অর্থনীতির কঠিন সময়ে গতানুগতিক বাজেট
নতুন সরকারের প্রথম বাজেট। অর্থমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়া অর্থমন্ত্রীরও প্রথম বাজেট।
‘সুখী, সমৃদ্ধ, উন্নত ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে অঙ্গীকার’ প্রতিপাদ্যে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য প্রায় ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেট ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
এক কথায় বলতে গেলে প্রস্তাবিত বাজেটটি চমকহীন। খুব বেশি চমকের দেখা মেলেনি। বড় কোনোও পরিবর্তনও নেই। শুধু সংখ্যাগত পরিবর্তন চোখে পড়েছে। উদ্ভাবনী শক্তিরও প্রমাণ পাওয়া যায়নি বাজেটে।
বাজেটের ভালো দিকের কথা বলেতে গেলে প্রথমেই সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির কথা বলতে হবে। এ খাতে ১০ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। এতে গরিব মানুষের কিছুটা স্বস্তি মিলবে কিনা, সেটি পরে বোঝা যাবে। তবে মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় ভাতার পরিমাণ খুবই কম। এটি বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় রাখা যেত। সুবিধাভোগী মানুষের অর্ন্তভুক্তি বাড়ানোর পাশাপাশি ভাতার পরিমাণও বাড়ানো প্রয়োজন।
অর্থনীতির গতি বৃদ্ধি, রফতানি গতিশীল করা, বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বাজেটে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনার অভাব লক্ষ্য করা গেছে। বৈদেশিক রিজার্ভ বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন ছিল রেমিট্যান্স ও রফতানি বৃদ্ধিমূলক উদ্যোগ গ্রহণ। কিন্তু হতাশাজনক বিষয় হলো, বাজেটে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের খাতগুলোয় নতুন কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। আশানুরুপ রেমিট্যান্স আহরণে নতুন পরিকল্পনা প্রয়োজন ছিল।
বাজেটটি ব্যবসাবান্ধবও হয়নি। মূলধনী যন্ত্রপাতির ওপর কর বাড়ানোয় বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমনিতেই বিনিয়োগ বাড়াতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। ব্যাংকঋণের সুদের হার বৃদ্ধির এ সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতির ওপর ১ শতাংশ কর বৃদ্ধি আশাপ্রদ কোনো প্রস্তাব নয়।
দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির কঠিন সময়ে সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো সচল করার নতুন কোনো ব্যবস্থার কথা বাজেটে নেই। উপরোন্ত মোবাইল ফোন রিচার্জ ও ইন্টারনেটের ওপর কর বৃদ্ধি, মেট্রোরেলের ভাড়া বৃদ্ধি, ফ্রিজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর কর বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা জনসাধারণের বোঝাকেই আরো বাড়াবে।
অর্থনীতির কঠিন এ পরিস্থিতিতে এগুলো এড়িয়ে গেলেই পারত সরকার। এসব পণ্য ও সেবার ওপর কর আরোপ করে খুব বেশি আয় বাড়ানো যাবে না, শুধু জনগণের কষ্ট আরো বাড়বে।
মো. ফজলুল হক: সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ)