সর্বভুক লিটন-আউয়াল জুটির কাছে ‘জিম্মি’ রাজশাহী!

ছবি: দ্য মিরর এশিয়া

২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (আরসিসি) মেয়র নির্বাচিত হন এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর ২০১৩ সালের নির্বাচনে তিনি আবার মেয়র প্রার্থী হন। ওই নির্বাচনে তার খরচ বহন করেন শামসুজ্জামান আউয়াল নামে একজন ব্যবসায়ী; যিনি রাজশাহীতে লিটনের ব্যবসায়িক অংশীদার হিসেবে বেশি পরিচিত। ওই নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি টকশোতে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে লিটন বলেছিলেন, ‘আউয়াল দীর্ঘদিন যাবৎ তার নির্বাচনী খরচ বহন করছেন। কিন্তু বিনিময়ে তিনি কখনো কিছু চাননি বা পাননি।’

যদিও সেদিনের লাইভ টকশোতে আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রকাশ্যে মিথ্যাচার করেছিলেন। কারণ, এর আগে ২০১০ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের জমিতে সরকারি-বেসরকারিভিত্তিক দুটি বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) পরিচালক শামসুজ্জামান আউয়ালকে।

যদিও দুটি কাজই ১০ বছরের বেশি সময় ধরে আটকে রাখা হয়েছিল। শুধুমাত্র লিটনের ব্যবসায়িক অংশীদার হওয়ায় এই আউয়ালকে নগরীর সাহেববাজার মুড়িপট্টিতে আরেকটি বহুতল ভবনের কাজ দেওয়া হয়। এই ভবনটি ছয়তলা পর্যন্ত করার অনুমোদন দেওয়া হলেও শামসুজ্জামান আউয়াল তা বাড়িয়ে ১০ তলা করেছেন।

পর্ব ১: এক বছরেই ছয় প্রতিষ্ঠানের মালিকানা

আউয়ালের গল্প এখানেই শেষ নয়। লিটনের সঙ্গী হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজশাহীর অন্যতম শীর্ষ ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের একজন। প্রথমে তিনি লিটনের ঠিকাদারি কাজ নিয়ন্ত্রণ করতেন। বর্তমানে জমি দখল ও পুকুর ভরাটের মতো কাজও নির্বিঘ্নে করছেন। তিনি এখন মার্সিডিজ এবং বিএমডব্লিউসহ কয়েক কোটি টাকার ৫টি বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহার করেন। লিটন-আউয়াল জুটি গত কয়েক বছরে নাবিল গ্রুপের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে; যাদের বিরুদ্ধে ইসলামী ব্যাংকের শত কোটি টাকা ঋণখেলাপির অভিযোগ রয়েছে।

আলিফ লাম মিম ভাটা: লিটনের উত্থানের গল্প

২৯ ডিসেম্বর ২০২০। রাত প্রায় ১২টা। তখন পর্যন্ত রাজশাহী মহানগরীর বিমান চত্বরে সড়কের কাজ শেষ হয়নি। হঠাৎ, বিপরীত গলি থেকে ১৫-২০ জনের একদল সশস্ত্র দল বেরিয়ে আসে। তাদের গন্তব্য ছিল রাজশাহী-নওগাঁ সড়কের পাশে একটি চারতলা বাড়ি। বাড়ির নিচতলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ভাড়া করা অফিস। দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় থাকতেন মালিক দিল আফরোজ জুলিয়া ও তার স্বামী আমানুল হক।

পুরো ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক নৈশপ্রহরী দ্য মিরর এশিয়াকে বলেন, একটি মেরুন রঙের প্রাইভেট কার সেই সড়কের কাছে অপেক্ষা করছিল যেখান থেকে সন্ত্রাসীরা বেরিয়েছিল। সন্ত্রাসীরা বেরিয়ে এসে প্রাইভেট কারের জানালা দিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলতে বলতে চারতলা ভবনের দিকে যায়। গাড়িও এগিয়ে যায় নির্মাণাধীন সড়কের দিকে। এর পরেই ভবনটিতে একটি নারকীয় তাণ্ডব চালানো হয়। সন্ত্রাসী বাহিনী চারদিক থেকে ভবনটিতে হামলা চালিয়ে বেপরোয়া ভাঙচুর শুরু করে।

