শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা: প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগসহ বিচারের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রে  শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদ

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা ও শতাধিক শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও নিহত হওয়ার ঘটনায় বিচার দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে ও মানববন্ধ করেছে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা।

এখন পর্যন্ত ১১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানববন্ধনের ছবি ও বিবৃতি আমাদের হাতে এসেছে। 

কোটা প্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তিপাক; তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার, কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার স্বৈরাচার; তুমি নও আমি নই, রাজাকার রাজাকার; ফ্রি বাংলাদেশ ফ্রম অটোক্রেসি, ব্রিং ডেমোক্রেসি; স্টুডেন্ট লাইফ ম্যাটারস, লাখো শহীদের রক্তে কেনা দেশটা কারো বাপের না; সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে; দাবায়ে রাখতে পারবানা; আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না; স্টেপডাউন হাসিনা ইত্যাদি লেখা সম্বলিত ব্যানার, প্ল্যাকার্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মানববন্ধ ও প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে।
গণমাধ্যমে পাঠানো ১১০টি বিবৃতির প্রায় সবগুলোতে জানানো হয়েছে, কোটা সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন শিক্ষার্থীদের ওপর যে হামলা চালানো হয়েছে এবং এখনো হামলা চালানো হচ্ছে তা্ সকল ধরনের বর্বরতাকে ছাড়িয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী এই ধরনের হামলার তীব্র নিন্দা্ জানায়। হামলার সঙ্গে যেসব পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব ও ছাত্রলীগসহ সরকারির দলের নেতা-কর্মী জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় দাবি জানান তারা। পাশাপাশি যারা নিহত হয়েছেন সেসব পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানানো হয়। 

গণমাধ্যমে পাঠানো বেশ কয়েকটি বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করা হয়।  এর আগে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে বিববৃতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে অধ্যয়নরত চার শতাধিক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী।

যুক্তরাষ্ট্রে থাকা পিএইচডি গবেষক মিনা ইসলাম (ছদ্মনাম) বলেন, “একদফা দাবি ছিল যে কোটা সংস্কার করতে হবে, সেটি এখন আর এক দফাতে নেই। বর্তমান বাংলাদেশের এই পরিস্থিতি জন্য আমি একমাত্র সরকারের স্বৈরাচারিতাকে কারণ হিসেবে দেখছি। যার ফলস্বরূপ দেশে অবস্থানরত ভাই-বোনদের হারাচ্ছি। আর দেশের বাহিরে আমরা যারা অবস্থান করছি তারা তাদের পরিবারদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না। রাত-বিরাতে পরিবারের মানুষদের নিয়ে শঙ্কায় থাকি কিন্তু কথা বলতে পারি না। এ কেমন সিদ্ধান্ত সরকারের? ইন্টারনেট বন্ধ রেখে এ কেমন স্বার্থচরিতার্থ করার চেষ্টায় আছে?”

এই পিএইচডি গবেষক বলেন, ”আমি দেশের বাহিরে অবস্থানরত একজন শিক্ষার্থী হিসেবে এটাই দাবি করছি আমার যে ভাই-বোনগুলো শহীদ হলো তার সুষ্ঠু বিচার চাই। অবিলম্বে, দেশের ইন্টারনেট সেবা চালু করার জোর দাবি জানাচ্ছি এবং এখন বাংলাদেশের মানুষের যে একটা দাবি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ সেটা আমারো দাবি।”

যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক হাসান মাহমুদ (ছদ্মনাম) বলেন, “গত তিনটি ভোট ডাকাতির নির্বাচন করে বর্তমান স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা বরাবরই তার বিরুদ্ধে যেকোনো মতামতকে দমন করেছে অস্ত্রের মাধ্যমে। আমাদের দেশের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যখন একটা খুবই যৌক্তিক কোটা সংস্কারের দাবি নিয়ে গেল সেখানেও এই স্বৈরশাসক গুলি চালাল। রাস্তায় পড়ে শহীদ হল আমাদের ছোটভাই বোন। এতগুলো মেধাবী শিক্ষার্থী শহীদ হওয়ার পর, এই আন্দোলন মোটেই আর কোটায় সীমাবদ্ধ নেই। এই আন্দোলন এখন স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলন। আর এই আন্দোলনে ইতোমধ্যেই সমস্ত বাংলাদেশের আপামরজনসাধারণ যোগ দিয়েছে। সবার দাবি একটাই খুনি, স্বৈরাচার, দূর্নীতিবাজ, ব্যাংকলুটেরা শেখ হাসিনার পদত্যাগ।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা যারা দেশের বাহিরে আছি, আমরা সবাই দেশের সাধারণ জনগণের সাথে একাত্বতা ঘোষণা করেছি এবং খুনি, স্বৈরশাসক, যার হাত আমার ভাইয়ের রক্তে রঞ্জিত তার পতনের আগ পর্যন্ত আমাদের সাধ্যমত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।”
যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত আছেন নাদিম শেখ (ছদ্মনাম)। তিনি বলেন, ”আন্দোলনের এ পর্যায়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতন চাই। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে সরকারের মদদপুষ্ট পেটুয়া বাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর যৌথ আক্রমণে এ পর্যন্ত কয়েকশ শিক্ষার্থী ও নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ মারা হয়েছে। এ আন্দোলন এখন শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এ আন্দোলনের এখন বাংলার সকল নিরীহ মানুষের যারা এই সরকারের নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে চায়।”

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রলীগসহ সরকারি দলের নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৮৭ জন নিহত হওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন এই সংখ্যাটি আরও অনেক বেশি। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। 

বিবৃতি দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো- ইউটা স্টেইট ইউনিভার্সিটি, কেনেসাও স্টেট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস এলপাসো, নটরডেম ইউনিভার্সিটি, বল স্টেইট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব আইওয়া, আইওয়া স্টেইট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড কলেজপার্ক, কলোরাডো স্টেইট ইউনিভার্সিটি, মনটানা স্টেইট ইউনিভার্সিটি, ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া ইউনিভার্সিটি, মিজৌরি স্টেইট ইউনিভার্সিটি, মিজৌরি সাইন্স এন্ড টেকনলজি ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব লুকজিয়ানা এট লাফায়েত, মিশিয়ান স্টেইট ইউনিভার্সিটি, ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব ওরেগন, ইউনিভার্সিটি অব ওকলাহোমা, ইউনিভার্সিটি অব মিসিসিপি, ইউনিভার্সিটি অব কেনটাকি, ইউনিভার্সিটি অব কেনসাস, টেক্সাস এ এন্ড এম, সাইক্রাস ইউনির্ভাসিটি, সেইন্ট লইস ইউনিভার্সিটি, ওহিহো ইউনিভার্সিটি, ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি ব্লুমিংটন, ফ্লোরিডা স্টেইট ইউনিভার্সিটি, দেলওয়ার ইউনিভার্সিটি, ডালাস ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব নিউম‍্যাক্সকো, ওয়েন স্টেইট ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস অস্টিন, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক‍্যারোলিনা, ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ড‍্যাকোটা, ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়স শিকাগো, ইউনিভার্সিটি অব আরকানসাস, ইউনিভার্সিটি অব অ‍্যারিজোনা, ইউনিভার্সিটি অব নিউইর্য়ক, রাটজার ইউনিভার্সিটি, আইওয়া স্টেইট ইউনিভার্সিটি, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি এবং ইউনিভার্সিটি অব টেনেসি।