আ.লীগ এমপিসহ বিনামূল্যে ক্রিকেট ম্যাচ দেখেছেন টিউলিপ
সঙ্কট ক্রমেই বাড়ছে যুক্তরাজ্যের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনীতিবিষয়ক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের। ইতোমধ্যে ক্ষমতাও হারাতে বসেছেন তিনি। বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের পাশাপাশি তার পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অভিযোগ একের পর এক প্রকাশ্যে আসছে। এবার প্রকাশ্যে এলো ভাই-বোন ও আওয়ামী লীগ সরকারের একজন সংসদ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে ২০১৯ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপের দুটি ম্যাচ স্টেডিয়ামে বসে বিনামূল্যে উপভোগ করার খবর।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ খবর জানায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ওই বিশ্বকাপের একটি ম্যাচে দর্শক হিসেবে টিউলিপকে দেখা গেছে। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন তার ভাই–বোন ও আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত তৎকালীন সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ।
সরকারি নথিপত্রের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্টেডিয়ামে বসে ২০১৯ বিশ্বকাপের দুটি ক্রিকেট ম্যাচ দেখেছিলেন লন্ডনের হ্যাম্পস্টিড অ্যান্ড হাইগেট এলাকার এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। দুপুরের খাবারসহ প্রতিটি ম্যাচের টিকিটের দাম ছিল ৩৫৮ দশমিক ৮০ পাউন্ড (প্রায় সাড়ে ৫৩ হাজার টাকা)। ২০১৯ সালের ৫ জুন বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল লন্ডনের ওভাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। সেই ম্যাচ ও এক মাস পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্য লর্ডসে অনুষ্ঠিত ম্যাচটি দেখেন টিউলিপ ও অন্যরা।
সম্প্রতি ফিন্যান্সিয়াল টাইমসসহ একাধিক গণমাধ্যমে যুক্তরাজ্যে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের কাছ থেকে সম্পত্তি উপহার নেওয়ার বিষয়টি সামনে আসে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, টিউলিপ ২০০৪ সালে কিংস ক্রসের কাছ থেকে কোনোরকম অর্থ প্রদান ছাড়াই দুই শয়নকক্ষ বিশিষ্ট একটি অ্যাপার্টমেন্ট পেয়েছিলেন। ব্রিটেনের ভূমি নিবন্ধন সংক্রান্ত নথিপত্রের বরাতে ওই তথ্য প্রকাশ করেছিল গণমাধ্যমটি। নথির তথ্যানুযায়ী, অ্যাপার্টমেন্টটি টিউলিপকে উপহার দিয়েছিলেন আবদুল মোতালিফ নামে এক আবাসন ব্যবসায়ী, যার সঙ্গে টিউলিপের খালা বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগসূত্র রয়েছে।
এসবের পর লেবার পার্টির মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিকের বোনের নামেও বিনামূল্যে পাওয়া ফ্ল্যাটের খবর গত শনিবার (৪ জানুয়ারি) প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম দ্য সানডে টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টিউলিপ উত্তর লন্ডনের হ্যাম্পস্টেডের এমন একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন, যেটি তার পরিবারকে দিয়েছেন তার খালা শেখ হাসিনার এক মিত্র। হ্যাম্পস্টেডের ফিঞ্চলে রোডের এই ফ্ল্যাট টিউলিপের বোন আজমিনাকে বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে, বাংলাদেশে ৯ প্রকল্পে ৮০ হাজার কোটি টাকা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে টিউলিপ সিদ্দিক, তার খালা শেখ হাসিনা, মা শেখ রেহানা ও শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত মাসে এই অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।
অন্যদিকে, এসব খবরের রেশ কাটতে না কাটতেই নতুন তথ্য জানায় ফিন্যান্সিয়াল টাইমস। এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকা খরচ করে ইউরোপের শেনজেনভুক্ত দেশ মাল্টার পাসপোর্ট নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন টিউলিপ সিদ্দিকের চাচী শাহীন সিদ্দিক এবং তার চাচাত বোন বুশরা সিদ্দিক।
তবে নিজের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন টিউলিপ। একইসঙ্গে অভিযোগের তদন্ত চেয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমারের নিয়োগ করা উপদেষ্টা লরি ম্যাগনাসকে চিঠি দেওয়ার খবর গত মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে জানায় ডয়েচে ভেলে বাংলা।
চিঠিতে টিউলিপ লিখেছেন, গত কয়েক সপ্তাহে আমি গণমাধ্যমের বিষয়বস্তু হয়েছি, যার অনেক কিছুই সঠিক নয়। যেখানে আমার আর্থিক ও আমার পরিবারের বাংলাদেশের সাবেক সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উঠে এসেছে। আমি একদম স্পষ্ট যে আমি কিছু ভুল করিনি। যাইহোক, সন্দেহ এড়ানোর জন্য আমি চাই আপনি স্বাধীনভাবে এগুলো নিয়ে সত্য প্রতিষ্ঠা করবেন।
ম্যাগনাসকে লেখা চিঠিতে টিউলিপ সিদ্দিক নিজেকে পুরোপুরি নির্দোষ দাবি করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘সন্দেহ এড়ানোর জন্য, আমি চাই আপনি স্বাধীনভাবে এই সম্পর্কে তথ্য প্রতিষ্ঠা করুন।’