পর্ব ২: ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে মেয়র লিটনের রহস্যময় ব্যবসায়িক সম্পর্ক

পর দিন সংবাদপত্রে কম গুরুত্ব দিয়ে একটি সংবাদ ছাপা হয়। যাতে বলা হয়, ওই রাতে পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিসে রহস্যজনক হামলা হয়েছে। খবরটি পড়ে সেই রাতের আসল ঘটনা বোঝা সম্ভব হয়নি, এর পেছনেও ছিল এমন ঘটনা, যা ছিল কল্পনার বাইরে। অনেক দিন যা ছিল অজানা।

মিরর এশিয়ার অনুসন্ধানে জানা গেছে, মধ্যরাতের ঘটনার পেছনে রয়েছে জমি দখল। এর নেপথ্যে ছিলেন মেয়র লিটনের অন্যতম ব্যবসায়িক অংশীদার শামসুজ্জামান আউয়াল। পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিস নয়, ওই রাতে হামলার লক্ষ্য ছিল বাড়িটির মালিক দম্পতি। এ ঘটনার প্রায় দুই বছর পর ২০২২ সালে তারা তীব্র চাপের মুখে বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হন। ওই বাড়িসহ জমি আউয়ালের দখলে চলে যায়।

গল্পটির শুরু আরও আগে, ২০০৮ সালে। খায়রুজ্জামান লিটন প্রথমবারের মতো রাসিক মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর রাজশাহী শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত আলিফ লাম মীম ভাটা নামে পরিচিত প্রায় ২৪ বিঘা জমিতে নজর রাখেন। এক সময় এখানে ব্রিক ফিল্ড কোম্পানি ছিল, তার নামানুসারে এলাকার নামকরণ করা হয়েছে। কিন্তু বিশাল এই সম্পত্তি নিয়ে দুই মালিকের উত্তরসূরীদের মধ্যে আইনি লড়াই চলে। শামসুজ্জামান আউয়ালের মাধ্যমে এক পক্ষের সঙ্গে নামমাত্র মূল্যে জমি কেনার চুক্তি করেন মেয়র লিটন। শর্ত ছিল, আদালতে বিক্রেতাদের পক্ষে খায়রুজ্জামান লিটন ও শামসুজ্জামান আউয়াল মামলা করবেন। মামলার যাবতীয় খরচও তারা বহন করবেন। আদালতে মামলায় জেতার পর পুরো জমির মালিক হবেন লিটন ও আউয়াল।

জমিটি ছিল বিতর্কিত, সেটি নিয়ে যেহেতু আইনি লড়াই চলছিল, তাই সেখানে অন্য কোনো স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ ছিল না। সে কারণে উত্তরসূরীদের একটি পক্ষ লিটন-আউয়ালের সঙ্গে চুক্তিতে নামমাত্র মূল্যে জমি ছেড়ে দিতে রাজি হন। কিন্তু এ গল্পের টুইস্ট ছিল অন্য জায়গায়। জমি হস্তান্তরের বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অবিশ্বাস্য এক প্রকল্পের প্রস্তাব উন্মোচন করেন মেয়র লিটন।

পর্ব ৩: লিটন আর দুর্নীতি যেন একই সূত্রে গাঁথা

নগরীর বিমানবন্দর সড়ক থেকে বিহাস পর্যন্ত একটি পূর্ব-পশ্চিম সংযোগ সড়ক নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয় রাসিক; যেটি আলিফ লাম মীম ভাটার একটি বড় অংশজুড়ে ছিল। তবে ওই জমিটি লিটনের হাতে না আসা পর্যন্ত এ প্রকল্পের কথা প্রকাশ করা হয়নি। সরকারি এই প্রকল্প আসার সঙ্গে সঙ্গে ওই এলাকায় জমির দাম অকল্পনীয়ভাবে বেড়ে যায়। দখলকৃত জমি থেকে বিপুল পরিমাণ মুনাফা এসেছে লিটন-আউয়াল জুটির।

