‘আয়নাঘর’: বাংলাদেশের গোপন আন্ডারগ্রাউন্ড কারাগার

‘আয়নাঘর’: বাংলাদেশের গোপন আন্ডারগ্রাউন্ড কারাগার

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের ফলে ১৭০ মিলিয়ন মানুষের দেশকে নতুন স্বপ্ন দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। এই গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অতীতের সবচেয়ে বড় অপব্যবহারের ওপর থেকে পর্দা সরিয়ে ফেলেছে। একসময় জাতির গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার মূর্তপ্রতীক শেখ হাসিনা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃত্ববাদ ও দমন-পীড়নের পথে চলে যান। তিনি সামনে আসা যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় রাষ্ট্রযন্ত্রকে হাতিয়ার করেন, যার মধ্যে জোরপূর্বক গুম অন্তর্ভুক্ত ছিল। তার নিরাপত্তা বাহিনী দ্বারা অপহরণ হওয়া শত শত মানুষ আজ কোনো চিহ্ন ছাড়া অদৃশ্য হয়ে গেছে এবং অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক কার্যক্রমের জন্য তাদের টার্গেট করা হয়েছে। যেমন— বিরোধী সমাবেশ আয়োজন, প্রতিবাদে রাস্তা অবরোধ করা বা সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনামূলক বার্তা পোস্ট করা। নিহতদের মধ্যে অনেককে হত্যা করে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং বাকিদের একটি আন্ডারগ্রাউন্ড মিলিটারি ডিটেনশন সেন্টারে দৃষ্টির বাইরে রাখা হয়েছে, যেখানে তারা ধীরে ধীরে উন্মাদ হয়ে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। সেই কারাগারের কোড নাম ছিল— ‘হাউস অফ মিররস’ বা ‘আয়নাঘর’।

দ্য টাইমস আগস্টে মুক্তি পাওয়া অন্য একজন বন্দিসহ দুই ডজনেরও বেশি লোকের সাক্ষাৎকার নিয়ে হাসিনার গোপন ডেরার গল্প প্রকাশ করেছে। সেইসঙ্গে বর্তমান এবং সাবেক সরকারি কর্মকর্তারা, নিরাপত্তা প্রধান, কূটনীতিক এবং মানবাধিকার কর্মীরাও মুখ খুলেছেন, যাদের একসময় নীরব করে রাখা হয়েছিল।

এটি ধ্বংস হয়ে যাওয়া পরিবারগুলোর একটি গল্প— অগাস্টে মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে একজন বারবার সংজ্ঞা হারাচ্ছিলেন যখন জানতে পারেন যে তাকে মৃত ধরে নিয়ে তার স্ত্রী পুনরায় বিয়ে করেছে। আরেকজন জানতে পারলেন যে তার বাবা তার নিখোঁজ হওয়ার সূত্র খুঁজতে গিয়ে বছর বছর দ্বারে দ্বারে ঘুরে অবশেষে মৃত্যুবরণ করেছেন। যাদের বহু মানুষ নিখোঁজ হয়ে গেছে, তাদের পরিবার এখনও অপেক্ষায় রয়েছে, যদি তাদের কোনো প্রিয়জন ফিরে আসে। সরকারি দমন-পীড়ন এবং ভীতি সত্ত্বেও তারা আশা ছাড়েননি। তারা চান, হয় তাদের ছেলে বা ভাই যারা নিখোঁজ, তাদের ফিরিয়ে আনা হোক, অথবা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হোক।

তাসনিম শিপ্রা বলছেন, ‘কী হয়েছে, আমরা সবটা জানতে চাই?’; যার চাচা বেলাল হোসেন ২০১৩ সালে নিখোঁজ হন।

শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে যখন ক্ষমতায় ফিরে আসেন, তখন তিনি একেবারে পরিবর্তিত এক নেতা হিসেবে বাবার মতো কঠোর হাতে দেশের নিয়ন্ত্রণ নেন। দমন-পীড়ন অভিযানে বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীকে নিয়োগ দেন এবং বিরোধীদের নির্মূল করতে অভিজাত পুলিশ ও আধাসামরিক ইউনিটগুলোকে ব্যবহার করেন। এর মধ্যে একটি হলো র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, যা মার্কিন ও ব্রিটিশ প্রশিক্ষণ নিয়ে সন্ত্রাসবাদবিরোধী স্কোয়াড হিসেবে কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, হাসিনা এটিকে রূপান্তরিত করেন ‘ইন-হাউস ডেথ স্কোয়াড’ হিসেবে।

আদালতের নথি অনুসারে, হাসিনার দলের একজন কর্মকর্তা প্রতিপক্ষকে সরিয়ে দিতে ব্যাটালিয়নের সদস্যদের অর্থ প্রদান করেছিলেন। আদালতের নথি অনুযায়ী, যখন তারা দিনের আলোতে লোকটিকে তুলতে গিয়েছিল তখন সাক্ষী মেটাতে আরও সাতজনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তারা। মৃতদেহগুলো নদীতে ডুবিয়ে দিতে তাদের পেটে ছিদ্র করে দেওয়া হয়েছিল এবং দেহের সাথে ইটের বস্তা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। এক সপ্তাহ পরে মৃতদেহগুলো নদীর ওপর ভাসতে দেখা যায়, যা হাসিনা সরকারের বর্বরতার জ্বলন্ত উদাহরণ।

দীর্ঘমেয়াদী বন্দিদের আটকে রাখার ভার সামরিক গোয়েন্দা শাখার কাছে ন্যস্ত করা হয়েছিল। মানবাধিকার সংস্থাগুলির অনুমান অনুসারে, ২০০৯ থেকে এই বছর পর্যন্ত ৭০০ জনেরও বেশি লোককে জোর করে গুম করা হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত অনেক বেশি। কারণ, ঘন ঘন সরকারি হয়রানি তাদের পক্ষে মামলার সম্পূর্ণ তথ্য নথিভুক্ত করার কাজ কঠিন করে তুলেছিল। পরিচিত নিখোঁজদের মধ্যে প্রায় ৪৫০ জন পরে ফিরে আসে। অধিকার গ্রুপগুলির দাবি তাদের নিখোঁজ করার  কয়েক মাস পরে ছেড়ে দেয়া হয় এবং মুখ বন্ধ রাখার  নির্দেশ দেয়া হয়। ৮০টি পরিবার শুধুমাত্র তাদের আপনজনের মৃতদেহ হাতে পেয়েছিল, প্রায় ১৫০ ভুক্তভোগীরই হিসাব পাওয়া যায়নি।

আয়নাঘরের অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রটি ছিল কঠোরভাবে পরিচালিত। সেখানে বন্দিদের মেডিকেল চেকআপের পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্যবস্থা ছিল। চার থেকে ছয় মাস অন্তর বন্দিদের চুল কাটা হতো। আয়নাঘরের লক্ষ্য ছিল বন্দিদের শারীরিক অত্যাচার, মানসিক অত্যাচার করা।

প্রাক্তন বন্দিদের মধ্যে তিনজন নিউ ইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, আয়নাঘরে ছিল লম্বা করিডোর। সেখানে অর্ধডজন কক্ষ থাকলেও একটি অপরের থেকে বেশ খানিকটা দূরে ছিল। প্রতিটি প্রান্তে শৌচাগার ছিল, একটি দাঁড়ানো এবং একটি বসা। প্রতিটি কক্ষে একটি বড় এক্সজস্ট ফ্যান ছিল যাতে আওয়াজ বাইরে না যায়। কাতার এবং ভিয়েতনামে সাবেক বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত মারুফ জামান ২০১৯ সালে পুনরায় আবির্ভূত হওয়ার আগে কারাগারে ৪৬৭ দিন কাটিয়েছেন। তিনি গুগল ম্যাপ খোলেন এবং ঢাকার একটি সামরিক গ্যারিসনে জুম ইন করেন, যে অংশটিকে এখন আয়নাঘর হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই কোড নামটি প্রথম প্রকাশ করেছিল নেত্র নিউজ, যা প্রবাস থেকে পরিচালিত হয়।

তিনি এবং অন্যান্য বন্দিরা জানতেন যে, তারা সামরিক ঘাঁটিতে ছিলেন যেখান থেকে সকালে সেনাদের প্যারেড শুনতে পাওয়া যেত। তারা জানত যে, অফিসারদের আবাসিক কোয়ার্টার এই আয়নাঘরের কাছাকাছিই ছিল, যেখানে মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে। জামান বলছেন, ‘প্রতি শুক্রবার আমি শিশুদের গান শুনতে পেতাম।’

শেখ হাসিনার কট্টর সমালোচক জামান বলছেন, ‘আমাকে ভারতে থাকার বিষয়টি নিয়ে বারবার জিজ্ঞাসা করা হচ্ছিল এবং মুখে বারবার ঘুষি মেরে দুটি দাঁত ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। আমার সমস্ত সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট এবং ব্লগ মুদ্রণ করে এনে নির্দিষ্ট অনুচ্ছেদ ধরে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।’

আবদুল্লাহিল আমান আজমি একজন সাবেক সেনা জেনারেল যাকে স্পষ্টতই দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কারণ, তার বাবা একজন সিনিয়র ইসলামিক নেতা ছিলেন। আগস্টে সামরিক কারাগার থেকে মুক্তি পান আজমি। আট বছরের বন্দি জীবনে তাকে ৪১ হাজার বার চোখ বেঁধে এবং হাতকড়া পরানো হয়েছিল। আজমি বলছেন, ‘আমি সৃষ্টিকর্তার তৈরি আকাশ, সূর্য, চাঁদ, গাছ দীর্ঘদিন দেখিনি। একবার একটা ছোট ঘুলঘুলি দিয়ে কিছুটা সূর্যালোক দেখার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তারা সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে জানতে পেরে সেগুলো বন্ধ করে দেয়।’

সাবেক সামরিক অফিসার আজমি বলছেন, কখনও কখনও তার চোখ-নাক এতটাই শক্ত করে বাঁধা হতো যে শ্বাস নিতে কষ্ট হতো। তিনি চোখের ব্যথা, দাঁতের ক্ষয় এবং ত্বকের ক্ষতে ভুগছিলেন। তার থেকেও মনে সবসময় ভয় কাজ করত; এই বুঝি কোনো রাতে তাকে বের করে নিয়ে যাওয়া হতে পারে, হত্যা করে দেহ কোথাও ফেলে দিতে পারেন রক্ষীরা। পরের দিন সকালের সংবাদপত্রে শুধু একটি খবর পাওয়া যাবে তিনি পুলিশের সাথে ‘ক্রসফায়ারে’ মারা গেছেন। আজমি রক্ষীদের কাছে শুধু একটি প্রার্থনা করেছিলেন, ‘দয়া করে বিড়াল এবং কুকুরকে আমার মৃতদেহ খেতে দেবেন না। দয়া করে আমার লাশ আমার পরিবার, প্রিয়জনদের কাছে পাঠিয়ে দেবেন। এমন কোনো ভাষা নেই যেখানে আমি আমার অপমান ও যন্ত্রণা বর্ণনা করতে পারব।’

