বদলে গেছে সচিবালয়
প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ সচিবালয়। পতিত শেখ হাসিনা সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীরা বসতেন এখানে। দেশ ও দল পরিচালনা করতেন নির্ধারিত মন্ত্রণালয়ের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসেই। প্রতিদিন তাদের দপ্তরে আসতেন হাজারো দর্শনার্থী; যাদের বেশিরভাগই ছিলেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। বাদ যেতেন না ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও সেচ্ছাসেবক লীগ নেতারাও। গাড়ি প্রবেশের স্টিকার না থাকলেও তাদের কারো কারো গাড়ির সামনে থাকতো সরকারি স্টিকার। পাস ছাড়াই প্রবেশ করতেন সচিবালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা উপ-পুলিশ কমিশনারের (ডিসি) নির্দেশে। দর্শনার্থী আর গাড়ির চাপে নিরাপত্তা কর্মীদের হিমশিম খেতে দেখা যেত। তবে সচিবালয়ে নেই আগের সেই দৃশপট। বদলে যাওয়া সচিবালয়ে ফিরেছে শৃঙ্খলা। নেই গাড়ির জটও। নেই তদবিরবাজদের তৎপরতা।
ছাত্র-জনতার অভূত্থানে স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চরম নিষ্ক্রিয়তায় দেশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছিল অস্থিরতা। তবে সেনাবাহিনী এবং শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপে সৃষ্টি হয়নি বিশৃঙ্খলা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টারত কুশীলবদের লক্ষ ছিল প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়। শুধু অস্থিরতা সৃষ্টিই নয়, টার্গেট ছিল সচিবালয়ের মতো সরকারি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ধ্বস নামানো। নড়বড়ে নিরাপত্তা বলয় প্রধান ফটক হয়ে পড়েছিল অরক্ষিত। কখনো শিক্ষার্থী, কখনো নার্স, কখনো গ্রাম পুলিশ আবার কখনো আনসার বাহিনীর সাথে আওয়ামী লীগের কর্মীরাও গেট ঠেলে ঢুকে পড়েছিল। তবে এই অবস্থান বেশিদিন থাকেনি। একটু পরে হলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে সচিবালয়ের প্রশাসন অর্থাৎ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।
মঙ্গলবার সরেজমিনে সচিবালয়ে দেখা যায়, বদলে যাওয়া নতুন এক সচিবালয়। যেখানে ছিল না দর্শনার্থীদের ভিড়, ছিল না গাড়ির উপচেপড়া জট। শৃঙ্খলায় কাজের পরিবেশ ফিরেছে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে। বিষয়টি নিয়ে সচিবালয়ে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, তদবির পার্টির যন্ত্রণা থেকে মুক্ত আছেন বেশ কিছু দিন ধরে। এমন পরিবেশ সচিবালয়ের কাজের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে কথা বলে জানা যায়, আগের মতো এখন আর যে কোন কর্মকর্তাই সচিবালয়ে প্রবেশে দর্শনার্থী পাস ইস্যু করতে পারেন না। আগে অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব, উপ সচিব পাস দিতে পারতেন। এখন সে নিয়ম আর নেই। দর্শনার্থী কমানোর পাশাপাশি তদবিরবাজের প্রবেশ বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ।
বদলে যাওয়া সচিবালয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব আশরাফুর রহমান বলেন, ‘তদবিরবাজের প্রবেশ বন্ধ এবং সচিবালয়ে কাজের পরিবেশ ও শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর অবস্থানে আছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে, সচিবালয়ে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যরা আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন। এজন্যই আসলে বদলে গেছে সচিবালয়ের পরিবেশ।’
তিনি বলেন, ‘এজন্য কখনো কখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কথা শুনতে হচ্ছে, গালি খেতে হচ্ছে। তবে তারা হাল ছাড়তে নারাজ।’