দ্য মিরর এশিয়ার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, প্রথম মেয়াদে মেয়রের চেয়ারে বসার পরই ওই জমি অধিগ্রহণ করেন লিটন। পুরো জমিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যার প্রতিটি ছিল ৮ বিঘা। লিটন ও আউয়ালের পাশাপাশি এই জমির একটি অংশ পান রাজশাহীর ঠিকাদার ব্যবসায়ী কবির হোসেন।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কবির হোসেন ওই জমি কিনেছেন বলে দাবি করেন। লিটন ও আউয়ালের সঙ্গে তার শুধু ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জমি কেনা কোনো অপরাধ নয়। আমরা জমি কেনার পর এখানে রাস্তা হয়। সে কারণে জমির দাম বেড়েছে। এটা খুব সহজ হিসাব।’

পর্ব ৪: লিটনে বলীয়ান ভারতীয়দের অর্থ অস্ত্র ও মাদক পাচার, হুন্ডির কারবার

তবে এই জমি কেনার এমন প্রক্রিয়ায় বেঁকে বসেন দিল আফরোজ জুলিয়া ও আমানুল হক দম্পতি। আর সেই কারণে ২০২০ সালের মধ্যরাতে তাদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছিল। দিল আফরোজ জুলিয়া হলেন আলিফ লাম মিম ভাটার ওই জমির দুই প্রধান মালিকের একজনের মেয়ে। ফলে উত্তরাধীকারসূত্রে এই জমিতে তারও অংশ রয়েছে। তিনি দ্বিমত জানানোর কারণে পুরো জমি দখল করা লিটন ও আউয়ালের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে। লিটন ২০১৩ সালে রাসিক নির্বাচনে পরাজিত হন। ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি ক্ষমতার অপব্যবহারের সুযোগ পাননি। ফলে জুলিয়া-আমান দম্পতিকে সে সময় খুব একটা ঝামেলায় পড়তে হয়নি।

কিন্তু ২০১৮ সালের সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে জয়লাভের পর আবারও জমির দিকে নজর দেন লিটন। ২০২০ সালে বাড়িতে হামলার পর ওই দম্পতিকে গভীর রাতে সন্ত্রাসী দিয়ে তুলে নেন লিটন। তাদেরকে শহরের উপশহর আবাসিক এলাকায় খায়রুজ্জামান লিটনের বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে গভীর রাতে বাড়িতে সাব-রেজিস্টার ডেকে জুলিয়ার কাছ থেকে জোরপূর্বক জমির দলিলে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ওই রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার চেষ্টায় তারা প্রাণে বেঁচে যান। যদিও পরে ওই কর্মকর্তাকে অন্যত্র বদলি করা হয়। এরপর আলিফ লাম মীম ভাটার পুরো ২৪ বিঘা জমি দখলে নিতে আর কোনো বেগ পেতে হয়নি লিটন ও আউয়ালকে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমানুল হক বলেন, ‘এ বিষয়ে অনেক কথা হয়েছে। কিন্তু আমরা এসব নিয়ে আর কথা বলতে চাই না। এখন আমরা কোনো ঝামেলায় যেতে চাই না।’

ওই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খায়রুজ্জামান লিটনের এই জমির মামলাটি অনেকটাই ওপেন সিক্রেট। তারা আরও জানান, লিটন ও আউয়াল ওই এলাকায় আরও জমি কিনেছেন। তাদের দাবি, প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্পের আগে খায়রুজ্জামান লিটন সেখানে নিজের ব্যবসায়িক স্বার্থ রক্ষা করেন।


