আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে সেনানিবাস থেকে ষড়যন্ত্র হচ্ছে : হাসনাত

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে ফিরিয়ে আনতে সেনা প্রশাসন ‘চাপ দিচ্ছে’ বলে দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।

অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক এই সমন্বয়ক বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে এক ফেইসবুক পোস্টে লিখেছেন, ১১ মার্চ দুপুর আড়াইটায় তিনিসহ তিনজনের কাছে সেনানিবাস থেকে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগকে’ রাজনীতিতে পুনর্বাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।

ওই বৈঠকে ৪০ বছরের বেশি সেনাবাহিনীতে কর্মরত এমন একজন সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে তাদের মতবিরোধ ও বচসা হওয়ার কথা তুলে ধরে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেছেন, এক পর্যায়ে বৈঠক শেষ না করেই তাদের চলে আসতে হয়েছে।

সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলার মধ্যে ছাত্রলীগ ছেড়ে আসা সাবেক এই ছাত্রনেতার দাবির বিষয়ে সেনা সদর কিংবা আইএসপিআরের আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

হাসনাত তার পোস্টে লিখেছেন, “আমাদেরকে প্রস্তাব দেওয়া হয় আসন সমঝতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদেরকে বলা হয়–ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এই প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে–তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে।

‘একটি বিরোধী দল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকা না-কি ভালো। ফলশ্রুতিতে আপনি দেখবেন গত দুইদিন মিডিয়াতে আওয়ামী লীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বয়ান দেওয়া শুরু করেছে।’

হাসনাত লিখেছেন, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরিন শারমিন, তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে।’

আমাদের আরো বলা হয়–রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে।

আওয়ামী সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পরদিন সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন।

সরকার পতনের ২৭ দিনের মাথায় গত ২ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। তবে তাকে আর প্রকাশ্যে যাচ্ছে না। আন্দোলনের সময় রংপুরে একটি হত্যার ঘটনায় করা মামলায় শিরীন শারমিনকে আসামি করা হয়েছে।

গত ৬ অক্টোবর ঢাকা-৯ আসনের সাবেক এমপি সাবের হোসেনকে চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে দুদিন পর তাকে ছয় মামলায় জামিন দিয়ে মুক্তি দেওয়া হয়।

সরকারের পতনের আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আত্মীয় ঢাকার সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপসের দেশ ছাড়ার খবর সংবাদমাধ্যমে এসেছে।

ফেসবুক পোস্টে হাসনাত বিচারের আগে আওয়ামী লীগকে রাজনীতিতে পুনর্বাসনের ‘ভারতীয় পরিকল্পনা’ প্রতিরোধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।

তার ফেইসবুক পোস্টের পর ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার রাতে বিক্ষোভ হয়। শুক্রবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও বিক্ষোভ হয়েছে।

যদিও বৃহস্পতিবার ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনা নেই তার সরকারের।

হাসনাত লিখেছেন, আমাদেরকে এই প্রস্তাব দেওয়া হলে আমরা তৎক্ষণাৎ এর বিরোধিতা করি এবং জানাই যে, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে কাজ করুন। এর উত্তরে আমাদের বলা হয়, আওয়ামী লীগকে ফিরতে কোন ধরনের বাধা দিলে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হবে, তার দায়ভার আমাদের নিতে হবে এবং ‘আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক’।

‘আলোচনার এক পর্যায় বলি যেই দল এখনো ক্ষমা চায় নাই, অপরাধ স্বীকার করে নাই, সেই দলকে আপনারা কিভাবে ক্ষমা করে দিবেন! অপরপক্ষ থেকে রেগে গিয়ে উত্তর আসে, ‘ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডম অ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর অ্যাটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স। তোমার বয়সের থেকে বেশি। তাছাড়া আওয়ামী লীগ ছাড়া ইনক্লুসিভ ইলেকশন হবে না’।

‘উত্তরে বলি, আওয়ামী লীগের সাথে কোনো ইনক্লুসিভিটি হতে পারে না। আওয়ামী লীগকে ফেরাতে হলে আমাদের লাশের উপর দিয়ে ফেরাতে হবে। আওয়ামী লীগ ফেরানোর চেষ্টা করা হলে যে সংকট তৈরি হবে, তার দায়ভার আপনাদের নিতে হবে। পরে- মিটিং অসমাপ্ত রেখেই আমাদের চলে আসতে হয়।’

হাসনাত লেখেন, ‘আজকেও ক্যান্টনমেন্টের চাপকে অস্বীকার করে আমি আবারও আপনাদের উপরেই ভরসা রাখতে চাই। এ পোস্ট দেওয়ার পর আমার কী হবে আমি জানি না। নানামুখী প্রেশারে আমাকে হয়তো পড়তে হবে হয়তো বিপদেও পড়তে হতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে কোন ধরনের আপস করার সুযোগ নাই।’

‘আসুন, সকল যদি কিন্তু পাশে রেখে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতে পারলে জুলাই ব্যর্থ হয়ে যাবে। আমাদের শরীরে এক বিন্দু রক্ত থাকা পর্যন্ত আমাদের শহীদদের রক্ত আমরা বৃথা হতে দেব না।’

‘৫ আগস্টের পরের বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কামব্যাকের আর কোনো সুযোগ নাই বরং আওয়ামী লীগকে অবশ্যই নিষিদ্ধ হতেই হবে।’