যখন জেলাররা ভোরের আগেই কারাগারে ঢুকে পড়ল, বন্দিটি ভেবেছিল তার জীবন এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। আট বছর ধরে তাকে একটি অন্ধকার, জানালাহীন আন্ডারগ্রাউন্ড জেলে বন্দি রাখা হয়েছিল, যেখানে রাতের কোন শেষ নেই। জেলের রক্ষীরা তাকে প্রার্থনা শেষ করতে বলল। তারপর তার চোখ বন্ধ করে ধাতব হাতকড়া খুলে দিল এবং তার কবজি কাপড় দিয়ে বেঁধে দিল। এরপর তারা বন্দিটিকে দুজন লোকের নিচে একটি মিনিভ্যানের মেঝেতে শুইয়ে দিল, যাতে কেউ দেখতে না পায়। এক ঘণ্টার যাত্রার জন্য তারা রওনা দিল। কিন্তু বাংলাদেশের আগের অনেক রাজনৈতিক বন্দির মতো, মীর আহমদ কাসেম আরমানকে হত্যা করতে নেওয়া হচ্ছিল না। বরং, তাকে রাজধানী ঢাকার প্রান্তে একটি মাঠে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

নতুন হাইওয়ে হয়েছে, পাতাল রেল হচ্ছে; অনেক কিছু বদলে গেছে। কিন্তু আরমান সর্বশেষ ও সবচেয়ে বড় পরিবর্তন সম্পর্কে জানতেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি গত ১৫ বছর ধরে কঠোর হাতে দেশ শাসন করছিলেন, বিক্ষোভকারীরা তার বাসায় হামলা চালালে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ৫ আগস্ট হাসিনার প্রস্থান ঘটার পর, আরমান এবং আরও দুই ব্যক্তি, যারা গোপন কারাগারে দীর্ঘদিন বন্দি ছিলেন, তারা প্রকাশ্যে আসেন। ২০১৬ সালে আধাসামরিক বাহিনীর হাতে নিখোঁজ হওয়া সময় আরমান ছিলেন একজন সচ্ছল আইনজীবী। তার বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অভিযোগ না থাকা সত্ত্বেও, ইসলামপন্থী কর্মী ও ব্যবসায়ী হিসেবে তার পিতার কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে দায়ী করা হয়েছিল। বছর খানেক পরে, যখন আরমানকে খোলা মাঠে নামানো হলো, তখন তার শরীর ছিল শীর্ণ, এবং মুখে দাড়ি ছিল। অন্ধকার জীবনে তার বাঁচার একমাত্র উৎস ছিল, তার স্ত্রী এবং ১১ ও ১২ বছরের দুই কন্যা।

৪০ বছর বয়সী আরমান বলেন, ‘আমি প্রতিবার সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতাম এই পৃথিবীতে আমার পরিবারের সাথে যদি একসঙ্গে থাকতে না পারি, অন্তত স্বর্গে গিয়ে তাদের সঙ্গে যেন আমার দেখা হয়।’

আরমানকে ২০১৬ সালের আগস্টে তুলে নেওয়া হয়েছিল। সেখানে ছিল তার স্ত্রী এবং ৪ বছরের মেয়ে। হাসিনা সরকার ১৯৭১ সালে যুদ্ধাপরাধের অপরাধে মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলানোর আগে আরমানকে কারারুদ্ধ করা হয়েছিল। মীর কাসেম আলী বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধিতাকারী একটি ইসলামিক দলের কিশোর ছাত্র নেতা ছিলেন। আলীকে হাসিনার জন্য বিশেষভাবে হুমকি হিসেবে দেখা হয়েছিল। কারণ, তিনি একটি বৃহৎ এবং লাভজনক ব্যবসা গড়েছিলেন: একটি ব্যাংক, একটি মিডিয়া নেটওয়ার্ক, হাসপাতাল।

আরমান তার বাবার কথা বলতে গিয়ে জানাচ্ছেন, ‘আমার বাবার একটি দিনও জেলে কাটানোর কথা নয়, ফাঁসি তো দূরের কথা।’

বছরের পর বছর যন্ত্রণা এবং অনিশ্চয়তার পর আরমান হাসপাতাল থেকে ফিরে অবশেষে তার স্ত্রী, কন্যা এবং মায়ের সাথে পুনরায় মিলিত হতে সক্ষম হন। কিন্তু তিনি এখনো সেই মুহূর্তগুলো ভুলতে পারেননি। বাবার মৃত্যুদণ্ড, পারিবারিক জীবন থেকে চুরি হয়ে যাওয়া বেশ কয়েকটি বছর, দুর্ব্যবহার —যা হয়তো ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না।