যখন পুকুর চোষা দানব অপ্রতিরোধ্য

চলতি বছরের জুন মাসে ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হলেই রাজশাহী নগরীর তেরখাদিয়া এলাকায় সক্রিয় হয়ে ওঠে আরসিসির একটি হুইল লোডার গাড়ি। গভীর রাতে একটি বিশেষ কাজ চলছিল। এটা আরসিসির নিজের কাজ ছিল না। আশ্চর্যের বিষয় হল, পুকুর ভরাটের জন্য ওই এলাকায় আরসিসির হুইল লোডার গাড়ি ব্যবহার করা হচ্ছিল। ঈদের ছুটিতে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজেই দাঁড়িয়ে পুকুর ভরাট করেন।

কিছুদিন পর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এ নিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় ছবিসহ সংবাদ প্রকাশিত হলে আরসিসির হুইল লোডার গাড়িটি সরিয়ে ফেলা হয়। কিন্তু ততক্ষণে পুকুরটি প্রায় বালিতে ভরাট হয়ে গেছে।

তবে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের এক রিটের চূড়ান্ত শুনানিতে হাইকোর্ট রাজশাহী সিটি মেয়র, পরিবেশ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট পরিচালক, র‌্যাব ও জেলা প্রশাসনকে রাজশাহী মহানগরীর ৯৫২টি পুকুর সংরক্ষণের নির্দেশ দেন। শুনানিতে নগরীর অন্য কোনো পুকুর যাতে ভরাট বা দখল না হয় তা নিশ্চিত করতে বলা হয়। রাজশাহী সিটি মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন নিজেই পুকুর সংরক্ষণ নিয়ে জোর গলায় কথা বলছেন। তাহলে রাতের আঁধারে সেই আরসিসি গাড়ি ব্যবহার করে কীভাবে পুকুর ভরাট করা যাবে? বিষয়টি জানার পরও আরসিসি কেন কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়নি?

এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে দ্য মিরর এশিয়া যোগাযোগ করেন আরসিসির ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কামাল হোসেনের সঙ্গে। প্রথমে তিনি মিরর এশিয়ার রিপোর্টারকে বারবার প্রলুব্ধ করেন আলাদাভাবে তার সঙ্গে বসতে। তাঁর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হলে তিনি বলেন, 'আপনি যাকে পুকুর বলছেন, তা মোটেও পুকুর নয়। বরং, আনুষ্ঠানিকভাবে এটি 'ভূমি' বিভাগের অন্তর্গত। ফলে বালু ভরাট করতে আইনি বাধা নেই।’

‘এটা আসলে আমার একার নয়। আমাদের মেয়রের ব্যবসায়িক অংশীদার জনাব আউয়াল নিজেই এর সাথে যুক্ত। তিনি এই জমি কিনেছেন; আমি তার সঙ্গে আছি। পুকুরটি বালি দিয়ে ভরাট করার জন্য আমরা আরসিসির হুইল লোডার ভাড়া করেছি। কিন্তু পরে সাংবাদিক নির্যাতনের কারণে আমি তাও বন্ধ করে দিয়েছি,” যোগ করেন কাউন্সিলর কামাল।

তবে রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কার্যালয় থেকে জানা যায় আরেকটি ভেতরের ঘটনা। রাজশাহীতে পুকুর ভরাট নিয়ে জলাবদ্ধতা বেড়েছে। ডিসি শামীম আহমেদ পুকুর ভরাটের ঘোর বিরোধী। এমনকি পুকুর ভরাট বন্ধে ভূমিকা রাখার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করেন। কিন্তু খায়রুজ্জামান লিটনের ব্যবসায়িক অংশীদার শামসুজ্জামান আউয়াল স্বল্পমূল্যে পুকুর কিনে তাদের শ্রেণী পরিবর্তন করে 'জমি' করার চেষ্টা করছেন, যাতে ভরাট করতে কোনো আইনি বাধা না থাকে।

