সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অধিকাংশই বানোয়াট

প্রতীকী ছবি

গেল ৫ আগস্ট ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর পর থেকে তিনি ভারতে আছেন। এই সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে হামলার অভিযোগ উঠছে; যা ঢালাওভাবে প্রচার করছে ভারতীয় কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। দ্য মিরর এশিয়ার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অধিকাংশ ঘটনার সত্যতা নেই। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এগুলো প্রচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন খোদ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।

একই কথা বলছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট। ফ্রন্টের দাবি, বাংলাদেশ এবং পার্শ্ববর্তী ভারতের কিছু গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে- ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলা ও সম্পদ লুট করা হচ্ছে; এগুলোকে মনগড়া এবং বিশেষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছে সংগঠনটির নেতারা।

দ্য মিরর এশিয়া সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনা নিজস্ব উদ্যোগে অনুসন্ধান করেছে। এতে যে চিত্র উঠে এসেছে, তাতে প্রচারিত তথ্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

বরিশাল জেলার আগৈলঝড়া উপজেলা সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত একটি এলাকা। পার্শ্ববর্তী মাদারীপুর জেলার কালকিনি উপজেলায়ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা বেশি। ৫ আগস্টের পর এসব এলাকায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার অভিযোগ তোলা হয়েছে। বাস্তবে স্থানীয় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এসব অভিযোগের অধিকাংশই গুজব।

আগৈলঝড়া উপজেলা কমপ্লেক্সের পাশেই ক্ষুদ্র ব্যবসা করেন বিষ্ণুপদ সাহা। দীর্ঘ ২৩ বছর ধরেই তিনি এই ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। ৪৬ বছর বয়সী বিষ্ণুর সাথে কথা হয় দ্য মিরর এশিয়ার ঢাকা প্রতিনিধির। তিনি অকপটে বললেন, হামলা-লুটের ঘটনা সঠিক নয়। কিছু সনাতন ধর্মাবলম্বী অবশ্য হুমকি পেয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এদের সকলেই ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা। আর মহিলা আওয়ামী লীগের দু-একজন আছেন, যারা ভয়েই আত্মগোপন করেছেন। হাসিনা সরকারের মেয়াদকালে এদের যন্ত্রণায় আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো দলের নেতাকর্মীরা বাড়িতে থাকতে পারেননি। অনেকেই ১০ বছর ১৫ বছর পর বাড়ি ফিরেছেন, এই আতঙ্কে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সেইসব আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়েছেন, উল্লেখ করার মতো কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি।

স্থানীয় বাজারের অপর এক সেলুন ব্যবসায়ী সম্ভু শীল দ্য মিরর এশিয়োকে বলেন, ‘আমাদের ওপর কোনো হামলাতো হয়নি। যারা এতদিন আওয়ামী লীগের হয়ে লুটপাট করেছে, তারাই পালিয়েছে।’

মাদারীপুরের কালকিনির অঙ্কুর দেবনাথ বলেন, যেসব সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্য এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে হামলা নির্যাতনের অভিযোগ করছেন, এতদিন তাদের নিপীড়নে আমরাও অতিষ্ঠ ছিলাম।

মুন্সিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য মিরর এশিয়াকে বলেন, আমাদের এমপি (সাবেক সংসদ সদস্য) মৃণাল কান্তির নিপীড়নে এতদিন ধরে যারা বাড়ি ছাড়া ছিলেন, মৃণাল কান্তির লোকজন সেইসব লোকের বিভিন্ন স্থাপনা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিল। তারা তাদের বাড়িতে ফিরেছেন। দখল হয়ে যাওয়া স্থাপনাগুলো তারা পুনরুদ্ধার করে নিচ্ছেন। এটাকে দখল বলা যাবে না।

পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর উপজেলা সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত। উপজেলার শ্রীরামকাঠি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান উত্তম মৈত্র দ্য মিরর এশিয়াকে বলেন, আমি নিজেও আওয়ামী লীগ করি। পালিয়ে যাওয়া এমপি শ ম রেজাউল করিম এবং তার ভাই উপজেলা চেয়ারম্যান নূরে আলম শাহিনের নিপীড়ন থেকে রেহাই পেল শ্রীরামকাঠি ইউনিয়নবাসী।

তিনি জানান, ৫ আগস্টের পর নাজিরপুর উপজেলার কোথাও হামলা হয়েছে বলে শুনিনি। তবে, স্থানীয় নিপীড়িত সাধারণ মানুষই শ ম রেজাউল করিম এবং শাহিনের দখল করা বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা করে উদ্ধার করেছে। আর শ ম রেজাউল করিমের কিছু কর্মী-সমর্থক ছদ্মবেশে বিচ্ছিন্ন কিছু হামলা করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে বলেও জানান উত্তম মৈত্র।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের সভাপতি বিজন কান্তি সরকার জানিয়েছেন, কল্যাণ ফ্রন্টের বিভিন্ন ইউনিটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে- এসব ঘটনার দিকে খেয়াল রাখতে। একই সঙ্গে দেশের বিভিন্ন এলাকার ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। দেশের বাইরে এবং ভেতরে এমন সব ঘটনার সংবাদ প্রচারের আগে আরো সচেতনভাবে যাচাইবাছাই করারও অনুরোধ করেছেন তিনি।