ছাত্রলীগের সংবাদ প্রচার নিয়ে যা বললেন মাহফুজ আলম
আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেছেন, ছাত্রলীগ এখন আইনগত একটি নিষিদ্ধ সংগঠন। ছাত্রলীগের প্রচার-প্রসারে আইনগত ব্যারিয়ার আছে। আপনারা যারা সংবাদ মাধ্যমে আছেন তারা এই দিকটা একটু খেয়াল রাখবেন যাতে সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রচারে আপনারা ভূমিকা না রাখেন।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক বিফ্রিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
মাহফুজ আলম বলেন, কয়েকটি সংবাদপত্রে হামলার বিষয়ে একটি তথ্য আছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমরা শুনেছি। আমাদের দিক থেকে স্পষ্ট ভাষায় আমরা বলে দিতে চাই, সংবাদপত্রের ওপরে কোনো ধরণের হামলা এই সরকার বরদাস্ত করবে না। কোনো দিক থেকে যদি আঘাত আসে তবে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেবো।
ছাত্রলীগের অনেকে এখনও মাঠে আছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন, এ প্রশ্নের জবাবে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, যারা দোষী সন্ত্রাসী তাদেরও মানবাধিকতা নিশ্চিত করতে হবে। আমরা মব জাস্টিসের পক্ষে না। মামলা অনুযায়ী তাদের গ্রেফতার করে বিচার কাজ চলবে।
ছাত্রলীগ ছাড়াও আরও কোনো সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হবে কিনা, এ প্রশ্নে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সংবাদপত্রে ছাত্রলীগকে নিয়ে অনেক নিউজ হয়েছে। আমরা সকলে প্রত্যক্ষ করেছি নিরাপদ সড়ক রক্ষার আন্দোলন থেকে শুরু করে যে কয়টি ছাত্র আন্দোলন হয়েছে সবখানে আমরা ছাত্রলীগকে একটি সন্ত্রাসী ভূমিকায় দেখেছি। তখন যারা ক্ষমতায় ছিল তারা বলেছে এদেরকে ম্যানেজ করার জন্য ছাত্রলীগই যথেষ্ট। ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী কায়দায় আন্দোলন দমন করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের নিষিদ্ধ করার আরেকটি কারণ হচ্ছে জুলাই গণহত্যার পরে তারা থেমে গেছে তা নয়। আদালত থেকে তারা বেশ কয়েকবার দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। বর্তমানের প্রধিকার বিবেচনায় আমাদের এই সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। অন্য কোনো রাজনৈতিক সংস্থাকে নিষিদ্ধ করার কোনো আলোচনা হয়নি। সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার বিষয়টি আলোচনা হয়নি।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, পলাতক বা নিখোঁজ থাকলে বিচার হবে না এটি নয়। পলাতক বা নিখোঁজ থাকলেও বিচার হবে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লাগাম টানতে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করা নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে উপদেষ্টাদের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। আন্দোলনের ভাষা আর আমাদের ভাষা এক হতে হবে না।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো থেকে প্রস্তাবনা এসেছে। সরকার অন্য ইস্যুর মতো সেটা বিবেচনা করছে। এটা তো সংলাপের বিষয়। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের বিষয়। সবগুলো রাজনেতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেই সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।
সংবিধান সংশোধন নাকি পুর্নলিখন, এ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, দেশের ১৮ কোটি নাগরিক। তাদের অনেক রকমের মত থাকতে পারে। কেউ সংবিধান খুশি হতে পারে, কেউ না হতে পারে। এটা স্বাভাবিক। আবার কেউ নতুন সংবিধান বা কেউ সংশোধিত সংবিধান চাইতে পারে। এগুলোর দেখার আপাতত দায়িত্ব সংবিধান সংস্কার কমিশনের।
তিনি আরও বলেন, যে যুক্তিগুলো বলা হচ্ছে সরকারি চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ করতে হবে। যেমন করোনা, আন্দোলন- সেগুলো আসলে অস্থায়ী কারণ। এগুলো স্থায়ী কোনো কারণ না, যার জন্য আমাকে বড় কোনো পরিবর্তনে যেতে হবে। আমরা দেখেছি, যেহেতু বিসিএসের প্রতি অনেকের আগ্রহ থাকে, অনেক দূর বাড়িয়ে দিলে একজনই বারবার এখানে পরীক্ষা দেয়, অন্যদের জন্য সুযোগ সীমিত হয়ে যেতে পারে। এটার কিছু অর্থনৈতিক বিষয়ও আছে। এগুলো হচ্ছে স্থায়ী বিষয়। এগুলো চিন্তা করে বয়স ৩২ রাখাটা সমীচীন।
রাষ্ট্রপতির বিতর্কে সরকার চাপে আছে কীনা— এমন প্রশ্নে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, সরকার পরিচালনায় অনেকটাই চাপ। কিন্তু এটাতে অস্বস্তি থাকার কিছুই নেই। একটা ইস্যু এসেছে। তার সমাধান হবে। সমাধান যেহেতু রাজনৈতিক ঐক্যমতে দেখছি তাতে অস্বস্তির কিছুই নেই।
পুলিশের ওপর হামলা হচ্ছে, এ প্রশ্নে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, তাদের আশ্বস্ত করা হচ্ছে। পুলিশ বাহিনী আমাদের লাগবে। অনেক জায়গায় ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে দায়িত্ব পালন করছেন না। পুলিশের অনেকে কাজে নেমেছে কিন্তু অনেকের মধ্যে নিরলিপ্তিতা আছে। দোষী ছাড়া কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
বাংলাদেশিদের ভারতের ভিসা সীমিত করার বিষয় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান জানান, আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি, আমরা ভারতের সঙ্গে ভালো এবং মজবুত সম্পর্ক চাই। কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে একে অপরকে শোনা এবং বুঝতে পারা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশি জনগণ ভারতের ভিসা সংক্রান্ত সীমাবদ্ধ নীতির প্রতি অসন্তুষ্ট, এটা ভারতীয় সরকার অবশ্যই শুনেছে। আমি মনে করি না বাংলাদেশ সরকার এখনও ভারত সরকারের সঙ্গে এই বিষয়ে পরিস্থিতি বদলানোর কোনো উদ্যোগ নিয়েছে, কারণ এটি এখনও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আলোচনার অগ্রাধিকারের বিষয় হয়ে ওঠেনি। ভারত স্পষ্টভাবে বলে আসছে যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তারা কিছু করতে পারবে না। আমি মনে করি না যে বাংলাদেশের কোনো পরিস্থিতি আছে যার কারণে কোনো বিদেশি দেশ ভিসা সীমাবদ্ধ করতে পারে, কারণ অন্য কোনো দেশ এই ধরনের কোনো সীমাবদ্ধতা আরোপ করেনি। আমাদের জন্য এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে, যাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ওপর নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে, তাদের কেউ কেউ হয়তো ভারতে আশ্রয় নিয়েছে, হয়তো এটিই ভারত সরকারের পরিবর্তিত পরিস্থিতি বলতে বোঝানো হচ্ছে, আমরা নিশ্চিত নই। কারণ অন্য কোনো দেশ যেমন আমেরিকা, ইউএই বা জাপান এই ধরনের ভিসা সীমাবদ্ধতা আরোপ করেনি। হয়তো ভারত সরকার তাদের নীতি পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
সংখ্যালঘুদের দাবির বিষয় নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে রিজওয়ানা হাসান বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে তারা দুই দিন বা তার বেশি সময়ের জন্য সরকারি ছুটির দাবি করেছিল। আমার মনে হয়, বাংলাদেশ ইতিহাসে এই প্রথমবার আমরা তাদের দাবি শুনেছি এবং দুর্গাপূজার জন্য দুই দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছি। তাদের হয়তো আরও কিছু সমস্যা থাকতে পারে, তবে আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি যে আমাদের দরজা সবসময়ই সংলাপ এবং আলোচনার জন্য খোলা। তবে যদি তারা কঠোর আন্দোলন করে, তাহলে বোঝা যায় যে আরও বেশি সংলাপ এবং আলোচনা প্রয়োজন। তারা হয়তো এমন কিছু সমস্যার সমাধান চায়, যা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে আলোচনা মাধ্যমেই শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা সম্ভব। আমি মনে করি না রাস্তায় নামা প্রয়োজন, কারণ সমাধান যদি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে আসে, তাহলে অন্য কোনো সরকার এটি ঠিক করতে পারবে না। এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশ সরকারই ঠিক করতে পারবে এবং আমাদের দরজা সবসময় খোলা। যদি আপনি লক্ষ্য করেন, কিভাবে এই বছর দুর্গাপূজা উদযাপন করা হয়েছে, আমরা সবাই সব উপদেষ্টারা বিভিন্ন মন্দিরে পূজা উদযাপনের সময় নিমন্ত্রিত ছিলাম। আমি নিজে ছয়টি মন্দিরে যাওয়ার জন্য দাওয়াত পেয়েছিলাম কিন্তু আমাকে একটি বাতিল করতে হয়েছে। তবে উপদেষ্টারা যারা সরকারে আছেন, তারা সবাই অংশগ্রহণ করেছেন। বাংলাদেশ সবসময় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ ছিল এবং থাকবে। ন্যায্য যে দাবিগুলো রয়েছে, তা অবশ্যই সংলাপ এবং আলোচনার মাধ্যমে পূরণ করা হবে।
ব্রিফিংয়ের শেষ দিকে মাহফুজ আলাম জানান, আমার একটি বিষয় বলার আছে, এটা আপনাদের মাধ্যমে আমরা দেশবাসীকে জানাতে চাই, সেটা হচ্ছে, আগামীকাল কয়েকটি সংবাদপত্রে হামলার বিষয়ে আশংকা আছে, আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটু আগে শুনেছি। যে উনারা একটি বিবৃতি ইস্যু করেছেন এবং আমাদের দিক থেকে স্পষ্ট ভাষায় আমরা বলে দিতে চাই কোনো রকম সংবাদ মাধ্যমের ওপর, মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর হামলা এই সরকার বরদাস্ত করবে না । যে কোনো কোয়াটার থেকে যদি এরকম কোনো আঘাত আসার সম্ভাবনা থাকে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রমুখ।