২৮ অক্টোবরের তাণ্ডবে চোখ হারানোর শঙ্কায় বিএনপির বহু নেতাকর্মী

২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর, সেদিন ঢাকায় ছিল বিএনপির মহাসমাবেশ। ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা সেদিনের সমাবেশে এসেছিলেন। সরকার পতনের একদফা দাবির সেই সমাবেশে হামলা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। হামলা-নিপীড়ন, টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ ও গুলিসহ নেতাকর্মীদের গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। 

সেদিন নারায়ণগঞ্জ ছাত্রদলের কর্মী মোহাম্মদ আরিফ বিল্লা ওরফে আলিফ পুলিশের গুলিতে আহত হন। চিকিৎসা দেওয়ার পরিবর্তে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিন মাস পর্যন্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ছিলেন। চিকিৎসা ছাড়া কারাগারে থাকার কারণে  আলিফের ডান চোখ এখন ঘোলা হয়ে গেছে।

আরিফ জানান, এখন তার চোখে কারণে-অকারণে ব্যথা করছে। যদি দ্রুত উন্নত চিকিৎসা না করা হয় তবে তার অন্য চোখের গুরুতর পরিণতি হতে পারে। সমাবেশের দিন ডান চোখ হারানোর পর আলিফের দুই চোখই এখন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ড. হাসান জানান, আন্দোলনের বৈরী পরিবেশের মধ্যেও আলিফের ডান চোখ থেকে গুলি বের করে ফেলার জন্য অনুরোধ করেছিলাম। সময় মতো চিকিৎসা না করা হলে সংক্রমণের কারণে আরিফ চিরতরে দৃষ্টি হারাতে পারে। এজন্য তাকে বিদেশে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।

বিএনপির এই চিকিৎসক গত ৯ বছরে কয়েকশ’ চোখের অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। ঢাকার বাইরে থাকা সত্ত্বেও তিনি রাতে ঢাকায় চলে আসেন। এভাবেই অনেকের চিকিৎসা দিয়েছেন। অপারেশন শেষ করে পরের দিনই আবার ঢাকা ছেড়ে চলে গেছেন।

ঢাকায় না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্নভাবে জনগণের ক্ষতি করেছেন। গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিএনপি মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও গণঅধিকার পরিষদের কিছু নেতাকর্মীকে লক্ষ্য করে হাত, পা, চোখে গুলি করা হয়।

এমন সময়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঢাকার বাইরে থাকতে হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যদি তখন আমাদের গ্রেপ্তার করতো তাহলে আহতদের চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায় কি-না এই শঙ্কা ছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগ ৬ জন জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে লগি-বইঠা দিয়ে পিটিয়ে মেরেছিল।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২৮ অক্টোবরে বিএনপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় ৬৫ জন বিএনপি নেতাকর্মী গুলিতে আহত হয়েছিলেন। দুটি বড় ভবনের ছাদ থেকে দাঙ্গা পুলিশ গুলি চালালে সমাবেশে অংশ নেওয়া নিরপরাধ ব্যক্তিরা মাথা ও মুখে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। তারা এই ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।

একই ঘটনায় আহত হন গুলশান থানা ছাত্রদলের আশরাফুল ইসলাম ওরফে জাসাম। তিনি জানান, বা চোখে অপারেশনের পর এখন আর দেখতে পারছেন না। ১৫ দিন আগে মাথায় চারটি ছররা গুলির মধ্যে একটি অপারেশন করে বের করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনারের আর্থিক সহায়তা এবং জিয়া ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ধারাবাহিকভাবে তার অপারেশনগুলো করা হয়েছে।

জাসাম বলেন, আমাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়। আমি এটা চাই; জিয়ার আদর্শে দেশ পরিচালনা হোক।

চিকিৎসার জন্য জাসাম এখন ভারতে যেতে চান। গত বছর হাসিনার স্বৈরশাসনের মধ্যেই হবিগঞ্জের ছাত্রনেতা সাইফুলও  চেন্নাই গিয়েছিলেন। ভারতের চিকিৎসকরা দুঃখজনক খবর দিয়েছিলেন যে- সাইফুলের ডান চোখ অনিবার্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সাইফুল এখনও তার মা এবং বান্ধবীকে এই কথা জানাননি।

বিএনপির স্বাস্থ্য সচিব ডা. রফিক দ্য মিরর এশিয়াকে জানিয়েছেন, ২০১২ সালে সিরাজগঞ্জের বিএনপি নেতা মেরি পুলিশের গুলিতে দুই চোখ হারিয়েছিলেন। এই খবর প্রকাশের পর দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক আলোচনা হয়। দুঃখজনক হলেও এরপর প্রায় ৫০ থেকে ৬৫ জন বিএনপি নেতাকর্মী চোখ হারিয়েছেন এবং ৩ হাজারেরও বেশি নেতা পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন। আরও দুঃখজনক হলো যে গুলিবিদ্ধ নেতাকর্মীদের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশের চোখের দৃষ্টি শেষ পর্যন্ত চলে গেছে। সমস্যা আরও জটিল হয়েছে দেশে দক্ষ রেটিনা সার্জনের অভাবের কারণে। ফলে চোখের আঘাতের শিকার ব্যক্তিদের পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছেন না।

তিনি আরও বলেন, দুঃখজনক হলেও আমরা তখন আওয়ামী সরকারি দল ও দেশের পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করতে পারিনি, কারণ এই ধরনের মামলা গ্রহণ করা হয় না। তখন মেট্রোপলিটন পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে যে বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশকে আক্রমণ করেছে।