পাসপোর্ট থেকে ‘ইসরায়েল ব্যতীত’ শব্দ মুছে ফেলা দুঃখজনক: মোমেন

সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, আরব বিশ্ব ফিলিস্তিন ইস্যুতে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারছে না। ব্রাজিলের মতো নন মুসলিম দেশ ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করলেও কোনো মুসলিম রাষ্ট্র এ পর্যন্ত এমন সিদ্ধান্ত নেয়নি।

তিনি বলেন, মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রনায়ক জনতার রায়ে নির্বাচিত নয়। তবে বাংলাদেশের সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত। সম্প্রতি আমাদের ই-পাসপোর্ট থেকে একসেপ্ট ইসরায়েল শব্দটি ডিলিট করা দুঃখজনক।

এমপি মোমেন বলেন, ওআইসি ও আরব লীগ একাধিকবার বৈঠকে বসলেও তারা ইসরায়েলি পণ্য বয়কটে এক হতে পারেনি। ইসরায়েলের সঙ্গে আমাদের কোনো বাণিজ্যিক সম্পর্ক না থাকলেও তাদের, ও তাদের মিত্রদের অনেক পণ্য আমাদের দেশে বিক্রি হচ্ছে।

মোমেন বলেন, আমি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা অন্য কেউ আমার সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা না করেই এ পরিবর্তন করেছে। পাসপোর্টকে আরও মানসম্পন্ন করা এবং খরচ কমানোর জন্য জার্মানি একটি প্রতিষ্ঠান এই কাজটি করেছে বলে আমাকে অবহিত করা হয়।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের নিজস্ব শক্তি বলতে কিছু নেই। পাঁচটি মোড়ল রাষ্ট্রের ওপর তারা নির্ভরশীল। ১৫ হাজার শিশুসহ ৩৬ হাজার মানুষকে হত্যার পরও মানবতার ফেরিওয়ালারা ফিলিস্তিনে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কোনো ভূমিকা রাখেনি। পশ্চিমাদের বাদ দিয়ে আরব বিশ্ব এক হলেও ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল দুটি পৃথক রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই বর্তমান সমস্যার সমাধান সম্ভব।

শুক্রবার (৩১ মে) এফডিসিতে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন নিরসনে করণীয় নিয়ে আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ফিলিস্তিন ইসরায়েল সংকট নিরসনে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ নিম্নের ৭ দফা পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ  করেন।

এক. মুসলিম বিশ্বকে একত্রিত হয়ে শিয়া—সুন্নি বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে ফিলিস্তিন সমর্থিত রাষ্ট্র প্রধানদের নিয়ে ইসরায়েলের পক্ষপাতিত্বকারী দেশগুলোর ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

দুই. বিশ্ব গণমাধ্যম পক্ষপাতহীনভাবে ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরোচিত হামলার চিত্র তুলে ধরে ইসরায়েলের বিপক্ষে আরও জোরালো ভূমিকা নিতে হবে।

তিন. জাতিসংঘ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দেশগুলোর মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষের অংশগ্রহণে শান্তিচুক্তি নিশ্চিত করা।

চার. ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েল উভয়ের জন্য আলাদা আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।

পাঁচ. ফিলিস্তিন এবং ইসরায়েল উভয়কে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের মানদন্ড মেনে চলতে হবে।

ছয়. যুদ্ধাপরাধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের ব্যবস্থা করা।

সাত.  জরুরিভিত্তিতে গাজা উপত্যকাসহ ফিলিস্তিনে বেঁচে থাকা মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ সহযোগিতা নিশ্চিত করা।

আট.  ফিলিস্তিনি জনগণের খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষা নিশ্চিত করাসহ অবকাঠামো পুনঃনির্মাণে আন্তর্জাতিক তহবিল গঠন করা।

‘মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই পারে ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ করতে’ শীর্ষক ছায়া সংসদে কবি নজরুল সরকারি কলেজের বিতার্কিকদের পরাজিত করে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।