মানুষের চেতনা বাড়াতে সংবাদ মাধ্যমের দায়

মনজুরুল আহসান বুলবুল

১.

একটি উদ্ধৃতি দিয়েই শুরু করি। চীনা সমর কৗশলবিদ সান ঝু তাঁর যুদ্ধ কৌশল তুলে ধরে বলেছিলেন ’ যখন তুমি দুর্বল তখন তখন শক্তির ভাব ধরবে. যখন তুমি শক্তিশালী তখন তখন দেখাবে দুর্বলতা। তোমার পরিকল্পনা থাকবে অন্ধকারে ঢাকা, যখন আক্রমণ করবে তা’ যেন বজ্রপাতের মত দেখায়’। সংবাদ মাধ্যমের চরিত্রর মধ্যেও এই রকম দর্শনের দেখা পাই। একটি গণমাধ্যম যখন নানা কারণে দুর্বল তখন সেটিকে শক্ত চেহারা দেখিয়েই বেঁচে থাকতে হয়, আবার যখন ভালো সময় আসে তখন উগ্রতা দেখানো চলেনা, কিন্তু গণমাধ্যম হিসেবে দায়িত্বটি পালন করতে হয় খুবই স্পষ্টভাবে।

সংবাদ মাধ্যমের দায়িত্বটি কি তা’ নিয়ে আরেকটি প্রবন্ধ তৈরি হতে পারে। কিন্তু আজকের প্রস্তাবনা হচ্ছে ’ সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিতে বর্তমান গণমাধ্যমের ভূমিকা’। প্রস্তাবনা থেকেই বুঝা যাচ্ছে গণমাধ্যমের একটি বড় দায়িত্ব হচ্ছে সামাজিক সচেতনতা তৈরি। আলোচনা করতে হবে এই দায়িত্ব পালনে ’বর্তমানে’ গণমাধ্যমের ভূমিকা কি ? এখানে ’বর্তমান’ বলে আলোচনার সময়কালকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। চেষ্টা করছি এই সীমা রেখার মধ্যেই থাকার জন্য ।

২.

গণমাধ্যম নিয়ে গবেষণা করের এমন পন্ডিতরা সূচনা লগ্নেই এর একাডেমিক দায়িত্ব নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। এগুলো হচ্ছে, ক: মানুষকে তথ্য জানানো খ. মানুষকে শিক্ষিত করে তোলা গ. মানুষকে বিনোদন দেয়া। পরবর্তীকালে এর সাথে যুক্ত হয়েছে মানুষকে উদ্দীপ্ত বা উজ্জীবিত করার বিষয়টিও। এই চারটি দায়িত্বকে যদি এক সাথে করি তা’হলেদেখা যাবে,গোটা বিষয়টি হচ্ছে মানুষ বা সমাজকে সচেতন করাই সংবাদ মাধ্যমের মূল লক্ষ্য।

উপমহাদেশের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখবো, গণমাধ্যমের যাত্রা শুরু হয়েছিল জন আকাঙ্ক্ষার কারণে। কি সেই আকাংখা : মূলত: তথ্য জানার, সেই তথ্য জেনে নিজেকে শিক্ষিত ও সচেতন করার আকাংখা। এই জন আকাংখা যে গণমাধ্যম যত সফলভাবে পূরণ করতে পেরেছে সেই গণমাধ্যম ততই জনঘনিষ্ঠ হয়েছে, জন মানুষের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে, টিকে থাকতে না পারলেও ইতিহাসের অংশ হয়েছে।

শিরোনামে আমরা যে ’বর্তমানে’র কথা বলেছি সেটি সময়কাল হিসেবে ’এখন’ হলেও প্রতিটি সফল গণমাধ্যমের জীবনে অনেক অনেক ’বর্তমান’ ছিল। গণমাধ্যম সব সময়ই ’বর্তমানে’র চিত্র আঁকে। সেই বর্তমানের চিত্রই কখনও কখনও ইতিহাসের অংশ হয়।

যেমন ভাষা আন্দোলন, ১৯৫২ সন। সেটি এখন আমাদের কাছে অতীত। কিন্ত সে সময়কালে যে সংবাদপত্র প্রকাশিত হতো তাদের কাছে সেটি ছিল ’বর্তমান’। আজ যখন গণমাধ্যম গবেষকরা ভাষা আন্দোলন নিয়ে গবেষণা করেন তারা কিন্তু এটি দেখতে চান, সেই ’বর্তমানে’ তখনকার গণমাধ্যমগুলো যথাযথভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পেরেছিলো কিনা ; বা তারা তখন কি ভূমিকা রেখেছিলো।

