ঈদযাত্রায় এবারও মহাসড়কে ভোগান্তির শঙ্কা
পবিত্র ঈদুল আজহার আর মাত্র ছয় দিন বাকি। সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে ঘরমুখো মানুষের ভিড়। আগামী ১৭ জুন উদযাপিত হবে খুশির ঈদ। কর্মজীবী মানুষ এই ধর্মীয় উৎসব স্বজনদের সঙ্গে পালন করতে রাজধানী ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন। তবে মূল ঈদযাত্রা শুরু হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে। এ মধ্যে রাজধানীতে কোরবানির পশুর ট্রাক আসা-যাওয়া এবং সড়কে গরুর ট্রাক থামিয়ে চেকিংয়ের নামে পুলিশের চাঁদা আদায়ের আছে বাড়তি ঝামেলা। ঈদে বিপুল সংখ্যক মানুষের ঘরে ফেরার অন্যতম মাধ্যম সড়কপথ। কিন্তু ঢাকা টু চট্টগ্রাম, ঢাকা টু রংপুর, ঢাকা টু সিলেট ও ঢাকা টু ময়মনসিংহ মহাসড়গুলোর অর্ধশত স্পটে হাটবাজার। ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখী মানুষের মূল শ্রোত শুরু হওয়ার আগেই ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে চন্দ্রা, এলেঙ্গা, কড্ডা, হাটিকুমরুল মোড় এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর, বন্দরের মদনপুর ও সোনারগাঁওয়ের মোগরাপাড়া, মেঘনাঘাট টোলপ্লাজা, কুমিল্লার গৌরীপুর, নিমসার, চৌদ্দগ্রাম, ফেনীর মহিপাল ও চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড এলাকায় এখনই যানজট। কয়েকটি স্পটে এখনো দীর্ঘ সময় যানবাহন দাঁড়িয়ে থাকছে। এ অবস্থায় ঘরমুখো মানুষের জন্য যানজট ভোগান্তির থাকছেই।
দেশের প্রধান ও সবচেয়ে ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ হাটবাজার, টোল প্লাজায় ধীরগতি, বাস-ট্রাকের স্ট্যান্ড এবং যত্রতত্র ইজিবাইক ও অটোরিকশায় যাত্রী ওঠানামার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কোনো কোনো স্পটে আটকে থাকতে হয় ২-৩ ঘণ্টা, আবার কোথাও কোথাও ৩-৪ ঘণ্টা। হাইওয়ে পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি উদ্ধার, উল্টোপথে গাড়ি আসা এবং যানবাহনের বাড়তি চাপসহ নানা কারণে যানজট দীর্ঘ হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজটপ্রবণ কয়েকটি স্পট হলো নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর, বন্দরের মদনপুর ও সোনারগাঁওয়ের মোগরাপাড়া, মেঘনাঘাট টোল প্লাজা, কুমিল্লার গৌরীপুর, নিমসার, চৌদ্দগ্রাম, ফেনীর মহিপাল ও চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড। এই স্পটগুলোর কারণে পাঁচ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগে ১০ ঘণ্টা বা কখনো কখনো আরো বেশি। ভয় রয়েছে সেতু, সড়ক এবং ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা নিয়ে। টোল আদায়ের গতি ধীর হলে দীর্ঘ যানজটের শঙ্কা রয়েছে।
গত ৭ জুন ছুটির দিনেও ঢাকা-চট্টগাম মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দিতে অন্তত ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট দেখা দেয়। দুর্ঘটনাকবলিত একটি ট্রাক উদ্ধার করতে গিয়ে মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে যান চলাচল বন্ধ রাখায় এ যানজট সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন বিভিন্ন পরিবহনের যাত্রী ও চালকরা। ঈদের আগে মহাসড়কটিতে যানজটের এই উৎকণ্ঠা চলাচলরত ঈদ যাত্রীদের মনে দানা বাঁধতে শুরু করেছে।
কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির মালিকানাধীন গাড়ির কারণে যানজট দূর করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তখনই যানজট দীর্ঘ হতে থাকে। মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, এছাড়াও রাস্তা বন্ধ রেখে মহাসড়কের মাঝপথে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করায় সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। সেই সঙ্গে মহাসড়কের পাশে প্রচুর অবৈধ স্থাপনা ও হাটবাজার গড়ে ওঠায় যানবাহন চলাচলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এদিকে ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের ৮টি পয়েন্টে যানজটের শঙ্কা করা হচ্ছে। পয়েন্টগুলো হলোÑ সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড, মৌচাক স্ট্যান্ড, ১০তলা ভবন, শিমরাইল মোড়, সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুর, বন্দরের