আন্দোলনকারীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করার আহ্বান জানিয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাবেক নেতারা। সোমবার রাজধানীর পল্টন মোড় সংলগ্ন আলরাজি কমপ্লেক্সে গণঅধিকার পরিষদের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কোটা সংস্কার আন্দোলন-২০১৮ এর সংগঠক মো: রাশেদ খাঁন। তিনি বলেন, সরকার পরিকল্পিতভাবে ২০১৮ সালের মীমাংসিত বিষয় সামনে এনে চলমান লুটপাট, আর্থিকখাতের বিপর্যয়, আজীজ-বেনজীর-আসাদুজ্জামান-মতিউরদের দুর্নীতি, ভারতের সাথে রেলচুক্তি ইত্যাদি বিষয়গুলো থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন একটি সফল ছাত্র আন্দোলন। ওই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন ৮ এপ্রিলে থেকে জোরালো আন্দোলনে পরিণত হলে ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন, আর কোন কোটা থাকবেনা, যেহেতু সংস্কার করলে আবার আন্দোলন হবে, তাই কোটা বাতিল করা হবে।
রাশেদ বলেন, আমরা সে সময়ে কোটা বাতিল নয় বরং কোটা সংস্কার চেয়েছিলাম। সে সময় ২ জুলাই সরকার তৎকালীন মন্ত্রীপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ৯ম থেকে ১৩ তম গ্রেডে কোটা বাতিল করে মেধারভিত্তিতে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। কিন্তু গত ৭ জুলাই ২০২৪ ইং তারিখে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোটা বাতিল আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই। তাহলে তিনি কেন বাতিল করার কথা বলেছিলেন, শিক্ষার্থীরা তো বাতিল চায়নি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে বিতর্কিত করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র চলছে উল্লেখ করে রাশেদ খান বলেন, গত ৮ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘আগে যে কোটা আন্দোলন বাংলাদেশে হয়েছিল সেখানকার প্রথম সারির ৩১ জন নেতা তারা কিন্তু বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি।’
ক্ষমতাসীনদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের সভাপতি গত ১৩ জুলাই বলেছেন, ‘২০১৮ সালে কোটা আন্দোলনকারীদের একজনও বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। এছাড়া গতকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এতো ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে? সরকারের দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে এমন বক্তব্য কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। ২০১৮ সালে যারা কোটা সংস্কার আন্দোলন করেছে, তারাই পরবর্তীতে মেধা ও যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছে। আর ছাত্রলীগের সভাপতি ৯ বছরে গ্রাজুয়েশন শেষ করেছে। এরমধ্যে ৫ বছরই তিনি ফেল করেছেন।’
সংহতি প্রকাশ করে রাশেদ খান বলেন, কোটা নিয়ে যে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, এটা কাদের ইশারায় হচ্ছে, সেটি গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবেই বোঝা যায়। আর গতকাল হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, সরকার চাইলে কোটা পরিবর্তন করতে পারবে। ২০১৮ সালে তো সরকারই পরিবর্তন করেছে। নির্বাহী বিভাগের সিদ্ধান্ত ও রাজপথের আন্দোলনের ফলাফলকে হাইকোর্টে নিয়ে যাওয়া বিচারবিভাগকে বিতর্কিত করার চেষ্টা বলে আমরা মনে করি। বর্তমানে শিক্ষার্থীরা যে আন্দোলন করছে, আমরা এই আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছি। একইসাথে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে যে পুলিশি মামলা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করার দাবি জানাচ্ছি।