গুলি-ককটেলসহ বহিরাগত এনে ছাত্রলীগের হামলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক বেশ কয়েকজন।
হামলার সময় হেলমেট পরে ছিল ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। সঙ্গে তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে। এমনকি, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়েও হামলা করে তারা। একজনকে গুলি বর্ষণ করতেও দেখা গেছে। এছাড়া ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এখনও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা অব্যাহত রেখেছে ছাত্রলীগ ও তাদের সঙ্গী বহিরাগতরা।
জানা গেছে, সোমবার বিকেল ৩টার পর বিজয় একাত্তর হলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের আবাসিক হলগুলোতে হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এরপর তারা কার্জন হল এলাকার আবাসিক হলগুলোতে হামলা চালায়।
বিকেল ৫টার দিকে প্রথমে শহীদুল্লাহ হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এসময় ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকায়ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
প্রথম দফার হামলার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের আশাপাশের থানা ও ওয়ার্ডগুলো থেকে বিপুল সংখ্যক বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে নিয়ে আসে ছাত্রলীগ। তাদের সহায়তায় পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও পুরো ক্যাম্পাসে তারা তাণ্ডব চালায়।
বেলা ৩টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা জেলা ছাত্রলীগ, ঢাকা কলেজ, ঢাবির পাশ্ববর্তী লালবাগ, হাজারীবাগ, কামরাঙ্গীর চর, পল্টন, শাহবাগ মোড় হয়ে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক, অছাত্ররা দোয়েল চত্বর ও শাহবাগ মোড় হয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এসময় তাদের হাতে হকিস্টিক, ক্রিকেট স্ট্যাম্প, জিআই পাইপ ও লাঠির মতো দেশীয় অস্ত্র দেখা যায়।
এসব বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের সময় দুটি প্রবেশ পথেই বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। পুলিশের সামনে দিয়ে তারা জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগান দিতে দিতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে ছাত্রলীগের সমাবেশে এসে মিলিত হয়।
৩টার পরপরই সম্মিলিতভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর তারা হামলা চালায় তারা। তাদের হামলায় অনেক শিক্ষার্থী আহত হন। ঢাকা মেডিকেলের ভর্তি রেজিস্টার অনুযায়ী ২২০ জন বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে একজন ছাত্রী আইসিইউতে এবং কয়েকজন ছাত্রকে এনআইসিইউতে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এর আগে, সকাল থেকেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ভণ্ডুল করতে পরিকল্পনা করে ছাত্রলীগ। ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে ছাত্রলীগের সাবেক অনেক নেতা সাধারণ শিক্ষার্থীদের হামলার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদেশের অপেক্ষা করছেন বলে উল্লেখ করেন।
এর মধ্যে চৌধুরী আনম নকিব আশরাফ নামের সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতা তার ফেসবুক পেজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ‘গ্রাম থেকে উঠে আসা ফকিরের বাচ্চা’ উল্লেখ করে তাদের শায়েস্তা করতে অস্ত্র হাতে তুলে নিতে প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি চান।
কোটা আন্দোলনকারীদের অভিযোগ আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে বহিরাগতদের নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে ছাত্রলীগ। হামলায় আহত অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
তবে বিষয়টি সম্পূর্ণ উল্টো হিসেবে দাবি করেছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, তারা (কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা) যখন হলে হামলা চালিয়েছে তখন ছাত্র-ছাত্রীরা বেরিয়ে এসে এই অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। আমরা খুবই অবাক হয়েছি আশপাশের এলাকা থেকেও মানুষজন এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়েছে।
তিনি বলেন, দলীয় কর্মীদের জন্য রাস্তায় নেমেছি, বিষয়টি এমন নয়। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে এবং মুক্তিযোদ্ধাদের চেতনার অংশ হিসেবে রাস্তায় নেমেছি। আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। তারা ছদ্মবেশে মেয়েদের ওপর হামলা করে অন্যদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় এ ধরনের অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
এর আগে, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রলীগকে কোটা বিরোধী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর অ্যাকশন নেয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, কোটার বিষয়টি রাজনৈতিক ভাবে মোকাবিলা করবে ছাত্রলীগ। এরপরই মূলত বিপুল সংখ্যক অছাত্র, শ্রমিক ও বহিরাগত যুবগলীগ নিয়ে হলে হলে বেপরোয়া হামলা চালানো হয়।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে পাশ্ববর্তী ইডেন কলেজেও।ছাত্রলীগের হামলায় ইডেনের অনেক ছাত্রী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন ক্যাম্পাসে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগ। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রবিবার রাতে হামলার পর সোমবার প্রক্টর অফিসের সামনেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ। এছাড়াও সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার খরব পাওয়া গেছে।