বিহারি ক্যাম্পে মাদক কারবারিদের অস্ত্র দিয়েছিলেন নানক!

বিহারি ক্যাম্পে মাদক কারবারিদের অস্ত্র দিয়েছিলেন নানক!

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে মাদক কারবারিদের মধ্যে প্রায়ই সংঘাতের ঘটনা ঘটে। এর দ্বারা ঘটে প্রাণহানি, ঝরে রক্ত। গত কয়েক দিন ধরে উত্তপ্ত বিহারি ক্যাম্প। মাদক কারবারিদের মধ্যে চলছে সংঘর্ষ। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং ওই এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন মাদক কারবারিদের একাংশের হাতে। সেই অস্ত্রের ঝনঝনানি এখন শুনতে হচ্ছে ক্যাম্পবাসীকে।

রোববার (২৭ অক্টোবর) জেনেভা ক্যাম্পের মাদক কারবারকে কেন্দ্র করে চলমান গোলাগুলির বিষয়ে জানতে বিহারি সংগঠন উর্দু স্পিকিং পিপলস ইউথ রিহ্যাবিলিটেশন মুভমেন্ট (ইউএসপিওয়াইআরএম) সভাপতি সাদাকাত হোসেন ফাক্কুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেই জানান এই চাঞ্চল্যকর তথ্য।

ফাক্কু বলেন, 'যারা নানকের দল করত, তিনি তাদের হাতে অস্ত্র দিয়েছিলেন। এছাড়া মাদক কারবারিরা গত আন্দোলনে থানার অস্ত্র লুটপাট করছে৷ সেগুলো তাদের কাছে আছে। সেই অস্ত্র দিয়ে এখন তারা গোলাগুলি করছে।'

তবে এ ব্যাপারে নানক কিংবা তার অনুসারী কোনো নেতার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে তারা লাপাত্তা। নানক ইতোমধ্যে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সম্প্রতি তিনি ভিডিও বার্তায় দলের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন। যদিও তার অবস্থান শনাক্ত করা যায়নি।  

এদিকে বিহারি ক্যাম্পে মারামারি প্রসঙ্গে উর্দুভাষী নেতা ফাককু বলেন, 'জেনেভা ক্যাম্পে আমার কমিটি নেই। আমি কমিটি দিইনি। ওখানে আরও অনেক সংগঠন আছে। তারাও মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে শুনেছি।'

জেনেভা ক্যাম্পের মাদক কারবার নির্মূলে যৌথ বাহিনীর শক্ত অভিযানের প্রত্যাশা করছেন এই উর্দুভাষী নেতা।

জানা গেছে, মাদক কারবারকে কেন্দ্র করে গত আড়াই মাস ধরে গোলাগুলি চলছে রাজধানীর জেনেভা ক্যাম্পে। এতে প্রাণ গেছে চারজনের। মাদক কারবারিসহ আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। এসব ঘটনায় বিহারি অনেক নেতার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে৷ এরমধ্যে সাদাকাত হোসেন ফাক্কু এবং তার অনুসারীদেরও আসামি করা হয়েছে।

এছাড়া জেনেভা ক্যাম্পের মাদক নির্মূলে কাজ করেন ওয়াসী আলম বশির। সূত্র জানিয়েছে, মাদক নির্মূলের নামে উল্টো মাদক কারবারিদের সঙ্গে দেনদরবার করে বেড়ান তিনি। চলমান অস্থিরতার মধ্যে পলাতক বশির।

এদিকে সবশেষ শনিবার বিকেলে জেনেভা ক্যাম্পের ৭ ও ৪ নম্বর ব্লকের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ৭ নম্বর ব্লকের নিয়ন্ত্রণ ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক কারবারি ভুইয়া সোহেল, রানা, টুনটুন গ্রুপের হাতে। এই গ্রুপের সাথে ৩২নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নূর ইসলাম রাষ্ট্রনের সম্পর্ক ছিল বলে জানা গেছে। প্রতিদিন দুই লাখ টাকা হারে সাবেক কাউন্সিলরকে চাঁদা দিতো এই গ্রুপ।

তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ চলছে আরেক শীর্ষ মাদক কারবারি চুয়া সেলিম গ্রুপের। এ পক্ষে যোগ হয়েছেন আরেক মাদক কারবারি পারমনু।

জেনেভা ক্যাম্প সূত্র জানিয়েছে, শনিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলা গোলাগুলির ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন শিশু। কয়েক ঘণ্টা বিরতি দিয়ে রাতে আবারও শুরু হয় গোলাগুলি।