এক চিঠিতে আটকা লাখো প্রশিক্ষণার্থীর সনদ

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের তুঘলকি সিদ্ধান্তে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর অ্যাসেসমেন্ট বা সনদায়ন প্রক্রিয়া। ফলে এসব শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এদিকে এ চিঠি বাতিলে আদালতে রিট করেছেন অ্যাডভোকেট খন্দকার হাসান শাহরিয়ার।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২৬ জুন জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালক (দক্ষতামান ও পাঠ্যক্রম) ড. জাহাঙ্গীর হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের স্বাভাবিক কার্যক্রম রহিত করা হয়। যা অন্যায় এবং বেআইনি বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।

নিয়মানুযায়ী, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড সংসদের আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। যাকে জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এনএসডিএ) বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত দিয়ে বন্ধ করা যায় না। এদিকে, অতি দ্রুত তাদের কার্যক্রম কেন চালু করা হবে না এই মর্মে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডকে লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হয়েছে। এতে বিবাদী করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা অধিদপ্তরের সচিব, আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর নোটিশটি পাঠিয়েছেন প্রফেশনাল কুকিং একাডেমির (পিসিএ) অধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম। নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমে ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ভোকেশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্কের (এনটিভিকিউএফ) আওতায় পূর্বের মতো অ্যাসেসমেন্ট গ্রহণ ও সনদ প্রদান কার্যক্রম শুরু
করার জন্য বলা হয়েছে। অন্যথায় কেন ৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে না তা পিসিএকে লিখিত ব্যাখ্যা প্রদান করবেন। উক্ত সময়ের পর যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের আওতাধীন এনএসডিএ’র কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজসে ওই চিঠিটি ইস্যু করা হয়। এর আগে, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই অনুষ্ঠিত জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পরিষদের প্রথম সভার ৬ নম্বর সিদ্ধান্ত এবং ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ অনুষ্ঠিত মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কার্যনির্বাহী সভার কার্যবিবরণী ২ (ক) অনুযায়ী বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আইনের মাধ্যমে দায়িত্বপ্রাপ্ত কাজ সম্পাদন থেকে বিরত করা হয়। ফলে দেশের যুব সমাজকে দক্ষ কর্মী হিসেবে গড়ে তোলার কার্যক্রম থেমে যায়।

জানা যায়, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় এনটিভিকিউএফ কোর্স সমূহ বর্তমানে ৭২৭ টি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বেসিক ট্রেড কোর্স পরিচালিত হচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সুইং মেশিন অপারেটন (এসএমও), ওয়েল্ডিং, বেসিক কম্পিউটার অপারেটর, গ্রাফিক্স ডিজাইন, মোবাইল সার্ভিসিং, ড্রাইভিং।

জানা গেছে, লক্ষাধিক তরুণ-তরুণী বেসিক ট্রেড কোর্স প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশেও পাড়ি জমিয়েছেন। যা থেকে দেশে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। তবে এনএসডির ওই চিঠির ফলে সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। গত ১০ বছরে ২০ লাখের বেশি প্রশিক্ষণার্থীকে সনদ দিয়েছে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

রাজধানীর ফার্মগেটে একটি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নেয়া একজন বলেন, ‘আমরা কোর্স শেষ করলেও অ্যাসেসমেন্টে বসতে পারিনি। কবে নাগাদ পরীক্ষা হবে তাও জানি না। সব মিলিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। দ্রুত এর সমাধান চাই।

অন্যদিকে, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কাজ শুরু করে ২০১৯ সালে। দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে তোলার নীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংস্থাটি গড়ে তোলা হয়েছে। এই সংস্থার চেয়ারপারসন হিসেবে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী। এর গভর্নিং বডিতে আছেন মন্ত্রী, সচিবসহ মোট ২৯ জন। গত পাঁচ বছরে এনএসডিএ প্রায় মাত্র ১১ হাজার প্রশিক্ষণার্থীকে সনদ দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রাকিব উল্লাহ বলেন, আমরা ইতিমধ্যে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীদের অ্যাসেসমেন্ট করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যা অনুমতির জন্য দুই একদিনের মধ্যেই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (কারিগরি ৩) সাদিকুল ইসলাম দ্য মিরর এশিয়াকে বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের শিক্ষার্থীদের ভোগান্তির বিষয় নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পত্র পেলে শিগগিরই এর সমাধানে ব্যবস্থা নেয়া হবে।