বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশমূল্য এক লাফে পাঁচগুণ
রাজধানী ঢাকা এক যান্ত্রিক নগরীতে পরিণত হয়েছে। মানুষ স্বস্তি খুঁজতে পরিবার নিয়ে কিছু সময়ের জন্য বোটানিক্যাল গার্ডেনে ঘুরতে যেতেন। আশপাশের বাসিন্দারা শরীরচর্চার জন্য উদ্যানে হাঁটতেন। এতদিন উদ্যানে প্রবেশের জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের ২০ টাকা ফি দিতে হতো। তবে এবার এক ধাক্কায় ৫ গুণ ফি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে পার্কে সকালে হাঁটতে আসা ব্যক্তিদের জন্য এক বছরের জন্য কার্ড ফি ৫০০ টাকা ধার্য করা হয়েছে। তারা প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ১ ঘণ্টা অবস্থান করতে পারবেন। অবশ্য শুধু ঢাকা জাতীয় উদ্যানই নয়, একই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে কক্সবাজারের চকরিয়ায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে প্রবেশের ক্ষেত্রেও।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে এই নতুন প্রবেশমূল্য কার্যকর হবে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখি করছেন।
তারা বলছেন, জাতীয় চিড়িয়াখানার পাশেই অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান ঘিরে মানুষের আকর্ষণ কম নয়। প্রকৃতি ও বৃক্ষপ্রেমী মানুষের মতোই সেখানে আসেন শিক্ষার্থীরাও। এমনকি, সেখানে প্রাতঃভ্রমণের জন্যও আসেন অনেকে। কিন্তু এবার থেকে সেখানে প্রবেশ করতে হলেই টান পড়বে পকেটে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভারতীয় নাগরিকদের জন্য এই প্রবেশমূল্য আগে ছিল ১০ টাকা। তা বেড়ে হচ্ছে ৩০ টাকা। একইভাবে বিদেশি নাগরিকদের জন্য এই প্রবেশমূল্য ১০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা হয়েছে।
প্রবেশ ফি বাড়ানোর বিষয়ে উদ্যানের বাইরে টাঙানো নোটিশের ছবি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ মানুষ। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ বিল্লাহ মামুন নামে একজন বোটানিক্যাল গার্ডেনের গেটে টাঙানো নোটিশের ছবি শেয়ার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘কী পরিমাণ ফাতরামি চলছে দেশটার ভেতরে! মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে ২০ টাকার টিকিট ১০০ টাকা করেছে। গরিব মানুষের আর পার্কে যেতে হবে না। আর সকালে ব্যায়ামের সময় মাত্র এক ঘণ্টা করে দিয়েছে। লুটপাট আর দুর্নীতির শেষ কোথায়?’
একইভাবে ক্ষোভ ঝাড়ছেন তার মতো আরও অনেকে। তারা বলছেন, এক ধাপে পাঁচগুণ ফি বাড়ানো অযৌক্তিক।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের পরিচালক শওকত ইমরান আরাফাত বলেন, প্রবেশমূল্য বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন এসেছে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে। আর ফি আদায় করে ঠিকাদার। আমরা শুধু প্রচার-প্রচারণা কীভাবে করা যায় সেটার চেষ্টা করছি।
তিনি আরও বলেন, আগে আনুষ্ঠানিকভাবে না থাকলেও নতুন প্রজ্ঞাপনে সকালে হাঁটার জন্য ১ ঘণ্টা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এজন্য বাৎসরিক ৫০০ টাকা ফি দিয়ে একটি কার্ড নিতে হবে। এখন থেকে জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে প্রবেশের জন্য ১২ বছরের ঊর্ধ্বে সকলকে ১০০ টাকা, ১২ বছরের নিচে প্রতিজনকে ৫০ টাকা ফি প্রদান করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হতে আসা ১০০ জনের কম শিক্ষার্থীদের গ্রুপের জন্য ১০০০ টাকা ও ১০০ জনের বেশি হলে ১৫০০ টাকা ফি প্রদান করতে হবে।
তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রবেশমূল্য বাড়ানো বন এবং জীববৈচিত্র্যের পক্ষে ইতিবাচক। সেখানে অযথা কেউ প্রবেশ করবে না। এতে বন্যপ্রাণীর নিরাপত্তা বাড়বে।
মিরপুরে প্রায় ২১৫ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান। এই বোটানিক্যাল গার্ডেনে আছে এক হাজারের বেশি প্রজাতির বৃক্ষ এবং বন্যপ্রাণী। অনেক বাবা-মা তাদের সন্তানদের এবং শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসেন সেখানে। একইভাবে প্রকৃতিপ্রেমীদের পছন্দের স্থান বোটানিক্যাল গার্ডেন।