মাইকেল চাকমা, একজন আদিবাসী অধিকারকর্মীকে আগস্টে একটি জঙ্গলে মুক্ত করা হয়েছিল। চাকমা বলছেন, ‘পাঁচ বছরের মধ্যে এই প্রথম আমি দিনের আলো দেখলাম।’ ২০১৯ সালে ঢাকার একটি ব্যাংকে প্রবেশের সময় তাকে অপহরণ করা হয়। তিনি বাংলাদেশের আদিবাসী পাহাড়ি জনগণের স্ব-শাসনের জন্য প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কারাগারের অভ্যন্তরে থেকে তিনি একটি প্রশ্ন শুধু করেছিলেন, কেন তাকে সেখানে আনা হলো। উত্তর পেয়েছিলেন, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। হাসিনা যখন তার দলের জন্য একটি সমাবেশ করতে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় চট্টগ্রাম পার্বত্য এলাকায় গিয়েছিলেন, তখন চাকমার দলের ছাত্র সংগঠন আওয়ামী লীগের রাস্তা অবরোধ করে। হাসিনা সমাবেশে তার বক্তব্য শেষ করেন হুমকি দিয়ে— যারা প্রতিবাদ করছেন তাদের তিনি দেখে নেবেন।

হাসিনার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুরুষ ও নারীদের একটি ছোট দল উল্লাসিত জনতার মধ্যে মিশে গিয়ে দেশের সামরিক সদর দফতরের গেটে পৌঁছে গিয়েছিল। এদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি ছিলেন যারা বলপূর্বক গুম থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। নারীরা তাদের নিখোঁজ প্রিয়জনের জন্য বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন দরজায় কড়া নেড়ে গেছে। তাদের একটিই দাবি ছিল— আয়নাঘরের ভিতরে এখনও কোনো বন্দি থাকতে পারে। যদি তারা এখনো কমান্ডিং অফিসারদের চোখে না পড়েন তাহলে তারা চিরতরে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারেন। মধ্যরাতের কাছাকাছি অফিসাররা শেষ পর্যন্ত তিনজন প্রতিনিধিকে বৈঠকের জন্য অনুমতি দেয়। বেঁচে ফিরে আসা ব্যক্তিরা অফিসারদের জানান যে, তারা অন্তত দুজন লোককে এখনো ভেতরে আটকে রেখেছে। একজন অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল যিনি ১৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে জোরপূর্বক নিখোঁজ ছিলেন তিনি বলেন, ‘আমাদের ২৪ ঘণ্টা সময় দেন, আমরা দেখছি। যদি কেউ বাকি থাকে আমরা নিশ্চিত করব যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাদের যেন মুক্তি দেওয়া হয়।’

পরের কয়েক দিনের মধ্যে চাকমা ,আরমান, আজমি সকলেই মুক্ত হয়ে যান।

সানজিদা ইসলাম তুলি, যার ভাই সাজেদুল ইসলাম সুমন ২০১৩ সালে নিখোঁজ হয়েছিলেন। তিনি বিচারের দাবিতে সরব হয়েছেন। সুমনের বৃদ্ধ মা তার নিখোঁজ ছেলের একটি ফ্রেমযুক্ত প্রতিকৃতি জড়িয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূসের পাশে চুপচাপ বসেছিলেন, যা দেখে ড. ইউনূস বলেন, ‘যদি দেশের অন্তর্বর্তীকালীন নেতারা তাদের জন্য ন্যায়বিচার করতে না পারেন তাহলে এই সরকারের কোনো অর্থ নেই।’

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস যে ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা পূরণ করা এখন অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য। তিনি বলেন, ‘আপনারা আশা ছাড়বেন না, তবে ফলাফল কী হবে তা এখনই বলতে পারা  কঠিন।’