কোটা সংস্কারকে কেন্দ্র করে গণহত্যার তদন্ত করবে 'জাতীয় গণতদন্ত কমিশন'

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সম্পর্কিত সাংবিধানিক, আইনি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি 'জাতীয় গণতদন্ত কমিশন' গঠন করা হয়েছে।

সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান কমিশনের যুগ্ম সদস্যসচিব তানজীমউদ্দিন খান ও মাহা মির্জা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পিটিয়ে সহিংসতার সূত্রপাত করা হয়। বিশেষ করে এই সহিংসতার প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ পথে নেমে এলে রংপুরে আবু সাঈদকে সরাসরি বুকে গুলি করা হয়। কিন্তু পুলিশ যখন মামলা করে, তখন সাধারণ ছাত্র ও জনগণকে দায়ী করা হয়। এতে গোটা তদন্তপ্রক্রিয়া নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মনে প্রশ্ন উঠেছে এবং এসব ঘটনায় সত্য উদ্‌ঘাটনের দাবি উঠেছে।’

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এ ঘটনায় সংবাদপত্রের হিসাবে অন্তত ২০৯ জনের মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশিত হলেও সরকারি হিসাবে তা ১৪৭ জন। নির্যাতন, গুলিবর্ষণ, গণগ্রেপ্তারসহ বিভিন্নভাবে আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হয়েছে যার ফলে সংবিধান, প্রচলিত আইন ও চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে।

এসব ঘটনার কারণ উদ্‌ঘাটন, সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের লক্ষ্যে দেশের শিক্ষক, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মী ও সাধারণ অভিভাবকদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কয়েকজন প্রথিতযশা ব্যক্তির সমন্বয়ে ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন’ গঠন করা হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. আব্দুল মতিনের নেতৃত্বে কমিশনের সদস্যরা হলেন- মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান, সাংবাদিক আবু সাইয়িদ খান, অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিন, সাংবাদিক আশরাফ কায়সার, আইনজীবী অনীক আর হক, অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান এবং লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা।

কমিশনের যুগ্ম সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বিচারপতি মো. আব্দুল মতিন ও সুলতানা কামাল, আর সদস্যসচিব হিসেবে যৌথভাবে কাজ করবেন অধ্যাপক তানজিমউদ্দিন খান ও মাহা মির্জা।

এ ছাড়া, এই গণতদন্ত কমিশনে উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তোবারক হোসেন, সারা হোসেন, বিশিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, অধ্যাপক সলিমুল্লাহ্ খান, শিক্ষক কাজী মাহফুজুল হক সুপন, আইনের অধ্যাপক সাইমুম রেজা তালুকদার, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রাশনা ইমাম ও জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১ জুলাই থেকে সংগঠিত বিভিন্ন সহিংসতা, নির্যাতন, হত্যা, গুলিবর্ষণ, হুমকি, মামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অডিও, ভিডিও, ফটোগ্রাফ ও লেখাসহ সব ধরনের তথ্য কমিশনের কাছে পাঠাতে আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় গণতদন্ত কমিশন। 

সোমবার রাতে আইনজীবী অনীক আর হক নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, কমিশন তার কাজে ‘যারা সাক্ষ্য দেবে তাদের গোপনীয়তা বজায় রাখবে’। এতে আরও বেশি মানুষ তাদের কাছে থাকা তথ্য সরবরাহ করতে এগিয়ে আসার ব্যাপারে উৎসাহিত হবে যেসব তথ্য গুরুত্বপূর্ণও হতে পারে।

'দু-একদিনের মধ্যে' কমিশনের টার্মস অব রেফারেন্স ও কল ফর এভিডেন্স প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।