ঢাকায় সরকারি হাসপাতালের ৩২% টয়লেট ব্যবহার অনুপযোগী, পরিচ্ছন্ন ৩৩%

প্রতীকী ছবি

রাজধানীর সরকারি হাসপাতালের ৩২ শতাংশ টয়লেটই ব্যবহার অনুপযোগী। বাকি ৬৮ শতাংশ টয়লেট ব্যবহার উপযোগী হলেও সেগুলোর মধ্যে ৩৩ শতাংশ টয়লেট পরিচ্ছন্ন। অন্যদিকে, বেসরকারি হাসপাতালে ব্যবহার উপযোগী ৯২ শতাংশ টয়লেটের মধ্যে ৫৬ শতাংশই অপরিচ্ছন্ন।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআর,বি) এক গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। সোমবার সংগঠনটি এই গবেষণার তথ্য প্রকাশ করে। 

আইসিডিডিআর,বি জানায়, ব্যবহার অনুপযোগী ও অস্বাস্থ্যকর টয়লেট কলেরা ও টাইফয়েডের মতো রোগের জীবাণু ছড়ায় ও জনস্বাস্থ্যের ঝূুঁকি তৈরি করে। হাসপাতালে স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ হাসপাতাল থেকে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু ছড়ানোর আশঙ্কা বেশি থাকে। 

গবেষণায় বলা হয়েছে, রাজধানীর হাসপাতালে বহির্বিভাগে রোগী অনুপাতে টয়লেটের সংখ্যা কম। সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতি একটি টয়লেটের বিপরীতে ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২১৪ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে টয়লেট প্রতি ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৪ জন। এই অনুপাত ওয়াটার এইড প্রস্তাবিত আদর্শমানের তুলনায় অনেক কম। 

হাসপাতালের বহির্বিভাগে টয়লেট নির্মাণের ক্ষেত্রে ওয়াটার এইড-এর নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রতি ২০-২৫ জন রোগী বা পরিচর্যাকারীর জন্য একটি করে টয়লেট এবং এর অতিরিক্ত বা প্রতি ৫০ জন রোগী বা পরিচর্যাকারীর জন্য দুটি করে টয়লেট থাকতে হবে।

এমনকি রাজধানীতে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয় ওয়াশ (ওয়াটার, স্যানিটেশন এন্ড হাইজিন) স্ট্যান্ডার্ড ও বাস্তবায়ন নির্দেশিকা-২০২১ অনুযায়ী টয়লেট নেই বলেও গবেষণায় বলা হয়েছে। সরকারের এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে প্রতি ছয়টি বেডের জন্য একটি টয়লেট থাকতে হবে। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, সরকারি হাসপাতালের অন্তর্বিভাগে প্রতিটি টয়লেটের বিপরীতে ব্যবহারকারী ১৭ জন এবং বেসরকারি হাসপাতালে এই সংখ্যা ১৯ জন। অন্তর্বিভাগের টয়লেট অপরিচ্ছন্ন, রোগী অনুপাতে টয়লেটের সংখ্যা ও ব্যবহারে উপযোগিতা অনেক কম।
এছাড়াও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য আলাদা টয়লেট আছে রাজধানীর ১ শতাংশেরও কম হাসপাতালে। ৯৭ শতাংশ হাসপাতালেই মাসিকের সময় ব্যবহৃত প্যাড এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ময়লা ফেলার ঝুড়ি নেই। 

গবেষণায় টয়লেটের ব্যবহার উপযোগিতা সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফ ব্যবহৃত মানদণ্ড অনুযায়ী। দৃশ্যমান মলের উপস্থিতি, মলের তীব্র গন্ধ, মাছি, থুতু, পোকামাকড় , ইঁদুর এবং কঠিন বর্জ্যের উপস্থিতির ওপর ভিত্তি করে টয়লেটের পরিচ্ছন্নতা মূল্যায়ন করা হয়েছে।
 
এ ব্যাপারে আইসিডিডিআর,বি’র সহযোগী বিজ্ঞানী ও এই গবেষণার প্রধান তদন্তকারী ডা. মো. নুহু আমিন বলেন, ঢাকার হাসপাতালগুলোর প্রকৃত স্যানিটেশন পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। কারণ গবেষণাটি করা হয়েছে কভিড-১৯ মহামারির ঠিক পরে। তখন রোগীর প্রবাহ এবং টয়লেট ব্যবহার কমে যেতে পারে।

এই গবেষক হাসপাতালে পরিচ্ছন্ন ও কার্যক্ষম টয়লেট বজায় রাখার জন্য বরাদ্দ বাড়ানো, লিঙ্গভিত্তিক প্রয়োজনীয়তা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাহিদার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন। 

গবেষণায় বলা হয়, এই গবেষণাটি নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে এই বিষয়ে গবেষণার ঘাটতি পূরণের সহায়ক হবে। তাছাড়া ঢাকার হাসপাতালগুলোতে অপর্যাপ্ত স্যানিটেশনের সমস্যা সমাধানের জন্য জাতীয় নীতি পরিবর্তনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ঢাকার ১২টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের টয়লেটের ওপর এই গবেষণা করা হয়। গবেষণায় এসব হাসপাতালের ২ হাজার ৪৫৯টি টয়লেট পর্যবেক্ষণ করে টয়লেট ব্যবহারের সুবিধা, ব্যবহার উপযোগিতা এবং পরিচ্ছন্নতা মূল্যায়ন করা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহযোগিতায় এই গবেষণা করা হয়। গবেষণাটি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিক প্রকাশনা ‘প্লস ওয়ান’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।