পূজা কমিটির নেতাসহ ৬ গায়কের বিরুদ্ধে মামলা
চট্টগ্রামে পূজা মণ্ডপে ইসলামি গান গাওয়ার ঘটনায় পূজা উদযাপন কমিটির এক নেতা ও ছয় গায়কের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলাটি করেছেন কমিটির অর্থ সম্পাদক সুকান্ত মহাজন।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্ত, গান পরিবশেন করা চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির সদস্য শহীদুল করিম, মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ ইকবাল, রনি, গোলাম মোস্তফা ও মোহাম্মদ মামুন। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে আটক হওয়া শহীদুল করিম ও মোহাম্মদ নুরুল ইসলামকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কোতোয়ালি থানার ওসি মুহাম্মদ ফজলুল কাদের চৌধুরী।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে। মামলায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরির চেষ্টার অভিযোগ করা হয়েছে।
একইদিন বিকেলে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দফতর সম্পাদক শচীন্দ্র নাথ বাড়ৈর সই করা এক বিবৃতিতে পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি লায়ন আশীষ ভট্টাচার্য ও সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেনকে তাদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। একইসঙ্গে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তকে বহিষ্কার করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, পরিষদের সভাপতি শ্রী বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক শ্রী সন্তোষ শর্মা এক যৌথ বিবৃতিতে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় ব্যর্থতার অভিযোগে মহানগর কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এই অবাঞ্চিত ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ অত্যন্ত বেদনাহত হয়েছেন। পূজা পরিষদ এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে পূজা উদযাপন পরিষদ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছে- শারদীয় দুর্গাপূজা যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয় সেজন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করেছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নগরের রহমতগঞ্জের জেএমসেন হলে ঘটনাটি ঘটে। চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির ছয় সদস্য অনুষ্ঠানে দুটি গান পরিবেশন করেন। এর পরপরই গানের খণ্ডিতাংশের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দেয়। পরে রাতেই অভিযান চালিয়ে ছয়জনের দুজনকে আটক করে পুলিশ।
তাদের আটকের পর পুলিশ জানায়, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সজল দত্তের অনুরোধেই পূজা মণ্ডপে গান করতে আসে চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি নামে ঐ সংগঠন।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১১টায় নগরের দামপাড়া পুলিশ লাইনসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের ডিসি (অপরাধ ও অভিযান) রইছ উদ্দিন বলেন, পূজা মণ্ডপে গান পরিবেশন করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত ও গোলমাল সৃষ্টির ঘটনায় নুরুল ইসলাম ও শহীদুল করিম নামে দুজনকে আটক করা হয়েছে। তারা দুজন পৃথক দুটি মাদরাসার শিক্ষক।
তিনি বলেন, পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সজল দত্ত চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমির একদল শিল্পীকে অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করার জন্য অনুরোধ করেন। তার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ঐ শিল্পী গোষ্ঠির সদস্য শহীদুল করিম, মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, আব্দুল্লাহ ইকবাল, রনি, গোলাম মোস্তফা ও মোহাম্মদ মামুন পূজার অনুষ্ঠানে আসেন এবং একটি ইসলামিক গজল ও একটি বাউল গান পরিবেশ করেন। এরমধ্যে একটি গানের ভাষায় শব্দ চয়ন সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা দুটি গান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়াসহ উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এরপর রাতেই নগরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করা হয়।