে যে খবর দেখে, সে খবরের বিস্তারিত কিংবা খবরের পেছনের খবর দেখতে চায় পত্রিকার পাতায়। এ কারণেই সংবাদপত্র সংবাদ পরিবেশনা ও বিশ্লেষণের ধরন পাল্টাচ্ছে। পাঠকের চাহিদার কথা ভেবে তারা বহুমাত্রিক উপস্থাপনার দিকে মনোনিবেশ করছে। দেশের প্রায় সংবাদপত্রই অনলাইন সংস্করণ প্রকাশ করছে। যোগ হয়েছে অডিও-ভিডিও মাধ্যমও। আবার ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলোও অনলাইন সংস্করণ করে নতুন পাঠক তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। এখন সব গণমাধ্যম মানে পূর্ণাঙ্গ মাধ্যম।

ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমলে রাজনৈতিক সংগ্রামের হাতিয়ার হিসেবেই সংবাদপত্র প্রকাশিত হতো। অনেক ক্ষেত্রে সরাসরি রাজনৈতিক দলের মুখপত্র হিসেবে এর আবির্ভাব ঘটেছে। ঔপনিবেশিক শাসন আমলে গণমাধ্যমের চরিত্র ছিল এক রকম, বিদেশি শাসক তাড়ানোই মূল উদ্দেশ্য। সামরিক শাসনামলেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সাংবাদিকদের শামিল হতে হয়েছে।   স্বৈরাচারের পতনের পর গণতান্ত্রিক শাসনে সংবাদপত্রের চরিত্র ভিন্ন হওয়ার কথা ছিল। অনেকটা হয়েছেও। সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ খবর পরিবেশনা ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার প্রতিই অধিক মনোনিবেশ করেছেন। কিন্তু বস্তুনিষ্ঠ ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার জন্য যে পরিবেশ থাকা দরকার তা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠান তিন দশক পরও নিশ্চিত হয়নি। বছর দুই আগে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবদেক রোজিনা ইসলাম তথ্য সংগ্রহের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাকে হেনস্তা করেন, সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা মন্ত্রণালয়ের আটকে রাখেন, তার বিরুদ্ধে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের সরকারি গোপনীয়তা আইনে মামলা দেয়া হয়। তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এর আগে-পরে অনেক সাংবাদিককে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে জেলে ঢোকানো হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন না থাকলেও সেই আইনের খড়্গ সাংবাদিকদের ওপর ঝুলছে।

গণমাধ্যম মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, সংকট ও সম্ভাবনার কথা বলে। বলে স্বপ্ন দেখা ও স্বপ্ন পূরণের কথা। আর বিশ্বায়নের যুগে গণমাধ্যমের সেই মানুষ কেবল দেশের সীমার ভেতরে থাকছে না, বিদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে; বিশেষ করে বাংলাভাষী মানুষের মধ্যে। বিদেশে থেকেও তারা দেশের খবর জানতে চান। এ ছাড়া বাংলাদেশের বাইরে যে বিপুলসংখ্যক বাংলাভাষী মানুষ আছে, তাদেরও বাংলাদেশ সম্পর্কে আগ্রহ আছে। ইন্টারনেট, ফেসবুক দূরকে কাছে এনেছে। গণমাধ্যম সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে পারে। বাংলাদেশের বাইরে ভারতেও ১০ কোটির বেশি বাংলা ভাষাভাষী মানুষ আছে। দুই দেশের মধ্যে  রাজনৈতিক দেয়াল ও কূটনৈতিক ঝগড়া যতই থাকুক না কেন, গণমাধ্যম বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের মধ্যে  সেতুবন্ধন তৈরি করতে পারে।

বাংলাদেশে গণমাধ্যম সংক্রান্ত যতগুলো আইন আছে, তার প্রায় সবক’টি সরকারের পক্ষে এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিপক্ষে। বিশেষ ক্ষমতা আইন, সরকারি গোপনীয়তা আইন, মানহানি আইন, আইসিটি আইন যথেচ্ছো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। আইনের বাইরেও নানা মহল সাংবাদিকদের নানাভাবে চাপে রাখতে সচেষ্ট থাকে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে (পরিবর্তিত নাম সাইবার নিরাপত্তা আইন) এমন সব ধারা আছে, যা মেনে চললে সাংবাদিকতা করাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। অনেক বিশ্লেষকের মতে, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে তথ্য অধিকার আইন জারি করে সাংবাদিকদের যেটুকু অধিকার দিয়েছিল, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে তা কেড়ে নিয়েছে। এ আইনের ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ কোনো সংস্থার কোনো ধরনের অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত, কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ।’

সাইবার নিরাপত্তা আইনে এটি হুবহু আছে। পার্থক্য হলো কিছু অজামিনযোগ্য ধারাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। সরকার গোপনীয় তথ্য বলতে কী বোঝাচ্ছে? রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরি করতে পারে- এমন তথ্য গোপনীয় হতে পারে। এর বাইরে সব তথ্য জানার অধিকার জনগণের আছে। সাংবাদিক যদি জনস্বার্থে সেসব তথ্য প্রকাশ করেন তা অপরাধ হবে কেন? সাংবাদিকরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন না কিংবা অন্য রাষ্ট্রের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তিও করছেন না। তাহলে সরকারি তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা কেন? আইনটি জারি করার সময়ই গণমাধ্যমের অংশীজনেরা এর প্রতিবাদ করেছিলেন। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, আইনটি করা হয়েছে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে যারা অপরাধ করছেন, অন্যের মর্যাদাহানি করছেন, তাদের জন্য। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যথেচ্ছ আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারও বিরুদ্ধে মামলা হলেই তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ কারণে অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থন কিংবা আইনি লড়াইও কঠিন হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা সম্ভব নয়। তাহলে কি ক্ষমতাসীনদের এটাই অভিপ্রায় যে তারা যে তথ্য ছাপার অনুমতি দেবেন, সেটাই সাংবাদিকরা পরিবেশন করবেন? তারা অনুসন্ধান করে কোনো তথ্য সরকারি অফিস থেকে নিতে পারবেন না? তাহলে তো স্বাস্থ্য পূর্ত মন্ত্রণালয়ের বালিশ কাণ্ড, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পর্দাকাণ্ড, কোভিড পরীক্ষার নামে ভুয়া সনদ কিংবা চাকরির নামে উৎকোচকাণ্ড প্রকাশিত হতো না। তস্করেরা বহাল তবিয়াতে থাকতেন। কমবেশি থাকছেনও।


অতএব, বাংলাদেশের সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকে একটি কথাই মনে সব সময় রাখতে হয়। ‘সত্য যে কঠিন কঠিনেরে আমি ভালোবাসিলাম।’ 

লেখক: প্রাবন্ধিক, কবি, লেখক ও সাংবাদিক