পলিথিন নিষিদ্ধের পক্ষে ক্রেতারা, বিকল্প নিয়ে শঙ্কা

পলিথিন ব্যাগের ওপর সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞায় সমর্থন জানিয়েছেন সুপারমার্কেটের গ্রাহকরা। তবে এর বিকল্প হিসেবে যেসব শপিং ব্যাগ ব্যবহার করতে হয় সেগুলোর জন্য তাদের ব্যয় বেড়েছে বলে জানালেন ক্রেতারা।

তারা মনে করেন, সুপারমার্কেটগুলোতে ছোট পণ্যের জন্য স্বল্পমূল্যের পরিবেশবান্ধব শপিং ব্যাগ বা বিনামূল্যের শপিং ব্যাগ সরবরাহ করা উচিত।

সুপারমার্কেটের কর্মীরাও জানান, তাদের বেশিরভাগ ভোক্তা পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধ করার পদক্ষেপকে প্রশংসা করেছেন। তবে স্বল্পসংখ্যক ক্রেতা শপিং ব্যাগের জন্য বাড়তি অর্থ দেওয়ার ব্যাপারে নেতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেন।

উল্লেখ্য, দেশে পর্যায়ক্রমে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে ১ অক্টোবর থেকে সুপার শপগুলোতে 'নো মোর পলিথিন ব্যাগ' নীতিমালা চালু করেছে সরকার।

এই নিষেধাজ্ঞা চালুর পর দিন ২ অক্টোবর শেওড়াপাড়ায় স্বপ্নের আউটলেটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতাদের বিভিন্ন দামে বিভিন্ন ধরনের পরিবেশবান্ধব শপিং ব্যাগ দিচ্ছেন তারা।

সেখানে কেনাকাটা করতে আসা শাহিনা সুলতানা বলেন, 'সুপারমার্কেটে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করার পদক্ষেপকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি কিন্তু নন-পলিথিন ব্যাগের দাম কিছুটা বেশি, যে কারণে আমাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে।’

বেসরকারি সংস্থা আরটিএম ইন্টারন্যাশনালের কর্মরত শাহিনা মনে করেন, সুপারমার্কেটগুলোতে ছোট পণ্যের জন্য স্বল্পমূল্যের শপিং ব্যাগ বা বিনামূল্যে শপিং ব্যাগ সরবরাহ করা উচিত, না হলে ক্রেতারা মুদি দোকান থেকেই কেনাকাটা করবে।

আউটলেটে আসা আরেক ক্রেতা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পীযূষ চন্দ্র শীল বলেন, পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা সঠিক সিদ্ধান্ত। পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে আমরা এটাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

স্বপ্ন আউটলেটের ব্যবস্থাপক শাওন ইসলাম জানান, তারা ৬ টাকা থেকে ১৬ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন দামে শপিং ব্যাগগুলো দিচ্ছেন। বেশিরভাগ ক্রেতা স্বেচ্ছায় পরিবেশবান্ধব ব্যাগ কিনলেও কেউ কেউ বলছেন, শপিং ব্যাগের জন্য বাড়তি অর্থ দিতে রাজি নন তারা।

তিনি আরও বলেন, ‘আউটলেটে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধের নীতিমালা বাস্তবায়নের পর আমরা বড় ধরনের কোনো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি না। এখন আমাদের গ্রাহকদের ছোট একটি অংশকে পরিবেশবান্ধব শপিং ব্যাগ কেনার ব্যাপারে রাজি করাতে হবে।’

চাল, মাছ ও ডালসহ বেশকিছু পণ্যের সঙ্গে তারা বিনামূল্যে কাগজের ব্যাগ সরবরাহ করেন বলে জানান শাওন ইসলাম।

শেওড়াপাড়ার আগোরার আউটলেটে কেনাকাটা করতে আসা সাদাত রাসেল বলেন, পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হওয়ায় পলিথিন ব্যাগ ২০-২৫ বছর আগেই নিষিদ্ধ করা উচিত ছিল।

এই বেসরকারি চাকরিজীবী আরও বলেন, ‘এটি একটি ভালো উদ্যোগ। আমরা শপিং ব্যাগের জন্য অর্থ দিতে রাজি। পরিবেশ রক্ষায় আমাদের নন-ডিসপোজেবল পলিথিন ও প্লাস্টিক পরিষ্কার করতে হবে। তাছাড়া এসব জিনিস স্বাস্থ্যসম্মত নয়।’

আগোরা আউটলেটের ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন জীবন বলেন, টাকা দিয়ে শপিং ব্যাগ কেনায় অভ্যস্ত হতে ক্রেতাদের আরও সময় লাগবে। সবক্ষেত্রে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হলে পরিবেশবান্ধব শপিং ব্যাগের মূল্য পরিশোধে জনগণের মধ্যে ইতিবাচক মানসিকতা গড়ে উঠবে।

গত ৯ সেপ্টেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, ১ অক্টোবর থেকে দেশের সব সুপারশপে পলিথিন ও পলি-প্রোপিলিন শপিং ব্যাগ ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হবে।

পরে গত মঙ্গলবার পরিবেশ উপদেষ্টা জানান, দেশে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করতে সরকার পলিথিনের উৎপাদন, মজুদ, পরিবহন, বিপণন ও ব্যবহার নিষিদ্ধ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে।

আগামী ১ নভেম্বর থেকে দেশের সব কাঁচাবাজারে দেশব্যাপী পলিথিনবিরোধী অভিযান শুরু হবে।