রোহিঙ্গাদের ৫ জনে ১ জন হেপাটাইটিস-সি আক্রান্ত

কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবিরে প্রতি পাঁচজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন হেপাটাইটিস সি ভাইরাস বা এইচসিভি সংক্রমণের শিকার। এর সংখ্যাটি আনুমানিক ৮৬ হাজার ৫০০ জন। স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জামগুলো জীবাণুমুক্ত না করেই ব্যবহারের ফলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিপুল সংখ্যক রোগীর কারণে সবাইকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স (এমএসএফ) পরিচালিত এক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। আজ বুধবার এমএসএফ এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্র্থী শিবিরের প্রায় ২০ শতাংশ শরণার্থী হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত। সংখ্যার হিসেবে যা ৮৬ হাজারেও বেশি। অপর্যাপ্ত হেপাটাইটিস সি চিকিৎসা ব্যবস্থায় বেশিরভাগ শরণার্থীকে এ রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে নিরাময় করা সম্ভব হচ্ছে না। 

সেখানে বলা হয়েছে, হেপাটাইটিস সি এমন একটি রোগ যা সংক্রমিত ব্যক্তিদের মধ্যে দীর্ঘ সময় কোনো লক্ষণ প্রকাশ ছাড়া নীরব থাকতে পারে। যথাসময়ে চিকিৎসা না করলে এটি লিভারকে আক্রমণ করে মারাত্মক জটিল স্বাস্থ্যঝুঁকি যেমন- লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি করে। ক্যাম্পে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার সুযোগ সীমিত। এমএসএফ-এর এপিডেমিওলজি রিসার্চ সেন্টার, গত বছরের মে এবং জুন সাতটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৬৮০টি পরিবারের মধ্যে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে।

সমীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের জীবনের কোনো না কোনো সময়ে হেপাটাইটিস সংক্রমণে এসেছিল। এর মধ্যে, প্রায় ২০ শতাংশের মধ্যে সক্রিয় হেপাটাইটিস সি সংক্রমণ রয়েছে। বিশেষ করে, স্বাস্থ্যসেবা সরঞ্জামগুলি জীবাণুমুক্ত না করেই ব্যবহারের ফলে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

এমএসএফ মিশন প্রধান সোফি বেলাক বলেন, শরণার্থী সম্প্রদায়ের মধ্যে বিকল্প স্বাস্থ্যসেবা অনুশীলনে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। যা সম্ভাব্য চলমান সংক্রমণ এবং অতিরিক্ত জনবহুল শিবিরে বসবাসকারী জনসংখ্যার মধ্যে হেপাটাইটিস সি-এর উচ্চ প্রাদুর্ভাবের কারণ। শিবিরে বসবাসকারী শরণার্থীদের প্রতিটি প্রজন্ম হেপাটাইটিস সি-তে আক্রান্ত হয়। হেপাটাইটিস সি সংক্রমণজনিত যকৃতের জটিলতায় আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুও হতে পারে।

সোফি বেলাক বলেন, ‘প্রতিদিন স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্র থেকে হেপাটাইটিস সি আক্রান্ত রোগীদের ফিরিয়ে দিতে হয়। কারণ বিপুলসংখ্যক রোগীর যত্ন বা চিকিৎসা নিশ্চিতের প্রয়োজনটা আমাদের সংস্থার সামর্থ্যের চেয়েও বেশি।’

এই রোগীদের জন্য কোনো বিকল্প পদ্ধতি এবং সাশ্রয়ী মূল্যের চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। এটি মৌলিক অধিকার বঞ্চিত একটি রাষ্ট্রহীন জনগোষ্ঠীর জন্য চূড়ান্ত পরিণতি। যারা ইতিমধ্যে তাদের দৈনন্দিন জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে চূড়ান্ত পরিণতির মুখোমুখি হচ্ছে।