বাংলাদেশের পোশাক আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কারোপ ভুল সিদ্ধান্ত: পল ক্রুগম্যান

বাংলাদেশের পোশাক আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কারোপ ভুল সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন নোবেলজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ পল ক্রুগম্যান।

মার্কিন সংবাদপত্র নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ক্রুগম্যান বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানিতে শুল্ক বসানো ঠিক হয়নি। এই পদক্ষেপে মার্কিন নাগরিকদের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে।’

পল বলেন, ‘অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদনশীলতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।  সরবরাহব্যবস্থা বিবেচনায় বাংলাদেশ, ভিয়েতনামের ওপর শুল্ক বসানো ঠিক হয়নি। আর কানাডা ও মেক্সিকোর মতো প্রতিবেশী দেশের পণ্যে উচ্চ শুল্ক আরোপ করা একেবারেই অযৌক্তিক।’

উচ্চ শুল্কারোপ করে বাণিজ্য–ঘাটতি কমিয়ে আনা বেশ কঠিন। দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পারস্পরিক অনেক ধরনের বোঝাপড়া থাকে, এ কারণে শুল্কের প্রভাব অনেক সময় কমে যায়।  এ অবস্থায় উচ্চ হারে শুল্ক আরোপ করে বাণিজ্য ঘাটতি কমানো সম্ভব নয় বলে মনে করেন তিনি।

অনেকটা তাচ্ছিল্য করেই পল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যই বন্ধ করে দিতে পারে। বাণিজ্য না হলে তো বাণিজ্য ঘাটতিও থাকবে না।’

পলের মতে, পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ নেই যারা সবকিছু উৎপাদন করতে পারে। কিছু না কিছু পণ্য তাদের আমদানি করতে হয়। আবার যাদের হাতে কিছু  উদ্বৃত্ত থাকে, তারা সেগুলো রপ্তানি করে। এভাবেই বিশ্বে একটি সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

ফলে কোনো দেশ তাদের পণ্য রপ্তানি করছে মানেই ঢালাওভাবে তারা অন্যায্য বাণিজ্যনীতি অনুসরণ করছে— এমনটা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। ট্রাম্প প্রশাসন যেভাবে শত্রু-মিত্র, কাছের-দূরের সব দেশের ওপরই শুল্কারোপ করেছে তাতে এই বাস্তবতা সম্পর্কে তারা অবগত নন বলে মনে করেন নোবেলজয়ী এ অর্থনীতিবিদ।

তাছাড়া দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোন নীতিতে শুল্ক নির্ধারণ করেছেন তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন পল। যে-সব দেশের সঙ্গে বাণিজ্য-ঘাটতি রয়েছে সেসব দেশের আমদানি দিয়ে ভাগ করে শুল্ক হার নির্ধারণ করা এবং তার অর্ধেক হারে সেই দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করা—এমন কোনো পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি কোনো পাঠ্যপুস্তকেও পড়েননি বলে জানান। পল নীতিকে সম্পূর্ণ অবাস্তব বলে আখ্যা দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত ৩ এপ্রিল আকস্মিকভাবে ১০০ টির মতো দেশের ওপর বহুল আলোচিত পাল্টা শুল্কারোপ করেন ট্রাম্প। এর মধ্যে বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্ক ধার্য করেন তিনি।  এতে বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানির ওপর নির্ভরশীল, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত। এককভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।