আমাদের সাংবাদিকতার কিংবদন্তী পুরুষ তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া এই রকম এক ’বর্তমান’ কেন্দ্রিক সাংবাদিকতার কথা বলেছিলেন। তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের ৬ দফা নিয়ে উত্তাল গোটা পাকিস্তান, উত্তপ্ত পূর্ববঙ্গ। মানিক মিয়ার ইত্তেফাক ছয় দফার সাথে একাত্ম শুধুমাত্র নয়, ছয় দফার সমর্থনে পাকিস্তানের মানুষের জন সচেতনতা বাড়াতে রাজনীতির পাশে সক্রিয়ভাবে মাঠে। সে সময় মানিক মিয়া পাকিস্তান সফরে গেলে পশ্চিম পাকিস্তানের সাংবাদিক জেড আই সুলেরী বলেছিলেন: মানিক মিয়া, পূর্ব পাকিস্তানে আপনারা এখন সাংবাদিকতার চাইতে রাজনীতিটাই বেশি করছেন। জবাবে মানিক মিয়া বলছিলেন: মি. সুলেরী, আপনি নিশ্চয়ই পূর্ববঙ্গের পরিস্থিতি জানেন, এটাই এখন পূর্ববঙ্গের ’বর্তমান’, আমাদের সাংবাদিকতা সেই বর্তমানকে নিয়েই। আপনি আপনার ’বর্তমান’ নিয়ে সংবাদিকতা করুন, আমরা করি আমাদের’বর্তমান’।

কাজেই সাংবাদিকতায় বা গণমাধ্যমের কাছে’বর্তমান’ সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ ।

৩.

গণমাধ্যম তার ভূমিকা রাখতে পারছে কিনা তা’ বিবেচনার আগে ’বর্তমান’ সামাজিক বাস্তবতায় গণমাধ্যমের অবস্থান কি সেই চিত্রটি একটু দেখা যাক। প্রথমে বৈশি^ক পরিস্থিতি। ২০১৭ সালে রয়টার্স ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব জার্নালিজম এবং অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে ইউরোপজুড়ে সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে এক জরিপ চালানো হয়। নিক নিউম্যান এবং রিচার্ড ফ্লেচারের তত্বাবধানে পরিচালিত এই জরিপ চলে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত বলে পরিচালিত আটটি দেশে। এগুলো হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, স্পেন, জার্মানি, ডেনমার্ক, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স ও গ্রিস। আটটি দেশের হাজার হাজার মানুষের কাছ থেকে খোলা প্রশ্নের জবাব বিশ্লেষণ করে যে ফলাফল পাওয়া গেছে তার ভিত্তিতেই এই রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। এই রিপোর্টের শিরোনামটিই হচ্ছে ‘বায়াস, বুলশিট, লাই’।এই জরিপের মোদ্দা কথা হচ্ছে গণমাধ্যমের উপর বেশির ভাগ মানুষের আস্থা নেই । তাদের সহজ উত্তর; গণমাধ্যমগুলো এখন হয় বায়াস, অথবা বুলশিট লিখে বা মিথ্যা লিখে। অভিধান বলছে, ‘বায়াস’ মানে হচ্ছে পক্ষপাত, একপেশে। ‘বুলশিট’ অর্থ বাজে কথা, আবোলতাবোল কথাবার্তা। আর ‘লাই’ মানে মিথ্যা, অসত্য।জরিপের ফলাফল বলছে, সংবাদমাধ্যমের ওপর যাঁদের আস্থা নেই, তাঁদের ৬৭ শতাংশ মনে করেন অধিকাংশ সংবাদমাধ্যম একপেশে, নিজেদের অ্যাজেন্ডা নিয়ে সাংবাদিকতা করে। সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার চেয়ে ক্ষমতাশালী বা প্রভাবশালী মহলের [ শুধু ক্ষমতাসীন নয় ] রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থকেই রক্ষা করে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পাঠক, দর্শক-শ্রোতাদের অভিযোগ, তাঁদের দেশে প্রধান সংবাদমাধ্যমগুলো পছন্দসই পক্ষের হয়ে কাজ করে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা মনে করেন, টেলিভিশনে যা দেখানো হয়, তা’ থেকে সত্যের কাছাকাছি কিছুটা ধারণা নেওয়া যায়, কিন্তু দ্রুত খবর প্রচার করতে গিয়ে তারাও প্রকৃত তথ্যকে পাশ কাটিয়ে যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারাও বিশেষ অ্যাজেন্ডা নিয়ে কাজ করে। তবে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ডেনমার্কে সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে বেশি।জরিপে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতার চিত্র বেশ করুণ। এদের বিশ্বাসযোগ্যতার পক্ষে মাত্র ২৪ ভাগের অবস্থান। জরিপে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সত্যের চেয়ে কল্পনাকেই গুরুত্ব দেয় বেশি। অসত্য তথ্য, নিজস্ব অ্যাজেন্ডা, প্রবল নিজস্ব মতামতনির্ভরতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তথ্যদূষণের জন্যও দায়ী। তবে মূলধারার সংবাদমাধ্যমের অতিমাত্রায় পক্ষপাত ও অ্যাজেন্ডা-নির্ভর সাংবাদিকতা বিপুলসংখ্যক মানুষকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল করে তুলেছে।

