উদ্ধার শেষ না করেই রানা প্লাজা মিশিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা
ঢাকার সাভারে রানা প্লাজা ধসে হাজারো শ্রমিক হতাহতের ঘটনার এক যুগ হতে চললো। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলের সেই ঘটনায় হতাহত ও তাদের পরিবারের আর্তনাদ গোটা দেশ তো বটেই নাড়া দিয়েছিল বিশ্ববাসীকেও।
সাভার বাসস্ট্যান্ডের কাছে রানা প্লাজা নামে আটতলা ভবনটি সেদিন সকাল ৯টার দিকে ধসে পড়ে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন-আইএলও’র হিসাব মতে, ওই ঘটনায় ১১৩২ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন পোশাক শ্রমিক। আহত অবস্থায় উদ্ধার হন প্রায় আড়াই হাজার। যাদের অনেককেই আজীবন পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে।
এই ঘটনাটিকে বিশ্বের ভয়াবহতম ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্র্যাজেডি’ হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়ে থাকে। যার প্রভাবে সে সময় বাংলাদেশে শ্রমিকদের কর্ম পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।
রানা প্লাজায় উদ্ধারকাজে সার্বিক তদারকির দায়িত্বে ছিল সেনাবাহিনীর নবম পদাতিক ডিভিশন। যার প্রধান ছিলেন সাভারের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং বা জিওসি তৎকালীন মেজর জেনারেল চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে কারাগারে থাকা সাবেক এই এসএসএফ প্রধান মুক্তি পান গত ৬ আগস্ট। তার দাবি, রানা প্লাজায় নিহতের সংখ্যা কম দেখাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের বেসরকারি স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল যমুনা টেলিভিশনকে তিনি এমন তথ্য জানিয়েছেন। চৌধুরী হাসান সারওয়ার্দী বলেন, ‘উদ্ধারকাজের এক পর্যায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নির্দেশ দিলেন, অনেক তো উদ্ধার হলো এবার আটকে পড়াদের চাপা দিয়ে দাও।’
সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা জানান, উদ্ধারকাজ বন্ধ করতেও নির্দেশনা দেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তবে তা বন্ধ করতে রাজি হননি তিনি। শেখ হাসিনাকে তিনি বলেছিলেন, এটি অসম্ভব। শেখ হাসিনার নির্দেশেই উদ্ধারকাজ চালাচ্ছিলেন তিনি। প্রথমে তাকে জীবিত কিংবা মৃত শেষ ব্যক্তিটিকে উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত এই অভিযান চালানোরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
পরে শেখ হাসিনা তাকে বলেন, ‘স্পেট্রা গার্মেন্টস নামে একটি গার্মেন্টস বিএনপির আমলে ধ্বংস হয়েছিল এবং ওই ঘটনায় মানুষ চাপা দেওয়া হয়েছে কাউকে উদ্ধার করা হয়নি।’
শুধু রানা প্লাজা নয়, ২০১২ সালের নভেম্বর মাসে তাজরীন ফ্যাশন নামে একটি পোশাক কারখানায় আগুনে অঙ্গার হন ১১৭ পোশাক কর্মী। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছিল দুইশ’র মতো। হাসান সারওয়ার্দীর দাবি, তাজরীন ফ্যাশনের ঘটনার সময়ও তাকে আইনসিদ্ধ নয়-এমন নির্দেশনা দিয়েছেন সাবেক সরকারপ্রধান।
তিনি বলেন, প্রথমে সেনা সদরের মাধ্যমে এবং পরে প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেন এই লাশগুলোকে পুলিশের কাছে দিয়ে গুম করে ফেলতে হবে। আমি এর কারণ জিজ্ঞাসা করায় প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘গুম না করলে পরের দিন বিএনপি এবং খালেদা জিয়া লাশ নিয়ে মিছিল করবে। রাস্তাঘাট বন্ধ করে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করবে।’
এমন আরও অনৈতিক নির্দেশনা অমান্য করায় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের অপ্রিয় পাত্রে পরিণত হন বলে দাবি করেন ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের সাবেক এই কমান্ড্যান্ট।