স্বৈরাচার হাসিনার প্রিয়ভাজন ইকবাল হাবিবের পেটে খাল, পাহাড়, নদী, টাকা

ইকবাল হাবিব। ফাইল ছবি

পরিবেশবাদী হিসেবে পরিচিত স্থপতি ইকবাল হাবিব। তবে এই পরিবেশবাদী তকমা কাজে লাগিয়ে করে গেছেন একের পর এক অপকর্ম। আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন পরিবেশ বিধ্বংসী প্রকল্পে পৃষ্ঠপোষকতা করে হন শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ। এসবের মাধ্যমে তিনি হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। তথাকথিত এই পরিবেশবাদীর কারণে খাল, পাহাড়, নদী- কোনটিরই ক্ষতিগ্রস্ত হতে বাকি নেই।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পছন্দের অনেক প্রকল্পের নকশা তৈরিতে হাবিব কোনো না কোনোভাবে জড়িত ছিলেন। এস আলম গ্রুপের সঙ্গেও ছিল তার সখ্য। অবৈধভাবে অর্থ আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করেছেন ইকবাল।

ইকবাল হাবিব বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সহ-সভাপতির দায়িত্বেও রয়েছেন এই স্থপতি। তার দুই সন্তান অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় পড়াশোনা করছেন।

বিভিন্ন পরিবেশ আইন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, নিজেকে পরিবেশবাদী দাবি করলেও স্থপতি ইকবাল হাবিব পরিবেশ আইন ভঙ্গের সঙ্গে জড়িত। বাংলাদেশ পানি আইন-২০১৩, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন আইন, পোর্ট অ্যাক্ট এবং পরিবেশ আইনসহ বিভিন্ন আইন ভঙ্গ করেছেন তিনি।

এর মধ্যে রয়েছে বেড়িবাঁধের জলাভূমি ভরাট করা। সাটেলাইট চিত্র যাচাই করে দেখা গেছে, ২০০৪ সালেও বেড়িবাঁধের বাইরের পুরো এলাকা ছিল তুরাগ নদীর অংশ। বছরের বিভিন্ন সময় সেখানে আসতো নদীর পানি। কিন্তু ওই বছর থেকে সেখানে শুরু হয় ভরাট। প্রথম ভরাট শুরু করে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি (বিইউ)। তাদের পাশাপাশি ভরাট করে গড়ে ওঠে ঢাকা উদ্যান, চাঁদ উদ্যানসহ বিভিন্ন হাউজিং সোসাইটি এবং স্থাপনা। ধীরে ধীরে তুরগতীর ছেড়ে খালও দখল করে নেওয়া হয়। আর এ পুরো প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন ইকবাল হাবিব।

স্থানীয়রা জানান, বেড়িবাঁধের বাইরের পুরো এলাকা নদীর আওতায় ছিল। বর্ষাকালে এখানে পানি আসত। জাহাজে করে বালু এনে এসব জায়গা ভরাট করা হয়। ২০০৪ সালের দিকে প্রথমে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ও ইউল্যাবের জায়গা দুটি ভরাট করা হয়। পরে তাদের দেখাদেখি ভরাট শুরু করে সাদিক এগ্রো এবং রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জায়গা দখল করে গড়ে তোলেন গানের স্কুল ‘সুরের ধারা’।

ইকবাল হাবিব আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কনসালটেন্সিতে (পরামর্শক) জড়িত ছিলেন। সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর বন্ধু তিনি। সেই সুবাদে বড় প্রকল্পের কনসালটেন্সির কাজ পান।

এছাড়া সাবেক পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের ৩০০ কোটি টাকার সাফারি পার্ক নির্মাণের কথা বলে ২৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে ইকবাল হাবিবের বিরুদ্ধে। হাজার কোটি টাকায় কল্যাণপুরে ওয়াটার পার্ক করতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামকে নিয়ে লন্ডনেও যান তিনি। অবৈধভাবে পাহাড় কেটে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উপদেশও দেন এ স্থপতি।

অন্যদিকে, অবৈধভাবে মৌলভীবাজারে পাহাড়ের মাথা কেটে সিলেটের নাসের রহমানের রিসোর্ট স্থাপন করা হয়ে তার নকশায়। এ ছাড়া জকিগঞ্জের স্থলবন্দর, সিলেটের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশনের সঙ্গে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। তবে তার নকশায় বিভিন্ন পরিবেশগত ত্রুটি দেখা দিয়েছে। লাঠিটিলা সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং পাথারিয়ার বড়লেখায় পরিবেশগত সমস্যায় ফেলেছে তার নকশা।

ঢাকা শহরেরর ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে (ডিএপি) প্লাবন অঞ্চলকে মিশ্র এলাকা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে এ পরিবেশবাদীর পরামর্শে। আবেদনের মাধ্যমে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করার পরার্মশ দিয়েছিলেন তিনি। তার পরার্মশে ঢাকা শহরের ধানমন্ডি লেকের নকশা পরিবর্তন করা হয়। এছাড়া তার কথাতেই ২১টি মাঠ পার্কে রূপান্তর করে সিটি করপোরেশন।

ঢাকার নতুন বাজার এলাকার সুতিভোলা খালের ১০০ ফিটের কাছে ১৮০ কোটি টাকায় সাইকেলিং প্রজেক্ট থেকে ইকবাল হাবিব ২৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। তার পরামর্শে বেইলি রোডের নার্সারি ধ্বংস করে সেখান ভবন নির্মাণ হয়েছে।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বারবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও স্থপতি ইকবাল হাবিব রিসিভ করেননি।