বিমানবন্দরে আটকের সময় ছাত্রলীগ নেতার আকুতি!

বিমানবন্দরে আটকের সময় প্রভাবশালী ছাত্রলীগ নেতার আকুতি!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী নেতা ছিলেন তানভীর হাসান সৈকত। ছোটখাটো কাজ করতেও ব্যাপক মহড়া দিতেন। যখনই বেরোতেন তখন ২০ থেকে ২৫টি মোটরসাইকেলের কনভয় নিয়ে চলতেন।

ঢাবির প্রভাবশালী এই ছাত্রলীগ নেতা যখন বিমানবন্দরে আটক হন তখন ছিল না পোশাকের চাকচিক্য। ছিল না তাকে ঘিরে নেতাকর্মীদের মহড়া। বিমানবন্দরে যখন আটক হন তখন তাকে নিজেকে রক্ষার্থে বেশ আকুতি মিনতি করতে দেখা গেছে ঢাবি ছাত্রলীগের এই প্রভাবশালী নেতাকে।

মঙ্গলবার  হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় আটক হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত। এ সময় তার সঙ্গে থাকা ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজ মাহমুদও আটক হন।

ডিইউ আপডেট নামে একটি ফেসবুক পেজে সৈকতকে আটকের সময়ের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। ১৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে ঘিরে থাকা অফিসারদের উদ্দেশ্য করে সৈকত বলেন, ‘আমার তো কোনো দোষ নাই ভাই। অন্যের দোষ আমার ওপর চাপাবেন না। আমি জিন্দেগিতে কারও গায়ে একটা আঁচড়ও দেই নাই। জীবনেও কারও গায়ে হাত তুলিনি।’

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া আরেক ভিডিওতে দেখা যায়, তাকে ভালোভাবে চেকিং করছিল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। কোনো অবৈধ বেআইনি জিনিসপত্র বহন করছিলেন কি না তাও দেখা হচ্ছিল। এ সময় সৈকতকে ব্যাপক আকুতি মিনতি করতে দেখা যায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে। এক মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে সৈকতকে তুই-তোকারি করেও সম্বোধন করতে দেখা গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২০১৩-১৪ সেশনে থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হন তানভীর হাসান সৈকত। শুরুতে রাজনীতিতে ততটা সক্রিয় না থাকলেও পরে ব্যাপক সক্রিয় হন। সামাজিক কাজ করার পাশাপাশি নানা অপরাধমূলক কাজ করারও অন্তহীন অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।

অভিযোগ আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ার শুরুর দিক থেকেই তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নানা অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আলোচনায় আসেন করোনাকালে জনসেবা করে। ১২১ দিন ধরে তিনি খাদ্যবঞ্চিত মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করেন।

এছাড়া বিভিন্ন মানবিক কাজেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম সমস্যাসহ নানা ছাত্রসমস্যা সমাধানেও এগিয়ে আসেন।

২০২০ সালের আগস্ট মাসে ইউনেস্কো কর্তৃক রিয়েল লাইফ হিরো ঘোষিত হন তানভীর হাসান সৈকত। এরপরেই যেনো পাল্টে যায় তার ভাগ্য।

২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হন সৈকত। এরপরই ব্যাপক ক্ষমতার অপব্যবহার করতে থাকেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকেন্দ্রিক তিনি তার অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। তার প্রশ্রয়ে চুরি, ছিনতাই, মাদক, নারীদের হেনস্তাসহ নানা অপরাধমূলক কাজ হতো সেখানে।

দীর্ঘদিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘ছাত্রলীগমুক্ত’ হওয়ার পর ধীরে ধীরে মুখ খুলছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তারা ছাত্রলীগ নেতাদের অপরাধমূলক নানা কাজের কথা বলেন।

তানভীর হাসান সৈকত থাকতেন ঢাবির জসীমউদ্দীন হলে। ওই হলেন ২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হৃদয় ভূঁইয়া জানান, ‘ঢাবি ছাত্রলীগ সেক্রেটারি সৈকত ছিলেন আতঙ্কের আরেক নাম। নেতা হওয়ার আগে নিজে গণরুমের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম করলেও নেতা হওয়ার পর নিজেই গণরুম নামক টর্চার সেলের মদদ দেন। ঢাবি ক্যাম্পাসে যখনই তিনি বের হতেন জোর করে ছেলেদের বাধ্য করতেন প্রোগ্রামে যেতে। তিনি অকথ্য গালাগাল ও নির্যাতন করতেন। জুনিয়রদের জন্য তিনি ছিলেন আতঙ্কের নাম।’

হৃদয় ভূঁইয়া আরও বলেন- ‘তানভীর হাসান সৈকত একাই একটা রুম দখল করে রাখতেন, অথচ আমরা গণরুমে গাদাগাদি করে থাকতাম। ছাত্রনেতা হয়েও তিনি গাড়ি ব্যবহার করতেন। তার জীবনযাপন ছিল বিলাসবহুল।’