জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলের তদন্ত শুরু মঙ্গলবার
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় জুলাই-আগস্টে হওয়া নৃশংসতার তদন্ত করতে ঢাকায় এসেছেন জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দলের দুই সদস্য। বাকি ছয় সদস্যের মধ্যে তিনজন মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় পৌঁছাবেন। আরও তিন সদস্যের চলতি সপ্তাহের মধ্যে ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও কূটনৈতিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, জাতিসংঘের তিন সদস্যের একটি অগ্রবর্তী দল ২২ থেকে ২৯ আগস্ট ঢাকা সফর করেছে। এখন জাতিসংঘের আট সদস্যের তথ্যানুসন্ধান দল জুলাই-আগস্টের নৃশংসতার তদন্ত করতে ঢাকায় আসছেন। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুই সদস্য ঢাকায় এসেছেন। মঙ্গলবার আসবেন আরও তিন সদস্য। বাকিদেরও এ সপ্তাহের মধ্যে ঢাকায় আসার কথা। তথ্যানুসন্ধান দলটি তদন্তের স্বার্থে মাসখানেক বাংলাদেশে অবস্থান করবে।
কূটনৈতিক সূত্র বলছে, মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্তের কাজ শুরু করবে জাতিসংঘের প্রতিনিধি দলটি। প্রাথমিকভাবে জাতিসংঘের তথ্যানুসন্ধান দল বাংলাদেশে চার সপ্তাহ অবস্থান করবে। তদন্তের জন্য প্রয়োজনে আরও কয়েকদিন তারা থাকতে পারেন। তথ্যানুসন্ধান দলটি গত জুলাই ও আগস্টের শুরুর দিকে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া মানবতাবিরোধী অপরাধ, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ ১৫ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্ত করবে। তদন্ত প্রতিবেদন আগামী নভেম্বরের শেষ সপ্তাহের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জমা দেওয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের আগে অন্তর্বর্তী সরকারকে দেওয়া হবে।
জানা গেছে, যেসব জায়গায় বিক্ষোভ, অসন্তোষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে সেসব জায়গায় যাবেন তদন্ত করতে যাবেন তথ্যানুসন্ধান দলের সদস্যরা। সাক্ষ্য গ্রহণ ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের কিছু এলাকা, চট্টগ্রাম, রংপুরসহ দেশের অন্তত আটটি বিভাগীয় ও জেলা শহর নির্বাচন করা হয়েছে।
তদন্তে ১৫ ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে– মানবতাবিরোধী অপরাধ, নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বিচারবহির্ভূত হত্যা, রাজনৈতিক ও বেসরকারি পক্ষগুলোর মাধ্যমে হত্যা ও নির্যাতন, জনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার নামে মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ, নিবর্তনমূলক আটক ও গ্রেপ্তার, গুম, ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখা, সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি।
প্রসঙ্গত, জুলাই-আগস্টের নৃশংসতার তদন্তের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রধান রুরি ম্যানগোভেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি অগ্রবর্তী দল ২২ থেকে ২৯ আগস্ট ঢাকা সফর করেছিল। প্রতিনিধি দলটি আট দিনের সফরে অন্তর্বর্তী সরকারের বেশ কয়েকজন উপদেষ্টা, সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, ছাত্র আন্দোলনের নেতা, বিক্ষোভ-সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের পাশাপাশি নাগরিক সমাজসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে।