ভারতীয় মিডিয়ার অপতথ্যে হাইকমিশনে হামলা: প্রেস সচিব
বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে অপতথ্য ছড়ানোর কারণে আগরতলা সহকারী হাইকমিশনে হামলা হয়েছে বলে মনে করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। এর জন্য ভারতীয় মিডিয়া দায়ী বলে মনে করেন তিনি।
ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে, এখানকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে এমন অভিযোগ করে শফিকুল আলম বলেন, ‘গণমাধ্যমগুলো কোনো তথ্য নিশ্চিত হওয়া ছাড়া মিথ্যা অপতথ্য ছড়াচ্ছে। তারা আগেই নির্ধারণ করে দিচ্ছে বাংলাদেশে কী হচ্ছে। অবস্থান পূর্বনির্ধারিত থাকলে বেশি এগোনো যায় না। ফলে ভারতীয় জনগণ সহিংসতা করছে।’
মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ভারতের গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছেন জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘আমরা খুবই স্বচ্ছ। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে অনেকেই চোখ, কান, নাক বন্ধ রেখে, বধিরের মতো বলছে, সে (ভারত) যেটাই বলছে সেটাই সত্য। আমরা বারবার বলছি, কিন্তু আমাদের কথাটা শুনেও না শোনার ভান করছে তারা।’
এসময় তিনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের বাংলাদেশের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখার আমন্ত্রণ জানান।
জাতীয় ঐক্য ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘ছাত্রদের সঙ্গে বসার পর আগামীকাল (বুধবার) বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সংলাপ হবে। পরদিন (বৃহস্পতিবার) ধর্মীয় নেতাদের সংলাপ আহ্বান আহ্বান করেছেন। এসব বৈঠকের উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতীয় ঐক্য। তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবেন।’
কী বিষয়ে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবেন প্রধান উপদেষ্টা- এমন প্রশ্নে শফিকুল আলম বলেন, ‘ইদানীং কিছু ঘটনা নিয়ে বৃহৎ পরিসরে অপতথ্য ছড়ানোর প্রয়াস আমরা দেখছি। অনেকাংশেই দেখছি ভারতীয় গণমাধ্যম খুবই আক্রমণাত্মকভাবে এগুলো করছে। সেটার জন্য জাতীয়ভাবে ঐক্য তৈরি করা। আমাদের বলতে হবে, তোমরা আসো, দেখ কী হচ্ছে। একই সঙ্গে আমাদের জাতীয় ঐক্যটাও ধরে রাখা। আমাদের দেশকে নিয়ে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এখানে ইমেজের প্রশ্ন আছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই অপতথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে নামতে হবে। গণমাধ্যমকে আহ্বান করব- বাংলাদেশ নিয়ে কী ভয়ানক ধরনের মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে সেগুলোর জবাব দিয়ে সত্যতা তুলে ধরতে। এটা জাতীয় দায়িত্ব বলে মনে করি।’
গত আগস্টে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথা হয় জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, সেসময় প্রধান উপদেষ্টা নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশে ভারতীয় সাংবাদিকদের ভ্রমণের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। সেখানে তাদের অনুসন্ধান করার জন্য বলেন। সেখানে সংহিসতা হচ্ছে কি না তা খুঁজে বের করতে বলেন। আর আমরা (প্রেস উইং) ভারতীয় গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কাজ করা এই সাংবাদিক বলেন, তারা তথ্য পাচ্ছে তাদের সমমনা যারা আছেন, সেটা হতে তথ্য নিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে নাম ছাড়া তথ্য নিচ্ছেন। আবার তারা তথ্য নিচ্ছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ থেকেও। নেত্র নিউজ দেখিয়েছে, তাদের তথ্যে বড় রকমের গলদ আছে। নয়জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে, কিন্তু তাদের কোনো মৃত্যু সাম্প্রদায়িক কারণে হয়নি। মৃত্যুগুলোর পেছনে ছিল রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত। সংগঠনটি নেত্র নিউজের প্রতিবেদনের নিয়ে কোনো প্রতিবাদ জানায়নি। তারা এটাও বলেনি আমরা ঘটনাগুলো পুনরায় দেখি। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বাংলাদেশ পরিদর্শনের আমন্ত্রণ জানান প্রেস সচিব।
ভারতীয় অপপ্রচারের বিষয়ে সরকার কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘কূটনীতিক চ্যানেলে কথাবার্তা হচ্ছে। বাংলাদেশের বিদ্যমান ব্যবস্থায় এরচেয়ে বেশি করণীয় নেই। আমরা আশা করি আমাদের সিটিজেন গ্রুপ, ডায়াসপোরা গ্রুপ, রাজনৈতিক দল, সিভিল সোসাইটির এ বিষয়ে সোচ্চার হওয়া উচিত। তারা আমাদের নিয়ে অপতথ্য ছড়াচ্ছে। পুরো জাতিকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর অপচেষ্টা করছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। তারা আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী। আমরা মনে করি এ সুসম্পর্ক হতে হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে।’
শেভরনের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের বিষয়টি তুলে ধরে প্রেস সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশের গ্যাস উৎপাদনের ৬০ শতাংশ শেভরনের কূপ থেকে আসে। তারা আবার বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ইচ্ছে করেছেন। তারা ব্লক ১০ ও ১১ ব্লকে কূপ খননের প্রস্তাব দেবে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে। গ্যাসের নতুন চাহিদা হচ্ছে। তারা জ্বালানি উপদেষ্টার সঙ্গেও বসবেন।’