স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি ফিরছে মানুষ, কমেছে ভোগান্তি

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে ঢাকা ছাড়ছে। সরকারের নানামুখী উদ্যোগের কারণে এবারের ঈদযাত্রায় মানুষের ভোগান্তি অনেক কমে এসেছে। রেল, সড়ক, নৌ ও আকাশপথের যানগুলো ছেড়ে যাবার পর যথাসময়ে গন্তব্যে পৌছাতে পারছে। ঈদযাত্রাকে নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বুধবার বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রী ও বিভিন্ন পরিবহন কর্তৃপক্ষের সাথে বাসস’র সাংবাদিক কথা বলে এসব তথ্য জােিয়ছেন। ঢাকার পাশাপাশি সারাদেশে কোথাও দীর্ঘ যানজট, ট্রেনের শিডিউল বির্পযয়, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও নিরাপত্তা বিঘ্নের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

ঈদযাত্রা পরিদর্শন ও নতুন একজোড়া ট্রেনের উদ্ধোধন উপলক্ষ্যে বুধবার সকালে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে যান রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি সেখানে রেলওয়ের সেবা ও আয় বৃদ্ধি এবং দুর্নীতি ও অপচয় রোধ নিয়ে কথা বলেন সংশ্লিষ্টদের সাথে। এসময় তিনি আজ উদ্ভোধন করা নরসিংদী কমিউটার ট্রেনে ঢাকায় আসা যাত্রীদের ফল দিয়ে বরণ করে নেন এবং ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রীদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

ঈদ উপলক্ষ্যে রেল যাত্রার তৃতীয় দিনে ঢাকা থেকে সব ট্রেন যথাসময়ে ছেড়ে গেছে। আন্তঃনগর ৪৩টি এবং মেইল ও কমিউটার মিলিয়ে ২৬টি ট্রেনসহ ৬৯টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচল করছে। বুধবার সকালে এক নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মো. শাহাদাত হোসেন বাসস’কে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আজকে ঈদ যাত্রার তৃতীয় দিন। সবগুলো ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে গেছে। আগামীকাল থেকে বিশেষ ট্রেন চলবে। যাত্রী সেবায় প্রতিবারের মত এবারও আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। যাত্রা স্টেশনের শুরু থেকে ট্রেনে গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে টিকিট চেকিং করা হচ্ছে।

সড়কপথেও এবার স্বাচ্ছেন্দ্যে বাড়ি ফিরতে পারছে মানুষ। ঈদযাত্রা উপলক্ষ্যে ঢাকার বিভিন্ন টার্মিনালে ভীড় থাকলেও যাত্রীর তেমন চাপ দেখা যায়নি। ঈদের ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় এবার বাড়ি যেতে যাত্রীদের ভোগান্তি কম হচ্ছে। ঈদযাত্রাকে ঘিরে কোথাও অতিরিক্ত ভাড়া নিলে ব্যবস্থা নিচ্ছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)।

ঈদযাত্রায় গণপরিবহনে যাত্রীদের মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ।

তারা জানিয়েছেন, মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে প্রতিটি কাউন্টারে ভাড়ার তালিকা পাওয়া যায় এবং যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে রামগতি, লক্ষীপুরগামী নীলাচল পরিবহনে ১শ’ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে তিন হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া কামারপাড়ায় গাইবান্ধাগামী  নিউসাফা পরিবহনে দুই জনের কাছ থেকে ১শ’ টাকা করে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়ার অপরাধে নিউসাফা পরিবহনকে চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং মিরপুর ডি লিংক, নীলাচল পরিবহনে ভাড়ার চার্ট/তালিকা না থাকায় চার হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়াও ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনালে অভিযান পরিচালনাকালে দোলা পরিবহন, গোল্ডেন লাইন ও এমাদ পরিবহনে ভাড়ার তালিকা না থাকায় ছয় হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ঈদযাত্রা উপলক্ষ্যে নৌপথেও  যাত্রীদের ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। সদরঘাট থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের লঞ্চগুলো যথাসময়ে ছেড়ে যাচ্ছে। সদরঘাটে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া যেন নিতে না পারে সেজন্য তদারকি করছে বাংলাদেশ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ। সব লঞ্চে নির্ধারিত ভাড়া তালিকা প্রদর্শন ও আদায় নিশ্চিতে অভিযান পরিচালনার কথা জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটি-এর নৌ-নিরাপত্তা ট্রাফিক ব্যবস্থা বিভাগের ঢাকা নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মুহম্মদ মোবারক হোসেন। তিনি বাসস’কে বলেছেন, অতিরিক্ত ভাড়া যেন কেউ আদায় করতে না পারে সেজন্য আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি। কয়েকটি লঞ্চকে জরিমানা করেছি। এখন সব লঞ্চে নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা টাঙানো আছে। যাত্রীর চাপ না থাকলেও সব রুটে যাত্রী চলাচল স্বাভাবিক আছে।

লঞ্চযাত্রা নিয়ে কথা বললে বরিশালগামী যাত্রী রেদোয়ান আহম্মেদ বাসস’কে বলেছেন, কালকে অফিস ছুটি নিয়ে আজকে চলে যাচ্ছি যাতে ভোগান্তি কম হয়। এখন সড়ক পথ ও নৌ পথে যাত্রার সুযোগ থাকায় টার্মিনালে চাপ কম। আশা করছি ভালোভাবে বাড়ি যেতে পারবো।

এদিকে ঈদ উপলক্ষ্যে বুধবার থেকে ঢাকা-সৈয়দপুর ও ঢাকা-রাজশাহী রুটে অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। অন্যান্য বেসরকারি বিমান অপারেটরগুলোও তাদের নির্ধারিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে।