তবুও দেশ ছাড়তে মরিয়া মানুষ

বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোর হিসাব মতে ৩১ মে পর্যন্ত কলিং ভিসায় মালয়েশিয়া গেছেন পৌনে পাঁচ লাখ বাংলাদেশি। আর যথা সময়ে বিমানের টিকেট না পেয়ে যেতে পারেনি আরো প্রায় ১৭ হাজার কর্মী। ২০১৩ সালে বিদেশে গিয়েছে ১৩ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি। সরকারী হিসাবে এসব কর্মী ৬৯ হাজার টাকার চুক্তিপত্রে সই করলেও বাস্তবে এসব শ্রমিকের খরচ হয়েছে ৪ থেকে ৬ লাখ টাকা।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মধ্যস্বত্বভোগী দালাল ও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কারণে এসব অভিবাসী প্রত্যাশীকে কয়েকগুন বেশি টাকা ব্যয় করতে হয়। যদিও যারা বিদেশ যান তাদের প্রায় সবাই অতিরিক্ত টাকা প্রদানের বিষয়টি প্রকাশ্যে বলতে চান না।

সম্প্রতি মালয়েশিয়া যান ফরিদপুরের বোয়ালখালীর শরিফুল ও নজরুল নামের দুই সহোদর। দ্য মিরর এশিয়াকে তারা জানান, কলিং ভিসায় সরকারি খরচ অনেক কম- এটি জানা সত্ত্বেও বেশি টাকা দিয়ে তারা দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়া যাচ্ছেন। কেননা বর্তমানে দেশে যে অবস্থা তাতে যেভাবেই হোক তারা দেশ ছাড়তে চান।

তারা জানান, গ্রামে কৃষি কাজে এখন আর লাভ নেই। কোনো রকম সংসার চলে। কিন্তু একসঙ্গে কিছু করার সুযোগ নেই। এ কারণেই দেশ ছাড়ছেন তারা।

একই কথা বললেন, কুমিল্লার বুড়িচংয়ের তরুণ আরাফাত। স্থানীয় একটি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া অবস্থায়ই গত ৩১ মে মালয়েশিয়া পাড়ি জমায় এই তরুণ। আরাফাতের ভাষ্য অনুযায়ী, পড়ালেখা করে বেকার হওয়ার চেয়ে আগে থেকেই টাকা আয়ের পথে নামা ভালো। এ কারণেই মালয়েশিয়া অবস্থান করা বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় সেও সেখানে চলে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাম্প্রতিক এক জরিপ বলছে, দেশের মোট ৫২ শতাংশ কর্মী দালালের মাধ্যমে বিদেশ পাড়ি জমায়। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরকারি ভাবে চুক্তি হলেও শেষ পর্যন্ত সেটি আর সরকারি পর্যায়ে থাকে না। চলে যায় সিন্ডিকেটের হাতে। ফলে বেড়ে যায় অভিবাসন ব্যয়।

বিবিএস বলছে, দালালের মাধ্যমে বিদেশ যাওয়ার তালিকায় এগিয়ে রয়েছে সিলেট বিভাগ। ৫৮.৫৩ শতাংশ অভিবাসী বিদেশ যেতে দালাল ধরেছেন। দ্বিতীয় অবস্থানে ময়মনসিংহ (৫৭.৪৪ শতাংশ)। বরিশালে দালালের সহায়তা নিয়েছে ২৮.৮২ শতাংশ অভিবাসী এবং খুলনায় ৪৫.৩৮ শতাংশ।

গত ৫ জুন প্রকাশিত বিবিএসের 'রিপোর্ট অন সোশিও-ইকোনমিক অ্যান্ড ডেমোগ্রাফিক সার্ভে ২০২৩'-এ বলা হয়, রংপুর ব্যতীত বেশিরভাগ বিভাগে অভিবাসন খরচের জন্য দালালদের ওপর ব্যাপক নির্ভর করতে হয়। রংপুরে সর্বোচ্চ ৫৪.৮৭ শতাংশ মানুষ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অভিবাসন খরচ দিয়েছে।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দালালদের কারণেই অভিবাসী কর্মীদের খরচ ব্যাপক ভাবে বাড়ছে। অথচ এই কর্মীদের সিংহভাগই নিম্ন-আয়ের পরিবারের সদস্য।

ওই জরিপ অনুযায়ী, মোট অভিবাসীদের ৪২.০৯ শতাংশ তাদের অভিবাসন খরচ বেসরকারি কোম্পানি/এজেন্সিগুলোকে ৩.০৯ শতাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানকে পরিশোধ করেছেন। আত্মীয় বা পরিচিতজনের সহায়তায় অভিবাসী হয়েছেন ২.৮ শতাংশ মানুষ।

অভিবাসন বিশেষজ্ঞ আসিফ মুনির বলেন, নানা কারণে মানুষ এখন বিদেশ যাওয়ার জন্য মরিয়া। তাই জেনে-শুনেই তারা বেশি টাকা দিয়ে দালালের মাধ্যমে বিদেশ যান। এসব অভিবাসন প্রত্যাশীর মধ্যে বেশিরভাগই শ্রমিক শ্রেণির। তাই তারা এজেন্সির বিষয়ে কোনো কিছু জানে না। অনেক ক্ষেত্রে এজেন্সি চিনলেও অপরিচিত হওয়ায় তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে না এসব কর্মীরা।

তার মতে দালালদের কারণে হাত ঘুরলেই টাকার অঙ্ক বেড়ে যায়। এজেন্সি থেকে মাঠ পর্যায়ে কর্মী সংগ্রহ পর্যন্ত কয়েকটি হাত হয়ে এসব অভিবাসন প্রত্যাশী ঠিক হয় বলেও জানান তিনি।