এই ধরনের একটি জরিপ এই মুহূর্তে বাংলাদেশে করা হলে ফলাফল কী হবে, তা ধারণা করা যায়।

৪.

বাংলাদেশে মোটা দাগে গণমাধ্যমের সামগ্রিক চিত্র নিয়ে তেমন কোন গবেষণা নেই। দীর্ঘসময়ের সাংবাদিকতা পেশায় আছি বলে ভেতর ও বাইরের আদ্যোপান্ত দেখার অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের গণমাধ্যমের কতগুলো চ্যালেঞ্জের চিত্র তুলে ধলতে পারি। এগুলো হচ্ছে :

ক. গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সংকট: একটি সমাজে মত প্রকাশের স্বাধীনতাটি যদি নিশ্চিত না থাকে, সমাজটি যদি চিন্তা ও বিবেেেকর জন্য খোলা প্রান্তর অবারিত করতে না পারে, সেই সমাজে স্বাধীন বা মুক্তগণমাধ্যম বিকশিত হতে পারে না।এই ’স্বাধীন’ শব্দটি খুবজটিল। স্বাধীনতা মানে কতটা স্বাধীনতা? স্বাধীনতা মানে কার স্বাধীনতা - যিনি লিখছেন তার স্বাধীনতা, নাকি যিনি টাকা বিনিয়োগ করছেন তার স্বাধীনতা? এই প্রশ্নের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত স্বাধীনতার চেহারাটি স্পষ্ট হবে না ।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ এবং আরও কয়েকঅনুচ্ছেদে চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা, বাক্ স্বাধীনতা ওসংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। তবে এই স্বাধীনতা ভোগকরা যাবে কতিপয় আইনী শর্তসাপেক্ষে। অর্থাৎ কোন স্বাধীনতাইনিরংকুশ নয়, এমন কি মত প্রকাশের স্বাধীনতাও।

খ. দায়িত্বশীলতা ও নৈতিকতার সংকট : মাপকাঠি কি?সাংবাদিকতা পেশাটিই দায়িত্বশীল পেশা। প্রকৃত পেশাদার সাংবাদিকতা কখনও ’অ-দায়িত্বশীল’ হতে পারেনা। যারা দায়িত্বহীন ভাবে সাংবাদিকতা পেশাকে ব্যবহার করেন, তারা আর যাই হোক ’সাংবাদিক’ নন। দেশ পরিচালনায় একজন স্বেচ্ছাচারী শাসককে স্বৈরাচার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়, তেমনি দায়িত্বজ্ঞানহীন একজন সম্পাদক বা সাংবাদিকও সৈ¦রাচারী হয়ে ওঠতে পারেন। তাদের জন্য তাদেরনিয়ন্ত্রিত গোটা গণমাধ্যমটিও প্রকৃত গণমাধ্যমের চরিত্র হারাতে পারে। এর পাশাপাশি সংবাদ মাধ্যমতো বটেই, সকল গণমাধ্যমকে সমাজে প্রচলিত নৈতিকতা মানতে হয়। অনগ্রসর সমাজের মানুষকে শিক্ষিত করার মধ্য দিয়ে গণমাধ্যম সমাজের সকল কূপমন্ডুকতা দূর করবে এটাই স্বাভাবিক। তবে সমাজে প্রচলিত নৈতিকতার সাথে তাকে সহাবস্থানকরতে হবে সতর্কতার সাথে।

গ. ভয়ের সমাজ : জয়ের শাসন:ভয়ের শাসন, জয়ের শাসনের কথা বহু আগে বলেছেন কবিগুরু।যখন একটি সমাজে ভয় ছড়িয়ে দেয়া হয় তা’ থেকে কি সাংবািদক, কি গণমাধ্যম কেউ মুক্ত থাকতে পারে না। মনের মধ্যে যে ভয় বাসা বাঁধে এবং এই ভয়কে মাথায় রেখে যে পরিবেশ তৈরি হয় সেটিকে মাথায় রেখে যখন কাজ করতে হয়, তাকেই গণমাধ্যমের ভাষায় বলা হয় ‘সেলফ সেন্সরশিপ’। বাংলাদেশে এই সেলফ সেন্সর শীপের ¯্রষ্টা পরাধীনতাকালের বৈরী সংস্কৃতি ও দীর্ঘ সামরিক শাসন। অনানুষ্ঠানকি সামরিক শাসন, উপরে সিভিল পোশাক ভেতরে উর্দিধারী শাসকদের শাসন। আমরা এখনও এমন একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে পারিনি যে রাজনীতি এগুলো একসঙ্গে ঝেড়ে ফেেেল দিতে পারে। এই ভয় আসে বহুমুখী উৎস থেকে।’ভয়’ কি শুধু সরকার দেখায় ? সমাজে কি আর কোন শক্তি নেই যারা ভয় ছড়িয়ে দিতে পারে? নিশ্চয়ই আছে। এদের বলা হয় ’নন স্টেট একটর’। এরা কি সাংবাদিককে হত্যা করছে, হুমকি দিচ্ছে? এটাও একটা সূচক। দেশে ধর্মীয় জঙ্গি গোষ্ঠী যখন সাংবাদিকদের নামের তালিকা তৈরি করে হত্যার হুমকি দেয়, সেটিও বড় ধরনের ভয় ছড়িয়ে দেয়া। কোন এক গোষ্ঠী যখন বলে, কোনো নারী সাংবাদিক তাদেরঅনুষ্ঠান কভার করতে পারবে না, এটাও এক ধরনের হুমকি। নিজের মত প্রকাশ বা প্রচার করে না বলে একটি গণমাধ্যমকে বয়কট করার হুমকিও গণমাধ্যম বা সাংবাদিককে ভয় দেখানো, চাপ সৃষ্টির কৌশল। বøগারকে মেরে ফেলা হচ্ছে তার মতকে পছন্দ হচ্ছে না বলে, এটাও চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার ওপর আঘাত। সম্পাদকের বক্তব্য মন:পুত হচ্ছে না বলে সাংবাদিক সন্মেলন করে তাকে গালি দেয়া হচ্ছে - এটি একজন সম্পাদকে ধমক দেয়ার সবচাইতে অশোভন চেষ্টা। তথ্যকে তথ্য দিয়েই মোকাবেলা করতে হয়, ভয় বা শক্তি দেখিয়ে নয়।

ঘ.নিরাপত্তার সংকট, বিচারহীনতার সংস্কৃতি : দায় কার ?আন্তর্জাতিকভাবে একটি দেশের গণমাধ্যমের অবস্থা কিছু সূচক দিয়ে মাপা হয়। প্রথম সূচক হলো- সরকার কি আইন দ্বারা গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করছে? এমন কোনো নীতি কি গণমাধ্যমের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে যা’ স্বাধীন সাংবাদিকতার পথ সংকুিচত করছে? অন্যায়ভাবে কোনো সাংবাদিককে আটক করা করা হচ্ছে ? সাংবাদিক হত্যা বা নির্যাতন হচ্ছে - তার কোন বিচার হচ্ছে না? এ ই সকল প্রশ্নেব জবাবে যে চিত্র মিলবে তা’ একটি বড় সংকটের চেহারাই তুলে ধরবে।

ঙ. আইনী সংকট : আইন আছে, আইন নাই: বাংলাদেশের গণমাধ্যমে আইনী সংকটের তিনটি অংশ। একটি আইন নাথাকার সংকট, দ্বিতীয় সংকট পুরনো আইন চালু রাখা, তৃতীয়টিনতুন আইনের অপপ্রয়োগ। দেশে এখনও সম্প্রচার আইন হয়নি, তা’হলে সম্প্রচার মাধ্যমগুলো লাইসেন্স পেলো কি করে? এসব চলছে কি করে ? সম্প্রচার মাধ্যমে যারাকাজ করেন তাদের পেশাগত পরিচয় বা চাকরী কোন্ আইন দিয়ে সুরক্ষিত ? একটা জোড়া তালির জবাব পাওয়া যাবে হয়তো কিন্তু বাস্তবতা হলো আইন নেই অথচ সবচাইতে প্রভাবশালী গণমাধ্যম চলছে ইচ্ছে বা মর্জির উপর। এই হলো আইন না থাকার সংকট।

আইনের বই ঘেঁটে দেখুন কত পুরনো আইন বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে বা মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে চোখ শাসায়। একটা উদাহরণ দেই, পোস্ট অফিস সংক্রান্ত আইনে বলা হচ্ছে : গোয়েন্দা বিভাগ ডাকঘরে আপনার পোষ্ট করা যে কোন চিঠি খুলে দেখতে পারেন। আইনের লোকেরা কবে বুঝবেন, যাদের চিঠিতে সন্দেহজনক বিষয় থাকতে পারে তারা আজ আর কেউ পোস্ট অফিসে চিঠি পোষ্ট করেন না। তা’হলে এই আদ্যিকালের পুরনো আইনটি টিকিয়ে রাখার প্রয়োজন কি? অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টতো এখনও বহাল।

আসা যাক নতুন আইন প্রসঙ্গে। নিশ্চয়ই যুগের প্রয়োজনে নতুন আইন করতে হবে, কেউই ওই বাস্তবতা অস¦ীকার করেনা। সময়ের প্রয়োজনেই আইসিটি আইন করা হলো। কিন্ত গণমাধ্যমের জন্য চোখ রাঙ্গালো ৫৭ ধারা। যখন আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা তৈরি হলো- বলা হলো- অপব্যবহার হবে না। কিন্তু বা¯তব চিত্র ছিল একেবারেই ভিন্ন। এমন কোনো আইন করা যাবে না যা সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতাকে সংকুচতি করে; সংবিধানের মূল চেতনার বিরুদ্ধে যায়। ৫৭ ধারা ছিল এমন সাংঘর্ষিক। আসলো ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন। বলা হলো, ৫৭ ধারা থাকবে না। কিন্তু ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে ৫৭ ধারা ছড়িয়ে দেয়া হলো নানা ধারা, উপধারায়। আমরা সংসদীয় কমিটি পর্যন্ত কথা বললাম, কেউ শুনলেন না আমাদের কথা। বলা হলো, এই আইনের অপপ্রয়োগ হবে না; কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এই আইন সংসদে পাস করার সময় মন্ত্রী বললেন, এই আইন অনুসরন করার জন্য সারা পৃথিবী নাকি মুখিয়ে আছে। পৃথিবীর কোন্ কোন্ দেশ এই আইন অনুসরন করেছে জানা নেই, তবে এই আইন প্রণয়নের পর বিশ্বমুক্ত গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান নেমে গেছে তিন ধাপ। আইসিটি আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হয়ে সবশেষ যে সাইবার সিকিউরিটি আইনে বাংলাদেশ পা রেখেছে সেখানেও সব সমস্যার সমাধান হলো না, বিতর্ক পিছু ছাড়লো না ।

চ. জবাবদিহিতার সংকট: কার জবাবদিহিতা, কার কাছে ?আইন, দায়িত্বশীলতা, নৈতিকতার পর পরই আসে গণমাধ্যমের জবাবদিহিতার প্রসংগটি। গণমাধ্যম বা সাংবাদিক কার প্রতি দায়বদ্ধ থাকবে, কার কাছে জবাবদিহি করবে ? এই নিয়ে ধোঁয়াশা। সরকার চায় জবাবদিহিতা থাকুক তার কাছে, মালিক চায় তার কাছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে সংবাদ মাধ্যমের দায়বদ্ধতা সমাজের প্রতি। সমাজের পাঠক বা র্দশকই তো তার ভোক্তা। তারাই মূল্যায়ন করবেন। ভালো লাগলে গ্রহণ করবেন, না হলে প্রত্যাখ্যান করবেন। সেই গণমাধ্যম টিকে থাকবে না, যেটি মানুষের আস্থা র্অজন করতে পারবে না। আস্থা র্অজন করা সম্ভব হবে যদি সংবাদ মাধ্যমটি নৈতিকতার দিক থেকে পরিশীলিত হয়, পেশাদারিত্বের দিক থেকে পরিশীলিত হয়, সত্য প্রকাশে সাহসী- আপসহীন হয়। আবার রাষ্ট্রের অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতির গণমাধ্যমের দায়বোধ থাকা জরূরী। মনে রাখতে হবে, কোন স্বাধীনতাই নিরঙ্কুশ নয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা আর বিদ্বেষ ছড়ানো সমার্থক নয়।কোন তথ্য যাচাই না করে তার উপর ভিত্তি করে কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা মত প্রকাশের স¦াধীনতা নয়। সমাজে ন্যায্যতার পক্ষে গণমাধ্যমকে থাকতে হবে। তবে সমাজকেও শিক্ষিত করে তোলা গণমাধ্যমের দায়িত্ব। শিক্ষিত সমাজই বুঝবে গণমাধ্যমের কাছে কতটাপ্রত্যাশা করা সঙ্গত। তাই বলা হয়, শিক্ষিত সমাজে সাংবাদিকরা বেশিনিরাপদ।

ছ. সততার সংকট : ভালো সাংবাদিকতাই রক্ষা কবচ ?

সততা ছাড়া কোন গণমাধ্যম বহু মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারে না। বৈশ্বিকভাবেই এখন সংবাদ মাধ্যমের বড় সংকট ’ফেক নিউজ’। ফেক নিউজ বা অসত্য সংবাদ প্রকাশের প্রবণতা আমেরিকা থেকে শুরু হয়েছে। ভারতীয় উপমহাদশে শুরু হয়েছিল ’পেইড নিউজ’ দিয়ে। ভারতে নির্বাচনের সময় বড় অঙ্কের টাকা দিয়ে মিডিয়া কিনে ফেলা হতো। প্রশ্ন হলো- সাংবাদিকতা কি টিকে থাকতে পারবে, নাকি ফেক নিউজের ¯্রােতে ডুবে যাবে। যখন পেইড নিউজ বিতর্কের শুরু হয়, তখন বলা হয়েছিল পেইড রিপোর্টার, পেইড বার্তা সম্পাদক এবং পেইড সম্পাদক সংবাদ মাধ্যমকে ডোবাচ্ছে। কিন্তু যখন খোদ মালিক ’পেইড’ হলেন তখন আবার ঘুরে দাঁড়ালেন প্রকৃত পেশাদার সাংবাদিকরাই। এই সংকট মোকাবেলায় একমাত্র সমাধান, পেশাদারী সাংবাদিকতা।সাংবাদিকতার মৌলিক শর্ত গুলোই সাংবাদিকতাকে রক্ষা করতে পারে। একথায় আস্থা রাখতেই হবে যে, ভালো সাংবাদিকতাই ভালোসাংবাদিকতার রক্ষা কবচ।

জ. মুনাফা ও পেশাদারিত্বের সংকট : যে গল্পের শেষ নেই : গণমাধ্যমে এই সংকটটি শুরুতে এতটা ছিল না। কিন্তু মুক্ত বাণিজ্যেও পৃথিবী এখন মালিকের মুনাফালোভ ও সাংবাদিকেদের পেশাদারিত্বেরসংকটকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সংখ্যার বিচারে অবশ্যইবলতে হবে, বাংলাদেেশ গণমাধ্যমের পরিসর বিশাল। কিন্তু একটা রাষ্ট্রে কতবেশি সংবাদমাধ্যম আছে, সেটা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার একমাত্রসূচক নয়। সূচক হচ্ছে, যে সংবাদমাধ্যম প্রকাশিত বা সম্প্রচারতিহচ্ছে সেগেুলো পেশাদারিত্বের সাথে পরিচালিত হচ্ছে কিনা এবং টিকে থাকতে পারছে কি না।দেশে সংবাদ মাধ্যমের সংখ্যা বাড়ছে ’ বানের লাহান’। সংবাদ মাধ্যমে মালিক হওয়া এদেশে এখন ”স্ট্যাটাস সিম্বল” বা ’সিম্বল অব পাওয়ার’।মালিকরা নিজেরাই সম্পাদক হয়ে যাচ্ছেন। সম্পাদকরাও সাংবাদিকদেরঅভিভাবক হওয়ার চাইতে মালিকদের আজ্ঞাবহ হতেই বেশি ¯া^চ্ছ্যন্দবোধকরছেন। কম বেতনে, বিনা বেতনে অপেশাদারদের সাংবাদিক হিসেবেনিয়োগ করা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যমের পেশাদারি উৎকর্ষের বিষয়টি চিন্তা করাহচ্ছে না। সংবাদমাধ্যম ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা দল বিশেষের ক্ষমতা ওসুিবধার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে পেশাদার সাংবাদিকতারজায়গাটা সংকুিচত হয়ে গেছে। শুধু আর্থিক মুনাফা নয়,মালিকদের এজেন্ডা থাকে নানাভাবে লাভবান হওয়ার। এই গ্যাড়াকলেপেশাদার সাংবাদিকদের চিড়েচ্যাপ্টা দশা।এ অবস্থায় পেশাগত জীবনে সাংবাদিকদের ত্রিমুখী সংকটে পড়তে হচ্ছে ১. আর্থিক সংকট২. পরিচয় সংকট ৩. নিরাপত্তার সংকট।

