বাংলাদেশ একদলীয় রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে: ড. ইউনূস

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা নির্মূল করায় বাংলাদেশ একটি ‘একদলীয়’ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

সম্প্রতি ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এই নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ দাবি করেছেন, ‘দেশে আর কোনো রাজনীতি অবশিষ্ট নেই’। মঙ্গলবার প্রকাশিত সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদনে ড. ইউনূসকে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্পের মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দেওয়ার কৃতিত্ব দেওয়া হয়।

রয়টার্স বলছে, ২০০৭ সালে নিজের রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা প্রকাশের পর ক্ষমতাসীনআওয়ামী লীগ সরকারের তোপের মুখে পড়েন তিনি। গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হন। কিন্তু দেশের প্রধান বিরোধীদল নির্বাচন বয়কট করে।

বিএনপির শীর্ষ নেতারা নির্বাচনের আগে থেকেই কারাবন্দি বা নির্বাসনে আছেন। ক্ষমতাসীন দল ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িত অভিযোগ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রকৃত রাজনৈতিক বিরোধীদের ঘাটতি রয়েছে। এখানে কেবল একটি দলই সক্রিয়। তারাই সবকিছুই দখল করেছে।তারা সবকিছু করছে, তাদের পথেই নির্বাচন করছে।

ড. ইউনূস বলেন, ‘তারা নিজেদের লোকদের বিভিন্ন রূপে নির্বাচিত করছে। উপযুক্ত প্রার্থী, ডামি প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। আর সবাই একই দলের। ’তবে ড. ইউনূসের এই মন্তব্যের সঙ্গে একমত নন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন,‘শুধু আমি নই, দেশের জনগণও তার মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করবে।’ ড. ইউনূসের এমন মন্তব্য দেশের জনগণের জন্য ‘অপমানজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী। তার দাবি ‘দেশে গণতন্ত্র পুরোপুরি সচল রয়েছে।

যদিও শান্তিতে নোবেলজয়ী ইউনূস মনে করেন, ‘বাংলাদেশে প্রতিযোগিতামূলক রাজনৈতিক আবহ আবারও ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে। কারণ এটি এমন এক জায়গায় এসেছে, যেখানে এটা পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে গেছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের ৭৬ বছর বয়সী কন্যা হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে, হাসিনাকে অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে, যদিও সমালোচকরাও তাকে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ভিন্নমত দমনের জন্য অভিযুক্ত করেছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর বলেছে যে জানুয়ারির নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না অন্যদিকে ব্রিটিশ সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তরও ‘ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতার’ নিন্দা করেছে।

সেই সময়, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই মহড়াকে একটি ‘সাজানো’ নির্বাচন বলে নিন্দা করে, এটি বাতিল, হাসিনার পদত্যাগ এবং নতুন নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছিল। নির্বাচনের ঠিক আগে, বাংলাদেশের একটি আদালত শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছিল, যা তিনি অস্বীকার করেছিলেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ইউনূসের আনা অভিযোগ মিথ্যা বলে অস্বীকার করে বলেন "তিনি (অধ্যাপক ইউনুস) দেশের সর্বোচ্চ আদালতে গেছেন, যেখানে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ,  ইউনূসকর্তৃক প্রদত্ত ট্যাক্স উদ্ধৃত করে আইনমন্ত্রী বলেন  সুপ্রিম কোর্ট তার বিরুদ্ধে কর ফাঁকির মামলায় রায় দিয়েছে, কিন্তু অন্যদের বিচারাধীন বলে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।

ইউনূসের সমর্থকরা বলছেন, নাগরিক শক্তি নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠনের উদ্যোগ নেয়ার পর থেকেই হাসিনার সরকার তাকে অসম্মান করে আসছে। হাসিনা ২০১১ সালে প্রথম অধ্যাপ কইউনূসকে ‘গরিবদেররক্ত চোষা’ বলে অভিহিত করেছিলেন ।একজন নাগরিকের জন্য রাজনৈতিক দল করার চেষ্টা করা কি অপরাধ?

এমন প্রশ্ন তুলে অধ্যাপক ইউনূস বলেন,বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিবেশ নেই বলেই দশ সপ্তাহের মধ্যে তিনি এমন একটি দলের ধারণা ত্যাগ করেছিলেন।