সরকারী খাস জমি উদ্ধার করে তৈরি হবে খেলার মাঠ: ইউএনও
সরকারী খাস জমি উদ্ধার করে খেলার মাঠ তৈরী করা হবে বলে জানিয়েছেন নবীনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর ফরহাদ শামিম।
বৃহস্পতিবার, ১০ অক্টোবর খারঘর গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
খারঘর গণকবর সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি সিনিয়র সাংবাদিক কাজী ইমরুল কবীর সুমনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তানভীর ফরহাদ শামিম এ কথা জানান।
এলাকাবাসীর পক্ষে সভাপতির কিছু দাবী দাওয়ার প্রেক্ষিতে ইউএনও বলেন, খারঘর গণকবরের মুক্তিযুদ্ধের ৭১ স্মৃতিসৌধের কাছে আসার জন্য রাস্তাটি আরো বড় করা জরুরী। সেটা কীভাবে করা সম্ভব আমরা তা ভেবে দেখবো। গণকবরের সাইডওয়াল ভেঙে গেছে। কবরগুলো রক্ষার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে। এখানে একটি কমপ্লেক্স ও পাবলিক লাইব্রেরিও হবে।
তিনি বলেন, বড়াইল খারঘরের সরকারি খাস জমিগুলো উদ্ধার করে এলাকাবাসী চাইলে সেগুলো শিশু কিশোরদের জন্য খেলার মাঠ তৈরি করা হবে। সরকারী জমিগুলো যেন জনগণ ব্যবহার করতে অগ্রাধিকার পায় তার জন্য তিনি সবার সহযোগিতা কামনা করেন। বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (মো. জাকির হোসেন জাকির) বড়াইল মৌজার ৪৩ শতক খাস জমি দখল করেছেন (বিল্ডিং বানিয়েছে)।
নবীনগরের এসিল্যান্ড নিজে গিয়ে সেখানে লাল নিশানা উড়িয়েছেন। জেলা প্রশাসকের নোটিশ লাগিয়েছেন। সে জায়গা দখলমুক্ত হলে এলাকাবাসী চাইলে সেখানে আমরা শিশু কিশোরদের জন্য খেলার মাঠ তৈরি করতে পারি। আমার কাছে দু’টি প্রস্তাব এসেছে। যেটি জনস্বার্থে বেশি কার্যকর সেটাই আমরা গ্রহণ করবো। বড়াইল ইউনিয়নের রাস্তাগুলোর চৌহদ্দি বা ডিমার্গেশন মার্ক ঠিক করা হবে। রাস্তা মাপার পর সে জায়গাগুলো যেন আবার কেউ দখল করতে না পারে সেজন্য এলাকাবাসীর সহযোগিতা চান তিনি।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য তকদির হোসেন মোহাম্মদ জসিম এই অনুষ্ঠানটিকে আরো বৃহত্তর পরিসরে এবং সকালের পরিবর্তে বিকালের দিকে আয়োজন করার পরামর্শ দেন।
খারঘর গণকবর সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দীন আহমেদ জীবনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিন।
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর চিকিৎসক মেজর ডা. আসাদুজ্জামান রিফাত, নবীনগর থানার অফিসার ইন-চার্জ (তদন্ত) সজল কান্তি দাস, টানা ১০ বছর স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত জিমন্যাস্ট, জাতীয় দলের কোচ জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদ মোহাম্মদ কাওসার, নবীনগর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু কামাল খন্দকার, নবীনগর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি এডভোকেট রেজাউল করিম সবুজ, নবীনগর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল আলম সোরাফ, বাংলা টিভি নবীনগর প্রতিনিধি পিয়াল হাসান রিয়াজ, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সহ সভাপতি মো. তোফাজ্জল হোসেন পলাশ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জাহাঙ্গীর আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মোখলেছুর রহমান, বড়াইল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আবুল বাশার, বড়াইল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন, বড়াইলের কতা’র এডমিন মো. সুমন সরকার, গোসাইপুর বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনিসুজ্জামান রাজ, কোষাধ্যক্ষ নাছির উদ্দীন, বিশিষ্ট সমাজ সেবক হাজী রমজান ব্যাপারী। এর আগে নবীনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর ফরহাদ শামিম ও নবীনগর থানার অফিসার ইন-চার্জ (তদন্ত) সজল কান্তি দাস এর উদ্যোগে ৭১ শহিদ স্মৃতি সৌধে পুস্পস্তবক অর্পন করা হয়।
আলোচনা সভা শেষে শহিদদের স্মরণে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন এবং উপস্থিত সবাইকে আপ্যায়ন করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ১০ই অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার ১নং ইউনিয়ন বড়াইল (তৎকালীন সাদেকপুর পশ্চিম ইউনিয়ন) এর খারঘর গ্রামে পাকিস্তানী হানদারদের হামলায় ৪৩ জন মুসলিম গ্রামবাসী ও মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। এর মধ্যে এখানে দু’টি গণকবরে তাদের সমাহিত করা হয়।
এর আগে ১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল বড়াইল বাজারের উত্তরে হিন্দুপাড়া থেকে ৮ জন সনাতন ধর্মী (হিন্দু) গ্রামবাসীকে গুম করে স্থানীয় রাজাকার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিহারিরা। সেই হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে পাশাপাশি ২ গ্রাম থেকে ৫১ জন গ্রামবাসী শহিদ, নিহত ও গুম হন। স্বাধীনতা যুদ্ধে ‘খারঘর গনহত্যা’ বাংলাদেশে ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বিশেষ করে একটি এলাকায় একটি গ্রামে ছিল সবচেয়ে বেশী মুসলিম ধর্মাবলম্বী মানুষ হত্যার ঘটনা। খারঘরে মুক্তিযুদ্ধের ৭১ স্মৃতিসৌধের পাশে এই গণকবরে এখনো এই শহিদরা চিরতরে ঘুমিয়ে আছেন। মুক্তিযুদ্ধে বড়াইল ইউনিয়ন এর ৬৬ জন মানুষ শহিদ ও নিহত হন। নিখোঁজ হন ৮ জন। ক্ষতিগ্রস্থ ঘরবাড়ি ছিল ১৫৬টি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলায় সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের ধর্মতীর্থ নৌঘাটে একটি বধ্যভূমি আছে। সেখানে মুক্তিযুদ্ধের সময় ৪৬ জনকে হত্যা করা হয় বলে এলাকাবাসী দাবি করেন। এর বেশীরভাগই ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী।