শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গিয়ে শহিদ হন ছাত্রদল নেতা রাব্বি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মিছিলের সামনের সারিতে দাঁড়িয়েছিলেন রাব্বি। সেখানেই গুলিবিদ্ধ হয়ে শহিদ হন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মেহেদী হাসান রাব্বি।
রাব্বির ছোট ভাই ইদ্রিস হোসেন বিশ্বাস জানান, ৪ আগস্ট সকাল ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সাথে মিছিল করার জন্য শহরের পানান্দুয়ালী ব্যাপারিপাড়া মসজিদের সামনে অবস্থান নেয় স্থানীয় ছাত্র-জনতা। সমন্বয়কারীদের সাথে পুলিশের কথা হয়েছিল, তারা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে চৌরঙ্গী মোড় হয়ে আবার মসজিদের সামনে ফিরে আসবে। কথা মতো শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করছিল স্থানীয় ছাত্র-জনতা। কিন্তু মিছিল নিয়ে তারা ঢাকা রোড ব্রিজে উঠার পর সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীদের বাধার মুখে পড়ে। মিছিলে থাকা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে স্থানীয় জনতার সাথে রাব্বিও মিছিলের সামনে এগিয়ে আসেন। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলাকালে হেলমেট পরা ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা কর্মীরা মিছিলে গুলি চালায়। এ সময় রাব্বির বুকের নিচে পাঁজরে গুলি লাগে। আন্দোলনকারীরা তাকে উদ্ধার করে মাগুরা ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে চিকিৎসারত অবস্থায় দুপুর ১টার দিকে রাব্বি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
রাব্বির স্ত্রী রুমি খাতুন এবং ইদ্রিসের দাবি পুলিশ নয়, ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মীদের গুলিতেই রাব্বি প্রাণ হারিয়েছেন। এ সময় আন্দোলনে থাকা রাব্বির ভাতিজা খালিদ বিশ্বাসসহ অন্তত ২০জন আহত হন।
মেহেদী হাসান রাব্বি(৩৫) মাগুরা শহরের বরুনাতৈল নিবাসী ময়েন উদ্দিন বিশ্বাস ও সালেহা বেগমের পুত্র। ছয় ভাইবোনের মধ্যে রাব্বি চতুর্থ। তিনি মাগুরা সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করেন। জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা ছাড়াও এলাকার বিভিন্ন মানবিক ও সামাজিক কাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন। তিনি ‘মানবিক মাগুরা’ নামের একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন।
এছাড়াও ‘মাগুরা অনলাইন’ নামে তার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রাব্বি রাজনীতির পাশাপাশি ব্যবসা ও মানবিক কাজ নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতেন। এই ব্যবসা থেকে উপার্জিত টাকায় সংসারের ব্যয় নির্বাহের পাশাপাশি এলাকার দরিদ্র পরিবারকে সহায়তা করতেন।
এলাকাবাসী জানান, মেহেদী হাসান রাব্বি ‘মানবিক মাগুরা’ নামের একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এছাড়া তিনি স্থানীয় ‘তিতুমীর স্মৃতিসংঘ’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন। রাব্বি শহিদ হওয়ার পর তিতুমীর স্মৃতি সংঘের নাম পরিবর্তন করে ‘শহিদ রাব্বি স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ নামকরণ করা হয়েছে। রাজনীতি করলেও এলাকার বিভিন্ন মানবিক ও সমাজিক কাজে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন তিনি। ‘মানবিক মাগুরা’ সংগঠনের পক্ষ থেকে জেলার বিভিন্ন সময়ে মাগুরার নানা এলাকায় অসহায় ও দুস্থদের সহযোগিতা করতেন। এছাড়া করোনার সময়ে রাব্বি মাস্ক, স্যানিটাইজার, খাবার বিতরণসহ করোনা রোগী ও স্বজনদের সহযোগিতা করেছেন। ঈদের সময়েও অসহায়-দু:স্থ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এছাড়া এ সংগঠনের পক্ষ থেকে ২০২২ সালে সিলেটে বন্যা দুর্গতদের ত্রাণ সহয়তা নিয়ে সিলেট গিয়েছিলেন তিনি।
এবারেও বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় যে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছিল রাব্বি বেঁচে থাকলে হয়তো ত্রাণ সহায়তা নিয়ে ছুটে যেতেন বন্যা দুর্গত মানুষের কষ্ট দূর করার জন্য। এমনটিই মনে করেন এলাকাবাসী। তারা শহিদ রাব্বির বীরত্বের স্মৃতি ধরে রাখার উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।