মায়ানমারে আটক ২৯ জেলেকে ফেরত আনল বিজিবি
কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদে মাছ ধরতে গিয়ে কয়েক দফায় ধরে নিয়ে যাওয়া ২৯ জেলেকে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কাছে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি। ফেরত আসা জেলেদের মধ্যে ১৪ জন রোহিঙ্গা রয়েছেন; অন্য ১৫ জন বাংলাদেশি।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টার দিকে তারা টেকনাফ মিয়ানমার ট্রানজিট জেটিতে পৌঁছান। এর আগে, নাফ নদের শূন্যরেখায় জেলেদের গ্রহণ করে বিজিবি।
টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়ন (বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান বলেন, ‘মায়ানমারের রাখাইনে চলমান সংঘাতের জেরে সীমান্তে অস্থির পরিস্থিতি বিরাজ করছে। আর মায়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তলাগোয়া অধিকাংশ এলাকা বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে রয়েছে। তাদের তৎপরতায় নাফ নদে মাছ ধরার সময় বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন ঘটনা ঘটেছে।’
বিজিবি জানিয়েছে, এই জেলেদের আরাকান আর্মির সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে হেফাজতে রেখেছে। নাফ নদ থেকে বিভিন্ন সময়ে ধরে নিয়ে যাওয়া জেলেদের ফেরত আনতে বিজিবি আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করে তৎপরতা শুরু করে। দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টেকনাফ পৌরসভার জেটি ঘাটে বিজিবি ২৯ জেলেকে ফেরত আনে। এখন তাদের নানা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
পরবর্তীতে এই জেলেদের নিজেদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। পুলিশ স্বজনদের কাছে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা নেবে।
এর আগে, বিকেলে মায়ানমারে জিম্মি থাকা জেলেদের ফেরত আনতে দুটি কাঠের ট্রলারসহ বিজিবির একটি দল মংডুর উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল।
ফেরত জেলেরা হলেন টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের মৃত তৈয়বের ছেলে মো. হাসান (৩০), মো. সলিমুল্লার ছেলে মো. জাবেদ (১৮), কবির আহমেদের ছেলে মো. আ. রহিম (১৭), মৃত আলমের ছেলে মো. হাসান (১৯), খুল্যা মিয়ার ছেলে মো. কালা মিয়া (৩৭), মো. সৈয়দ আলমের ছেলে মো. নুরুল আলম (৩৯), শামসুল আলমের ছেলে আব্দুল রহমান (১৯), সুলতান আহমেদের ছেলে মো. আ. কালাম আহমেদ (২৯), ফয়জল করিমের ছেলে মো. লাইল্যা (১১), আব্দুল আমিনের ছেলে মো. কবির আহমেদ (৪৩), কবির আহমদের ছেলে মোহাম্মদ ইউনুছ (২৩), সোনা মিয়ার ছেলে নুরুল ইসলাম (৩৪), রশিদ আহমেদের ছেলে মো. লুতফর রহমান (২৩), আব্দুল মান্নানের ছেলে রহিম উল্লাহ (২১), নূর মোহাম্মদের ছেলে মো. ফয়সাল।
এ ছাড়াও রোহিঙ্গাদের মধ্যে রয়েছেন উখিয়ার ৮ নম্বর (ইস্ট) বালুখালী এফডিএমএন ক্যাম্পের নুর সালামের ছেলে ফারুক মাঝি, ২৫ নম্বর আলীখালী এফডিএমএন ক্যাম্পের ইকরামের ছেলে কেফায়েত উল্লাহ, ৭ নম্বর কুতুপালং এফডিএমএন ক্যাম্পের নাজির হোসেনের ছেলে মো. ইব্রাহিম, ১৩ নম্বর বালুখালী এফডিএমএন ক্যাম্পের দলিজানের ছেলে আব্দুল মোনাফ, হোছন আলীর ছেলে তৈয়ব আলী, মো. সালামের ছেলে সৈয়দ উল্লাহ মাঝি, নূর মোহাম্মদের ছেলে সৈয়দ আলম, নূর মোহাম্মদের ছেলে ইমাম হোসেন, থান্ডা মিয়ার ছেলে মো. হোছন (২৫), হোছন আহম্মেদের ছেলে নেজামুদ্দিন (৩০), নুর মোহামদের ছেলে আমান উল্লাহ (৩২), সোনা মিয়ার ছেলে নুর হোছন (৩৫), মৃত আব্দুস সালামের ছেলে কবির আহম্মদ (৪০) ও মৃত মকবুল আহম্মদের ছেলে হামিদ হোসেন (৪৮)।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি নাফ নদের টেকনাফ জেটি ঘাট এলাকাসহ বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে চারটি ট্রলারসহ ১৯ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় আরাকান আর্মি। তারও আগে, গত ১০ ফেব্রুয়ারি নাফ নদের মোহনাসংলগ্ন এলাকা থেকে দুটি ট্রলারসহ ৪ জেলেকে এবং গত বছরের ১৬ নভেম্বর নাফ নদের উখিয়া উপজেলার পালংখালী সীমান্ত থেকে ৬ জেলেকে ধরে নিয়ে যায় তারা।