জানতে চাইলে ডিসি শামীম আহমেদ দাবি করেন, তার মেয়াদে তিনি নগরীর কোনো পুকুরের শ্রেণী পরিবর্তন করতে দেননি। পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দেন তিনি। তিনি এ বিষয়ে বেশি কথা বলতে রাজি হননি।

খায়রুজ্জামান লিটনের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র দ্য মিরর এশিয়াকে জানায়, শামসুজ্জামান আউয়ালের পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তনের অনুরোধ না মানায় বর্তমান ডিসিকে সরিয়ে তাদের পছন্দের নতুন ডিসি রাজশাহীতে আনার চেষ্টা চলছে। সেক্ষেত্রে তাদের প্রথম পছন্দ আলমগীর কবির, বর্তমানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (পরিকল্পনা-২)। কবির সাহেব তার কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় রাজশাহীতে কাটিয়েছেন। এক উপজেলায় এসি (ল্যান্ড) এবং অন্য উপজেলায় ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি রাজশাহী জেলার এডিসি ছিলেন। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদে পদোন্নতি পাওয়ার আগে আলমগীর কবির আরসিসি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের একান্ত সচিব ছিলেন।

আলমগীর কবিরের মাধ্যমেই দীর্ঘদিন ধরে লিটন-আউয়াল জুটি স্থানীয় প্রশাসনে ব্যবসা-বান্ধব সব কাজ করেছেন। রাজশাহীতে সবাই কবিরকে মেয়র লিটনের অনুগত ও আনুগত্যকারী হিসেবেই জানে। এছাড়া বিতর্কিত আমানা গ্রুপের সঙ্গে লিটন ও তার পরিবারের ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন আলমগীর কবির।

শামসুজ্জামান আউয়ালের পুকুর ভরাট শুধু একটি নয়, আরও অনেক আছে। এর মধ্যে নগরীর লক্ষীপুর এলাকায় ২১৮ কাঠার বুড়িপুকুর ভরাটের ঘটনা সবচেয়ে বেশি আলোচিত। ওই পুকুরের মালিক ছিলেন ২৪০ জন। তাদের কাছ থেকে নামমাত্র মূল্যে কেনার পর ২০১৯ সালে বালু ভরাটের কাজ শুরু হয়। ওই বছর ১৫ কাঠা জায়গার পুকুর ভরাট করা হয়। ২০২১ সালের ঈদের ছুটিতে সিটি কর্পোরেশনের গাড়ি ব্যবহার করে পুকুরের অবশিষ্ট অংশ ভরাট করা হয়। লিটন-আউয়াল জুটিরও এই পুকুর ভরাটের অংশীদার ছিল নাবিল গ্রুপ নামের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যদিও পুকুরটি সংরক্ষণের তালিকায় রয়েছে, তবে এটি অবৈধভাবে ভরাট করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে 2022 সালে এটিকে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছিল।জানতে চাইলে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) চেয়ারম্যান জিয়াউল হক দাবি করেন, পুকুর ভরাটের বিষয়ে আরডিএ মামলা করেছে। তিনি বলেন, "আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগেই এই ঘটনা ঘটেছিল। ফলে সে সময় আমার কিছু করার ছিল না। তবে যতদূর জানি, আমরা আইনি ব্যবস্থা নিয়েছি।"কিন্তু পরিহাসের বিষয় হলো, আরডিএর দায়ের করা এই মামলায় ২০২১ সালে মারা যাওয়া পুকুরের মালিক নুরুল ইসলামকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। তার মৃত্যুর পর তার বিরুদ্ধে মামলা করায় এর ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

আরও পড়ুন:

পর্ব ১: এক বছরেই ছয় প্রতিষ্ঠানের মালিকানা

পর্ব ২: ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে মেয়র লিটনের রহস্যময় ব্যবসায়িক সম্পর্ক

পর্ব ৩: লিটন আর দুর্নীতি যেন একই সূত্রে গাঁথা

পর্ব ৪: লিটনে বলীয়ান ভারতীয়দের অর্থ অস্ত্র ও মাদক পাচার, হুন্ডির কারবার