তিস্তার মতো মোংলা বন্দর নিয়েও কি চাপ দিচ্ছে ভারত!

মোংলা বন্দর/ফাইল ছবি

তিস্তা প্রকল্পে যুক্ত হতে ভারত সরকারি পর্যায়ে আগ্রহ দেখানোর পর তিস্তা প্রকল্প যুক্ত হওয়ার বিষয়ে চীন নরম সুর ব্যক্ত করেছে। তবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফরে মোংলা সমুদ্র বন্দরের আধুনিকায়ন প্রকল্পে দেশটি যুক্ত হবে বলে আলোচনা চলছে। তবে এখন শোনা যাচ্ছে, মোংলা বন্দরেও ভারত যুক্ত হতে আগ্রহী।

মোংলা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর। দক্ষিণের এই গুরুত্বপূর্ণ বন্দরের সুবিধা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে জেটি, ইয়ার্ড কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

সংশ্লিষ্টরা বলছন, ভূরাজনৈতিক জটিলতাসহ বিভিন্ন কারণে সরকার এ কার্ষক্রম  শুরু করতে পারছে না। সরকার চীনের কাছ থেকে অর্থায়ন সহায়তা পাওয়ার আশ্বাসে মোংলা বন্দর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের প্রকল্প গ্রহণ করে। কিন্তু ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ওপর চাপের কারণে, গত সেপ্টেম্বর থেকে চিনের অর্থায়নের বিষয়টি ঝুলে আছে।

সম্প্রতি চীনের দূতাবাস থেকে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। সূত্র বলছে, ভারতের আগ্রহের বিষয়টি ভালোভাবে দেখছে না চীন। সংশ্লিষ্টদের মতে, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনিক) মিটিংয়ে মোংলা বন্দরের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন  প্রকল্পে ভারত এবং চীনের মধ্যে বিরোধ বা প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি উঠে এসেছে। তবে এটি প্রথম ঘটনা নয়। ভারত বাংলাদেশে গভীর সমুদ্র বন্দরে চীনের অর্থায়নের বিরোধিতা করছে বলে মনে হচ্ছে। ২০১৪ সালে চট্টগ্রামের সোনাদিয়ায় বাংলাদেশ-চীন চুক্তি স্বাক্ষরের কথা থাকলেও বাতিল হয় ভারতের চাপে। 

সূত্র জানাচ্ছে, মোংলা গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প বাস্তবায়নের দিকে না যাওয়ায় বেইজিং বিরক্ত হয়েছে। আবার, ভারতের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিস্তা নদীর ব্যবস্থাপনা অধ্যয়নের জন্য তাদের কারিগরি দল বাংলাদেশে আসবে। তিস্তা প্রকল্প ঘিরে চীনের উদ্যোগ মোকাবিলায় এটি ভারতের একটি পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। ভারত বাংলাদেশের তিস্তা সমস্যা সমাধানের জন্য চীনের প্রকৃত পরিকল্পনা বা অভিপ্রায়ের পরিবর্ত চায়  বাংলাদেশ সরকারের কাছে।

তবে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের মধ্য দিয়ে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গীতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। শেখ হাসিনার চীন সফরে দুই দেশের উচ্চপর্যায়ে বৈঠকে ‘মোংলা বন্দরের সুবিধাদির সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের বাধা দূর হতে পারে।

সংশ্লিষ্ট এবং ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোংলা বন্দরের অবকাঠামো না বাড়ানোর ফলে দেশের আমদানি-রপ্তানি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মোংলা বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি তোলের ব্যবসায়ীরা। তার বলছেন, বন্দরকে উন্নত করার পরিকল্পনা কিছুটা এগিয়েছে। ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে রেললাইনের মাধ্যমে মোংলা বন্দরকে যুক্ত করা হয়েছে। তবে মোংলা বন্দরকে বড় করার পরিকল্পনা অনুযায়ী ছয়টি নতুন জেটি নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়নি।

গত বছর ১২ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় পাস হয় মোংলা বন্দর সুবিধা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পটি। যার খরচ ধরা হয় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে একনেকে পাস হলেও এ বছর জানুয়ারির পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। প্রকল্পটি আবার যাচাই-বাছাই করতে বলা হয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়। আটকে যায় বন্দরের উন্নয়নের মহাপরিকল্পনা। 

মোংলা বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ লিয়াকত হোসেন লিটন দি মিরর এশিয়াকে বলেন, বন্দর উন্নয় প্রকল্পটি প্রথমবার একনেকে পাশ হওয়ার পর নৌ মন্ত্রণালয় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষকে জানায়। যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রস্তাবনা ফের মন্ত্রণালয়ে পাঠায় বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কবে এ প্রকল্প একনেকে পাশ হবে তা বলা যাচ্ছে না।

সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) ড. এ কে এম আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করে আমরা আবার নতুন তথ্য দিয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। কবে প্রস্তাবটি একনেক বৈঠকে উঠবে সেটা আমি বলতে পারছি না। সেটা মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোংলা উন্নয়ন প্রকল্পটি তিস্তা প্রকল্পের মতো ভারত এবং চীনের আগ্রহের বস্তুুতে পরিণত হয়েছে। সরকার চাইছে বাংলাদেশ, ভারত, চীনের তিন কোম্পানিকে দিয়ে প্রকল্প এগিয়ে নিতে। ইতিমধ্যে চীনের একটি কোম্পানি চ্যানেল ড্রজিংয়ের কাজ অর্ধেক শেষ করেছে।  

বিশেজ্ঞরা বলছেন, সরকার বিভিন্ন দেশের কাছে যে সব কমিটমেন্ট করেছে, তা রক্ষা করতে হবে। তা না হলে ঘটলে সরকারকে কেউ বিশ্বাস করবে না। বর্তমানে মোংলায় একসঙ্গে ৪৭টি জাহাজ নোঙর করতে পারে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারলে বেশি জাহাজ নোঙর করতে পারবে।