মদনপুর ও সোনারগাঁওয়ের মোগরাপাড়া, মেঘনাঘাট টোল প্লাজা এলাকা। এর মধ্যে সাইনবোর্ড, ১০তলা ভবন, শিমরাইল মোড়, মোগরাপাড়া এলাকায় সবসময় যানবাহনের জটলা লেগেই থাকে। অন্যদিকে যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলেই টোল প্লাজা এলাকায় যানজট মোগরাপাড়া এলাকা ছাড়িয়ে যায়। এছাড়াও মেঘনা ও গোমতী সেতুতে টোল আদায়ে বিলম্ব এবং মহাসড়কে যানবাহন বিকল কিংবা সড়ক দুর্ঘটনা যানজটের অন্যতম বড় কারণ হতে পারে। এছাড়া ছোট ছোট কম গতির যানবাহন সিএনজি, অটোরিকশা, ভ্যান মহাসড়কে চলাচল করায় যানজট শঙ্কা রয়েছে।
সওজের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, সড়কের পাশে কলকারখানা, বাজার, যত্রতত্র ইউটার্ন, যাত্রী ওঠানামা, সরু ও ভাঙাচোরা সড়কের কারণে যানজট হতে পারে বিভিন্ন স্থানে। ঢাকা-টাঙ্গাইল বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটারের মধ্যে সাড়ে পাঁচ কিলোমিটারে দুর্ঘটনা ও বিকল যানবাহনের কারণে যানজটের আশঙ্কা করছেন যাত্রী ও চালকরা। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার রাস্তার কাজ এখনও শেষ না হওয়ায় ভোগান্তি রয়েছে। মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ শেষ না হওয়ায় ওই সাড়ে ১৩ কিলোমিটার অংশে থ্রি-হুইলার দাপটের সঙ্গে চলাচল করছে। যাত্রীসাধারণ ও চালকরা যানজট নিরসনে মহাসড়কেও ওই সাড়ে ১৩ কিলোমিটার অংশে নজরদারি বাড়ানোর দাবি করেছে। মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজের গাফিলতি ও ধীর গতির কারণে দীর্ঘদিনেও সাড়ে ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কের চার লেনের কাজ এখনও শেষ হয়নি। যার কারণে বিগত কয়েক বছর যাবত ঈদ যাত্রায় যানজটের নাকালে চালক-যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বিগত তিনটি ঈদযাত্রায় মহাসড়ক পর্যালোচনায় দেখা যায়, মহাসড়কে দুর্ঘটনায় ও বিকল যানবাহনের কারণে যানজট বেড়েছে। গত বছর ঈদুল ফিতরে মহাসড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা ২০টি। একই বছরের ঈদুল আজহায় দুর্ঘটনার সংখ্যা ৫৯টি এবং চলতি বছরের ঈদুল ফিতরে এক বছরের ব্যবধানে দুর্ঘটনা সংখ্যা ৬৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৮৩টি। গত ঈদযাত্রায় ৪ এপ্রিল থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর ৫৩টি গাড়ি বিকল ও কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটে। ফলে ঈদযাত্রার শেষ দিকে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তারাবো বিশ্বরোড থেকে বরপা, ঢাকা-বাইপাস, রূপসী-কাঞ্চন সড়কের কালাদি থেকে হাটাবো পর্যন্ত, ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কের ইছাখালী মোড় থেকে ফজুর বাড়ি, হারিন্দা থেকে হাবিবনগর পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার যানজটে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চরম ভোগান্তির চিত্র দেখা গেছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে এসব সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এতে গরুবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস, সাধারণ যানবহন আটকে যায়।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ডেমরা-কালীগঞ্জ সড়কের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় উপজেলার ইছাখালী থেকে মুশুরী ফজুর বাড়ি পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এখানে ৩শ’ ফুট সড়ক দিয়ে প্রবেশ করা ডেমরা ও রূপসীমুখী শত শত যানবাহন আটকে থাকে দিনভর। গত ৭ মাস যাবৎ এ সড়কের নির্মাণকাজ চলমান থাকায় প্রতিদিন এভাবে যানজট লেগে থাকে। এতে সাবরেজিস্ট্রি অফিস, সরকারি হাসপাতাল, থানা ভবন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীরাও প্রতিদিন ভোগান্তি পোহান। একই চিত্র রূপসী-কাঞ্চন সড়কের হাটাবো থেকে ঢাকা বাইপাসের কালাদি মোড় পর্যন্ত। এখানে স্থানীয় শিল্প কারখানার ট্রাকগুলো ঢাকা বাইপাস হয়ে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার সময় যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে কাঞ্চন বাজারসহ মুড়াপাড়া বাজারগামী জনসাধারণের চরম ভোগান্তি থাকে।