যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ-নীতির প্রতিবাদে চাকরি ছাড়ছেন পিটার হাস! 

বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির হঠাৎ পরিবর্তনের প্রতিবাদে স্টেট ডিপার্টমেন্টের চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস। কূটনৈতিক সূত্রগুলো দ্য মিরর এশিয়াকে এ তথ্য জানিয়েছে। 

পিটার হাস মূলত দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মার্কিন সহকারি সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু’র কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে পদত্যাগ করছেন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার অক্ষুণ্ন রাখার বিষয়ে আন্তরিক থাকলেও ডোনাল্ড লু এ বিষয়ে ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করেছেন এবং সরকারকে গুছিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। এই ধীরে চলো নীতি ভারত ও ক্ষমতাসীন সরকারকে সুবিধা দিয়েছে। শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ বিষয়ে ভারতের কথা মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। সাম্প্রতিক ঢাকা সফরের সময় একটি সাক্ষাৎকারে ডোলান্ড লু এটিকে কূটনীতিতে পারস্পারিক প্রভাব বলে আখ্যায়িত করেছেন।

পিটার হাস শুরুতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতা চালালেও পরে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছেন। এটি রাষ্ট্রদূতকে ক্ষুদ্ধ ও বিব্রত করছে। এই কারণে তিনি স্টেট ডিপার্টমেন্টের চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে সূত্রগুলো জানায়। 

রাষ্ট্রদূত হাস জুলাইয়ের শেষার্ধ্বে ঢাকা ত্যাগ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত কংগ্রেসে শুনানির পর ঢাকা আসবেন।

বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতার অংশ হিসেবে গত বছরের শুরুর দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন-সহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিতে থাকে। 

এসময় ব্যস্ত হয়ে পড়েন পিটার হাসও। তিনি গুম হওয়া মানুষের আত্মীয়দের সংগঠন ‘মায়ের ডাকে’র একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে সরকারি দলের কথিত সমর্থকদের হামলারও শিকার হন। 

কিন্তু গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নাটকীয় মোড় নেয়। যুক্তরাষ্ট্র তার নীতিতে পরিবর্তন এনে ভারতের চোখে আবার বাংলাদেশকে দেখা শুরু করে। ফল হিসেবে প্রহসনের একটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরও যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। 

এসব নিয়ে সাবেক ভারতীয় কূটনীতিকদের বিদ্রুপের শিকারও হন রাষ্ট্রদূত হাস। 

পররাষ্ট্রনীতির প্রতিবাদ করে চাকরি ছাড়া স্টেট ডিপার্টমেন্টে নতুন নয়। ইউক্রেনে মার্কিন ভূমিকার প্রতিবাদ করে পদত্যাগ করেছেন ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড সহ অনেকেই। 

রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস বাংলাদেশে খুবই জনপ্রিয়। তিনি স্থানীয়দের সঙ্গে আন্তরিক কথোপকথনের জন্য খুবই সমাদৃত। যুক্তরাষ্ট্রের আপাত নিশ্চুপ ভূমিকা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অনেক মানুষ মনে করে পিটার হাস গণতন্ত্র ফেরাতে আন্তরিক ভূমিকা পালন করতে চেয়েছিলেন।