হাসিনার প্রত্যর্পণে দিল্লিতে নথিপত্র পাঠিয়েছে বাংলাদেশ

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশ গত বছরের ডিসেম্বরে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের জন্য কূটনৈতিক চিঠিসহ (নোট ভারবাল)  প্রাসঙ্গিক নথি ভারতে পাঠিয়েছে। উপযুক্ত সময়ে আবারও তা ভারতকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সাপ্তাহিক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম এ তথ্য জানান।

শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের জন্য বাংলাদেশ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বা প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র ভারতে পাঠানো হয়েছে কিনা সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে মুখপাত্র বলেন, প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র তারা পাঠিয়েছেন এবং বাংলাদেশ যখন প্রত্যর্পণের বিষয়ে মৌখিকভাবে ভারতকে জানিয়েছিল তখন প্রয়োজনীয় তথ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ভারতকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার সময়ের বিষয়ে মুখপাত্র বলেন, এটি একই ধরনের কূটনৈতিক প্রক্রিয়া এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, 'নেতৃত্ব যখন মনে করবেন যে এটি করার এখনিই সঠিক সময়, তখন তা করা হবে।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নোট ভারবাল দেওয়া সত্ত্বেও শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণে বাংলাদেশের অনুরোধে এখন পর্যন্ত সাড়া দেয়নি ভারত।

রফিকুল আলম বলেন, 'আমরা ভারতের কাছ থেকে সাড়া প্রত্যাশা করছি।’

শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের অনুরোধের বিষয়ে ভারতের জবাবের অপেক্ষায় বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করছে। নয়া দিল্লির কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেলে নির্দিষ্ট সময় পর স্মরণ করিয়ে দেওয়ার কথা রয়েছে।

তিনি বলেন, ভারতের পক্ষ থেকে জবাবের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল নিশ্চিত করেছেন যে, তারা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছ থেকে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের অনুরোধ পেয়েছেন।

জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের সময় হত্যা, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধসহ অসংখ্য অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রয়েছে। যার ফলে গত বছরের ৫ আগস্ট তিনি ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।

বাংলাদেশ ও ভারত ২০১৩ সালে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি সই করে, যা পরে ২০১৬ সালে সংশোধন করা হয়, যা এ ধরনের অনুরোধের জন্য একটি আইনি কাঠামো বাধ্যবাধকতা তৈরি করেছে।

পলাতক অপরাধীদের দ্রুত হস্তান্তর করার সুবিধার্থে ২০১৬ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশ ও ভারত তাদের দ্বিপক্ষীয় প্রত্যর্পণ চুক্তির ১০(৩) অনুচ্ছেদ সংশোধন করেছে।

জুলাই-আগস্ট মাসে 'গণহত্যায়' শেখ হাসিনাই মূল নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে দাবি করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

গত সেপ্টেম্বরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, অপরাধ করলে শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে।

নিউইয়র্ক টাইমস ক্লাইমেট ফরোয়ার্ড ইভেন্টে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘কেন হবে না? তিনি যদি অপরাধ করে থাকেন তাহলে তাকে প্রত্যর্পণ করে বিচারের আওতায় আনা উচিত। তাকেও বিচারের মুখোমুখি করা উচিত।’