পঞ্চগড় থেকে আরো বেশি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা
বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। দূর থেকে পর্বতশৃঙ্গটি যেন আকাশের বুকে ধূসর প্রকাণ্ড পাহাড়ের ওপর একগুচ্ছ রঙিন আঁচড়। কখনো তা শ্বেতশুভ্র, কখনো সূর্য-কমলা। বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা থেকে চলতি বছরও বেশ পরিষ্কারভাবে কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গ দেখা যাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখার জন্য অনেকেই এসব জেলায় ভিড় করছেন। ফেসবুকেও অনেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়ার ছবি পোস্ট করছেন।
ইমরান আলী নামের এক আলোকচিত্রী একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে লেখেন, ‘শরৎকালের কাঞ্চনজঙ্ঘা’। ছবিটি গত ০৮ সেপ্টেম্বর পঞ্চগড় থেকে তুলেছেন তিনি। শরতের কাশফুল ও কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতশৃঙ্গের দুর্দান্ত মিশেলে তোলো ছবিটি এরই মধ্যে অনেকেই শেয়ার করছেন।
পঞ্চগড়ের বাসিন্দা জবল-ই-রহমত বলেন, ‘প্রতি বছরই এই সময়ে আমাদের জেলা থেকে কম বেশি কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। কিন্তু এই বছরের মতো এতো পরিষ্কারভাবে অনেক বছর দেখা যায়নি।’
তিনি জানান, ‘জেলার সব প্রায় সব জায়গা থেকেই শুভ্র সাদা বরফে আচ্ছাদিত পর্বতমালাটি দেখা যাচ্ছে। এমনকি কোন কোন স্থান থেকে পর্বতমালার নীচের কয়েকটি শহরের ঘরবাড়ি, আলো, গাড়ি চলাচলও দেখা যাচ্ছে।’
কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্যটকদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় একটি আকর্ষণ। ভারতের অন্যতম শৈল শহর দার্জিলিং, ঘুম বা কালিম্পংয়ের প্রধান আকর্ষণ কাঞ্চনজঙ্ঘা। এটি ভারতের সিকিম ও নেপাল জুড়ে অবস্থিত। এটি পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ। এর উচ্চতা ৮,৫৮৬ মিটার বা ২৪, ১৬৯ ফুট।
কোথায়, কখন যাবেন
বাংলাদেশ থেকে এই কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পঞ্চগড় ভ্রমণে যেতে হবে। পঞ্চগড়ের অন্তর্গত তেঁতুলিয়া দেশের সর্ব উত্তরের উপজেলা। এই সদরের প্রাণকেন্দ্রে আছে একটি ঐতিহাসিক ডাকবাংলো। অনেক আগের এই স্থাপনাটির নির্মাণ কৌশল অনেকটা বিলেতি ভিক্টোরিয়ান ধাঁচের। কথিত আছে- এটি নির্মাণ করেছিলেন কুচবিহারের রাজা।
জেলা পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত ডাকবাংলোটির পাশে তেঁতুলিয়া উপজেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে গড়ে তোলা হয়েছে সুন্দর একটি পিকনিক স্পট। দুটি স্থাপনা একসঙ্গে দারুণ এক দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। সৌন্দর্যমণ্ডিত এ জায়গাটি দেখার জন্য ভূমি থেকে প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিটার উঁচুতে উঠতে হবে।
এর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে স্রোতস্বিনী মহানন্দা। নদীর ওপারে ভারত আর এপারে সুউচ্চ গড়ের ওপর এই ডাকবাংলো ও পিকনিক স্পটটি। এই ডাকবাংলোর বারান্দা থেকেই দেখা যায় দূরের দিগন্তরেখায় ভেসে আছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। এছাড়া তেঁতুলিয়ার অন্যান্য জায়গার মধ্যে বাংলাবান্ধা, বাইপাস, ভজনপুর করতোয়া সেতু, ভিতরগড় থেকেও দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘাকে।
রোদের আলোয় চিকচিক করতে থাকে কাঞ্চনজঙ্ঘার সেই মোহনীয় শোভা উপভোগ করার জন্য যেতে হবে শরতের শেষ কিংবা শীতের শুরুতেই। বিশেষ করে অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত সময়টাতে যাওয়া উত্তম। এই সময়টাতে আকাশ একদম পরিষ্কার থাকে। মেঘের সঙ্গে বরফে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার লুকোচুরি খেলার কোনো উপায় থাকে না।