বাংলাদেশে স্টারলিংক চালুর বিষয়ে ড. ইউনূস-ইলন মাস্ক আলোচনা

বাংলাদেশে স্টারলিংক চালুর বিষয়ে ড. ইউনূস-ইলন মাস্ক আলোচনা

বাংলাদেশে স্টারলিংক স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা চালু করতে মার্কিন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) এক ভার্চুয়াল বৈঠকে এই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্কের বৈঠকে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংক বাংলাদেশে কীভাবে চালু করা যাবে, এ বিষয়ে সম্ভাবনা এবং ভবিষ্যৎ সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়।

এ বৈঠকে ড. ইউনূস ও ইলন মাস্ক বাংলাদেশের তরুণ উদ্যোক্তা, গ্রামীণ নারী ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের জন্য স্টারলিংকের সম্ভাব্য ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তারা কীভাবে স্টারলিংক সেবা বাংলাদেশে উচ্চগতির এবং সাশ্রয়ী ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে ডিজিটাল বিভাজন দূর করতে এবং দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে প্রভাব ফেলতে পারে, তা নিয়ে গভীর আলোচনা করেন।

ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, স্টারলিংক সেবা বাংলাদেশে চালু হলে এটি দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য এক যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে। তিনি বলেন, ‘স্টারলিংক বাংলাদেশকে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত করবে। আমাদের লক্ষ্য হলো লাখ লাখ মানুষের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করা, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলের নারী ও তরুণদের জন্য।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘গ্রামীণ ব্যাংক এবং গ্রামীণফোন ইতিমধ্যেই এই পথে অনেক অগ্রগতি করেছে, এবং স্টারলিংক তার পরবর্তী সম্প্রসারণ হতে পারে।’

এ বৈঠকে ইলন মাস্ক গ্রামীণ ব্যাংক ও গ্রামীণফোনের কাজের প্রশংসা করেন এবং এর মাধ্যমে গরিবদের উন্নতির জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘স্টারলিংক বাংলাদেশে উদ্ভাবন, আর্থিক ক্ষমতায়ন এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত খুলতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, স্টারলিংক সেবা প্রযুক্তিগতভাবে বাংলাদেশে বিপ্লব ঘটাতে সক্ষম হবে।’

বৈঠকের শেষ দিকে, ড. ইউনূস ইলন মাস্ককে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান, যাতে তিনি স্টারলিংক সেবা চালু এবং এর গুরুত্ব বিষয়ে দেশের জনগণ ও সরকারের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেন। ইলন মাস্ক তার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে বলেন, ‘আমি এই সফরের জন্য অপেক্ষা করছি। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, এবং আমি স্টারলিংক সেবা চালুর বিষয়ে খুবই আগ্রহী।’

এ বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ড. খলিলুর রহমান, যিনি রোহিঙ্গা সংকট এবং অগ্রাধিকারমূলক বিষয়াবলির উচ্চ প্রতিনিধি, এবং লামিয়া মোর্শেদ, যিনি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বিষয়ক প্রধান সমন্বয়কারী, উপস্থিত ছিলেন। স্পেসএক্সের পক্ষ থেকে লরেন ড্রেয়ার, ভাইস প্রেসিডেন্ট, এবং রিচার্ড গ্রিফিথস, গ্লোবাল এনগেজমেন্ট উপদেষ্টা, বৈঠকে অংশ নেন।

স্টারলিংক সেবা বাংলাদেশে যোগাযোগ এবং প্রযুক্তি খাতে একটি বড় ধরনের অগ্রগতি নিয়ে আসতে পারে। এটি তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশের সুযোগ তৈরি করতে পারে, একই সাথে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষার উন্নতি, স্বাস্থ্যসেবা সেবার গুণগত মান বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। স্টারলিংক সেবার মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি বড় ধরনের ডিজিটাল বিপ্লব ঘটতে পারে, যা দেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে আরও বেশি সহযোগিতা করবে।

এটি বাংলাদেশকে আরও শক্তিশালী ডিজিটাল ইকোসিস্টেম তৈরির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, যা দেশের ভেতরে ও বাইরের উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন সংযোগের সুযোগ সৃষ্টি করবে।

ড. ইউনূস এবং ইলন মাস্কের মধ্যে এই বৈঠক শুধু বাংলাদেশে স্টারলিংক সেবা চালু করার সম্ভাবনা নিয়ে নয়, বরং এটি দেশের ডিজিটাল ভবিষ্যত এবং বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপনে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। যদি এই পরিকল্পনা সফল হয়, তবে বাংলাদেশে প্রযুক্তিনির্ভর সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।