ঝ. নতুন ও সনাতনীদের সংকট : দ্বন্দ¦ নয় :অস্বীকার করার যোগাড় নেই, প্রযুক্তি আজকের সংবাদ মাধ্যমের সামনেউন্মুক্ত করেছে অšতহীন আকাশ। এই অবারিত সুযোগ খুলে দিয়েছেপ্রতিযোগিতার বিশাল প্রান্তর। সোস্যাল মিডিয়া খুবই গতিশীল।কিন্তু স্পষ্ট করেই বলতে চাই, স্যোশাল মিডিয়া হচ্ছে একটিকমিউনিকিশেন টুল মাত্র, সেখানে সম্পাদনা প্রতিষ্ঠান নেই,পেশাদারিত্ব নেই। তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার যে শক্তি সোশ্যাল মিডিয়ার আছেতার সাথে যদি পেশাদারিত্বের মেল বন্ধন না করা যায় তা’হলে পাঠক,দর্শক, ব্যবহারকারী অনেক বেশি হলেও আস্থার সংকট সেখানে থাকবেই।

ঞ. . সাংবাদিকদের সংগঠন : অপেশাদাররা দূর হোক :

কি আর্থিক সুবিধা প্রাপ্তি, কি মর্যাদার লড়াইয়ে জয়ী হওয়া, কিনিরাপত্তা নিশ্চিত করা - বাংলাদেশের সাংবাকিদকের এই সকল অর্জনএসেছে সাংবাদিক সংগঠনের হাত ধরেই। কারণ পেশাদারসাংবাদিকরাই এ সকল সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তারা ভেতর থেকেসংকটের চিত্রটি বুঝতেন। সে কারণে মালিক, সরকার বা যে কোন মহলেরসঙ্গে আলোচনায় আপসহীন অবস্থান নিতে পারতেন। কিন্তু এখনসেখানে হতাশার চিত্র দেখি। যিনি জীবনে কোনদিন পেশাদারসাংবাদিকতা করেননি, ওয়েজবোর্ডের সুপারিশে কিভাবে বেতননির্ধারিত হয় তা’ জানেন না, সেই চক্রের কাছে কোন কোনসাংবাদিক সংগঠন জিম্মি। পেশাদার সাংবাদিকদের নেতৃত্বই কেবল সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোকে পেশার কল্যানে নিয়োজিত করতে পারে।সাংবাদিকতার সকল সংকটে সাংবাদিকদের সংগঠনগুলোর ভূমিকা আজওগুরুত্বপূর্ণ। আগে সংগঠন ছিল কম, নেতারা ছিলেন তুখোড়সাংবাদিক, কর্মসূচীতে ধার ছিল বেশি কিন্তু এখন সংগঠন অনেকবেশি, অনেক নেতাই কার্ডধারী, তাই অনেক সংগঠনই ভোঁতা, বক্তৃতা সর্বস্ব। বহু সংগঠনে নেতারা এখন পদ, প্লট, প্রণোদনার কাছেনত। অনেকে পেশাদার সাংবাদিকতার চাইতে মলিকের বা ক্ষমতাধরদেরএজেন্ডার পাহাড়াদার হিসেবই বেশি ব্যস্ত। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সাংবাদিকদের নানা উচ্চাভিলাষের জন্য পেশা ও রাজনৈতিক বিশ্বাসের সংমিশ্রণ, বিশেষ ক্ষমতাশালী মহলের মুখপত্রে পরিণত হওয়া ইত্যাকার নানা বিষয়।

৫.

