তিস্তা প্রকল্প নিয়ে ভারত নয়, চীনের দিকে তাকিয়ে সরকার: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফাইল ছবি

উত্তরবঙ্গের তিস্তা নদী পাড়ের মানুষের দুঃখ লাঘবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ভারত নয়, চীনের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে এ বিষয়ে সরকারের উদ্যোগের সর্বশেষ তথ্য জানিয়েছেন তিনি।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদে কুড়িগ্রাম-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. হামিদুল হক খন্দকারের লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা জানান। এ সময় সংসদে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চীন সরকারের আর্থিক সহায়তায় সমীক্ষা সম্পন্ন করে প্রায় ৮ হাজার ২১০ কোটি টাকার পিডিপিপি (প্রফেশনাল ডিপ্লোমা ইন পাবলিক প্রকিউরমেন্ট) ২০২০ সালের আগস্টে ইআরডিতে (অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ) দেওয়া হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইআরডির বৈদেশিক সাহায্য অনুসন্ধান কমিটির ৫১তম সভায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের স্বার্থে সহজ শর্তের ঋণ পেতে চীন সরকারকে অনুরোধের সিদ্ধান্ত হয়। ইআরডি থেকে ঢাকায় চীনা দূতাবাসের মাধ্যমে চীন সরকারকে সফট লোন সাহায্য প্রাপ্তির জন্য ২০২১ সালের মার্চ মাসে অনুরোধ জানানো হয়।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পিডিপিপির বিষয়ে চীন সরকার একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন গত বছরের ৫ মার্চে ইআরডিতে পাঠায়। ওই প্রতিবেদনে বড় আকারের ভূমি উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং নৌ-চলাচল ব্যবস্থার উন্নয়নের বিষয়ে অধিকতর বিশ্লেষণ না থাকা এবং বড় আকারের বিনিয়োগের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। চীন সরকার প্রকল্পটি পর্যায়ভিত্তিক বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আরও বিশদ সমীক্ষার পরামর্শ দেয়। পাওয়ার চায়না কর্তৃপক্ষ চীন সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক গত বছরের ২৭ আগস্টে ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট সংশোধনের প্রস্তাব বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডে পাঠিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।’

গত মাসে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কুমার কোয়েত্রা বাংলাদেশ সফরে আসেন। এ সময় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রকল্পে বিনিয়োগ করার আগ্রহ প্রকাশ করে ভারত। যদিও চীন আগেই এই প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে এসেছিল। বাংলাদেশের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর এই প্রকল্প নিয়ে কাজ শুরুর কথাও জানিয়েছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত।

বাংলাদেশের সাথে ভারতের তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সম্পাদনের ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটেই এই মহাপরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পটিতে চীনের অন্তর্ভুক্তিকে নিজেদের জন্য নিরাপত্তা হুমকি হিসেবে দেখছে ভারত। আর তাই এ পরিকল্পনায় পাল্টা বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিবেশী দেশটি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় কুমার কোয়েত্রার সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এক প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিলেন, তিস্তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা তিস্তায় একটা বৃহৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছি। ভারত সেখানে অর্থায়ন করতে চায়। আমি বলেছি, তিস্তায় যে প্রকল্পটি হবে, সেটি আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী হবে। আমাদের প্রয়োজন যেন পূরণ হয়। তিস্তা প্রকল্পে চীনও অর্থায়ন করতে চাচ্ছে- এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থান জানতে চাইলে হাছান মাহমুদ বলেন, ভারত যে এ ক্ষেত্রে সহায়তা করতে চাইছে, সে বিষয় নিয়েই আজকে আলোচনা হয়েছে।