ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন বাংলাদেশবিরোধী পরিকল্পিত প্রচারণা
ভারতের সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাদেশ ও এর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত প্রচারণার অংশ হিসেবে মিথ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে।
প্রেস উইং বলেছে,‘পরিকল্পিত প্রচারণার অংশ হিসেবে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা শুক্রবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আর এই নেতারা সবাই অপরাধী এবং তাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও গণহত্যার অভিযোগে রয়েছে।’
প্রেস উইং গতকাল তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস-এ পোস্ট করা এক বিবৃতিতে এ কথা জানায়।
“গোপনে বাংলা আওয়ামী শীর্ষ নেতারা হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ করছে, তারা ‘আইনের শাসন’ ফিরে আসার অপেক্ষায়” শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে প্রেস উইং জানিয়েছে, এটি ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর তথ্যপূর্ণ এবং সাংবাদিকতার মৌলিক নীতিগুলো অনুসরণ করা হয়নি।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস প্রতিবেদনে সাবেক আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাককে উদ্ধৃত করে বলেছে, আওয়ামী লীগ নেতারা বিচারিক অধিকার থেকে বঞ্চিত এবং জামিন পাচ্ছেন না।
প্রেস উইং জানিয়েছে, বাংলাদেশের আদালত বর্তমানে স্বাধীনভাবে পরিচালিত হচ্ছে, যার প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ও এম এ মান্নানসহ কয়েকজন নেতাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে সাবেক আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ এফ এম বাহাউদ্দিন নাসিমকে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, তারা আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে দেশে ফিরবেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে, ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশে আইনের শাসন সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত ছিল, যার ফলে হাজার হাজার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, কমপক্ষে ৩,০০০ গুম, সীমাহীন দুর্নীতি এবং কয়েক বিলিয়ন টাকা লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ দলের প্রস্তুত করা শ্বেতপত্রে এই ভয়াবহ দুর্নীতির দলিল রয়েছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনের পরিণতি ছিল ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণআন্দোলন, এই শান্তিপূণ আন্দোলন নির্মূল করতে আওয়ামী লীগ সরকারের নৃশংস হামলায় এক হাজারেরও বেশি তরুণ প্রতিবাদকারী গণহত্যার শিকার হয়েছে। এই গণঅভ্যুত্থান স্বৈরাচার শেখ হাসিনা এবং তার সহযোগীদের দেশত্যাগে বাধ্য করে। যাদের মধ্যে প্রতিবেদন উল্লিখিত সাবেক এমপিও রয়েছেন।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের প্রতিটি নাগরিকের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে, যা আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের শিকারদের জন্যও প্রযোজ্য।
প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার সাবেক মন্ত্রী একেএম মোজাম্মেল হককে উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের আগস্টে পুলিশ স্টেশন থেকে লুট হওয়া হাজার হাজার ছোট অস্ত্র উদ্ধারে কোনো প্রচেষ্টা চালানো হয়নি।
তবে পুলিশ সদর দফতরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এবং তার পরের দুই দিনে, যখন দেশে সরকার ছিল না, তখন পুলিশ স্টেশন থেকে লুট হওয়া ৫,৭৫০ অস্ত্রের মধ্যে কমপক্ষে ৪,৩৫৮টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে এবং বাকি অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাদেশের কোনো কর্তৃপক্ষের মন্তব্য না নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যা বাংলাদেশ এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিরুদ্ধে তাদের পরিকল্পিত প্রচারণার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।