গণমাধ্যম বা সাংবাদিকতার এই চিত্র তুলে ধরা হলো এই কারণে যে বর্তমানে গণমাধ্যম বা সাংবাদিকতা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কি ধরনের বাস্তবতার মুখোমুখি হচ্ছেন তা’ যাতে বুঝা যায়। এ বিষয়টি বুঝা গেলে বর্তমানেরগণমাধ্যম সামাজিক সচেতনতা তৈরির ক্ষেত্রে কেন সফল হচ্ছেন না বা কতট্ সফল সেটি বুঝাও সহজ হবে। সংবাদমাধ্যমের এই চ্যালেঞ্জগুলো নতুন নয়, কালের বিবর্তনে শুধু চেহারা বদল হয়েছে। এই উপমহাদেশে সতেরো শতকের শেষ দিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার থেকে সংবাদমাধ্যম হয়ে উঠেছিল সমাজের শক্তি, ‘ওয়াচডগ’।এই বঙ্গে কাঙাল হরিনাথের সাংবাদিকতাকে তার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরা যায়।

গণমাধ্যমের সংকট মোকাবিলায় লড়াই একা একা করা যায় না, প্রয়োজন হয় জোটবদ্ধ শক্তির। প্রয়োজন হয় নাগরিক সমাজের সহায়তার, গড়ে তুলতে হয় সামাজিক আন্দোলনও। যেমন বাংলাদেশে তথ্য অধিকার আইনটি অর্জন করা গিয়েছিল সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের যৌথ উদ্যোগেই।

কুমিরভর্তি পুকুরে নিজেকে বাঁচিয়ে সাঁতার কাটার দক্ষতা অর্জনই গণমাধ্যমের বেঁচে থাকার উপায়। আমাদের বর্তমান সমাজে কুমির কখনো সরকার, কখনো রাজনৈতিক দল, কখনো ভূমিদস্যু, কখন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সেন্সর আরোপকারী কর্তৃপক্ষ, কখনো করপোরেট স্বার্থবাহী গোষ্ঠী, কখনো বিজ্ঞাপনদাতা, এমনকি কখনো মালিক নিজেই। এই কুমিরদের সাথে লড়াই করেই গণমাধ্যমকে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির দায়িত্ব পালন করতে হয়।

সাংবাদিকতা আগাগোড়াই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষের পেশা। এ জন্যই এই পেশার দায়িত্বশীলতা আরোপিত হয় না। একজন সাংবাদিক তাঁর মেধা ও মননশীলতা দিয়েই তাঁর দায়িত্বশীলতা নির্ধারণ করেন। এর সঙ্গে তাঁর জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য যুক্ত হয় সমাজ। কারণ একজন সাংবাদিক যখন তথ্য সংগ্রহ করেন বা কোনো মতামত দিতে চান, তার কোনোটাই তাঁর ব্যক্তিগত সংকীর্ণ স্বার্থ থেকে করেন না; করেন সমাজ ও মানুষের বৃহত্তর স্বার্থেই। গণমাধ্যম যে সমাজে কাজ করে সেই সমাজ কতটা শিক্ষিত, কতটা অগ্রসর, কতটা উদার, সমাজের আত্মীকরনের ক্ষমতা কতটা দৃঢ় এ সবই গণমাধ্যমের দায়িত্ব পালনের ভিত তৈরি করে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হিসেব ছাড়াও একটি সমাজে প্রবহমান সংস্কৃতি, রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃত্ব যদি অগ্রসর চিন্তা না করে বা ভিন্নমত ধারণ করার মতো উদারতা না দেখায়, তাহলে সেখানেই গণমাধ্যমের দায়িত্ব পালন বিঘিœত হয়, তৈরি হয় নানামুখী সংকট। আমাদের গণমাধ্যমও সেই সংকটের বাইরে নয়।

৬.

এ কথা ঠিক সামাজিক সচেনতা সৃষ্টি বা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমের ভূমিকার গুরুত্ব অপরিসীম।

আজ হতে শতবর্ষেরও বেশি সময় আগে কাঙাল হরিনাথ (হরিনাথ মজুমদার) লিখেছিলেন : দেশ নষ্ট কপটে, প্রজা মরে চপটে, কি করিবে রিপোর্টে। যখন একটি রাষ্ট্র পরিচালিত হয় কপটদের দ্বারা, প্রজার উপর চপেটাঘাত নিত্যদিনের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, সেই রকম একটি সমাজে শুধু রিপোর্ট [ গণমাধ্যম/সাংবাদিক] একা আর ভূমিকা রাখতে পাওে না।

গণমাধ্যমের দায়িত্বটি হচ্ছে অতীতের আলোয় ’বর্তমান’কে বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের পথরেখা তৈরি করা। আশার কথা আমাদের গণমাধ্যম তাদের উজ্জল অতীতকে ধারণ করে এখনও সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে দায়িত্ব পালন করে চলেছে। তবে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমের ভূমিকাটি মাপতে হলে কোন্ সমাজ বাস্তবতায়, কোন্ ’বর্তমানের’ মধ্যে তারা কাজ করছে সেটি মনে রাখা জরূরি।