ইতিহাস পিটার ডি. হাসকে মনে রাখবে

বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদীয় নির্বাচনের অব্যবহিত আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে অপ্রত্যাশিত পরিবর্তনের প্রতিবাদে স্টেট ডিপার্টমেন্টের চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি. হাস। কূটনৈতিক সূত্রগুলো দ্য মিরর এশিয়াকে এ তথ্য জানিয়েছে। দ্য মিরর এশিয়ায় এ সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর চারদিকে শোরগোল পড়ে যায়। নানা জায়গা থেকে প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে।

রিপোর্টের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস দ্য মিরর এশিয়াকে ইমেইল করে বিস্তারিত তথ্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউস বা সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির সঙ্গের যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছে।

পররাষ্ট্রনীতির প্রতিবাদ করা বা প্রতিবাদ করে চাকরি ছেড়ে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের জন্য নজিরবিহীন নয়। বরং তালিকাটি বেশ দীর্ঘ। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রদূত হাস একা নন। 

আরো পড়ুন: যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ-নীতির প্রতিবাদে চাকরি ছাড়ছেন পিটার হাস!

বাংলাদেশের মুক্তিযু্দ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকাস্থ কনসাল জেনারেল আর্চার কে. ব্লাড পাকিস্তানের সামরিক জান্তার প্রতি তার দেশের অব্যাহত সমর্থনের বিরোধিতা করেছিলেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে ব্লাড আশ্রয় দিয়েছিলেন একজন বিদেশী সাংবাদিককে। এটা তিনি করেছিলেন যাতে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর নৃশংসতার খবর বিশ্ববাসী জানতে পারে। 

শুধু তাই নয়, মার্চ ২৭, ১৯৭১ সালে বাছাইকৃত গণহত্যা নামে পাঠানো এক টেলিগ্রামে তিনি বলেন ‘আমরা পাক সামরিক বাহিনীর সন্ত্রাসের রাজত্বের নীরব ও আতঙ্কিত সাক্ষী।’ 

আরো পড়ুন: মিরর এশিয়ার প্রতিবেদন নিয়ে ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রতিক্রিয়া

তখন ঢাকায় কর্মরত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ২০ জন সদস্যও দেশটির পররাষ্ট্রনীতির প্রতিবাদ করেছিলেন। ব্লাড টেলিগ্রাম নামে পরিচিত তারবার্তাটি শুরু হয় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নিন্দা করে— ‘আমাদের সরকার গণতন্ত্র দমনে (পাকিস্তানীদের নেওয়া পদক্ষেপের) নিন্দা করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের সরকার নৃশংসতার নিন্দা করতে ব্যর্থ হয়েছে।’ 

হাল আমলে, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সমালোচনা করে চাকরি ছাড়েন ভিক্টরিয়া নুল্যান্ড। তিনি ছিলেন যুক্তরাস্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় একজন নীতিনির্ধারক। চাকরি করেছেন ত্রিশ বছর। 

ফিলিস্তিন-ইসরাইয়েল যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সমালোচনা করেও অনেকের পদত্যাগ করার ঘটনা আমরা জানি। 

এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে পানামায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পদত্যাগ করেছিলেন। 

বিবেকের দংশনে পদত্যাগ করা নতুন কিছু নয়। তবে যারা এ কাজ করেন ইতিহাস তাদের মনে রাখে। আর্চার কে. ব্লাডের ভূমিকা নিয়ে ব্লাড টেলিগ্রাম নামের বই লেখা হয়েছে। এতো বছর পর যুক্তরাষ্ট্র তার নামে ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় ইএমকে সেন্টার তৈরি করেছে। 

ইতিহাস পিটার ডি. হাসকেও মনে রাখবে। যারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করছেন তারা পিটার ডি. হাসের অবদানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবেন তার কালজয়ী পূর্বসূরী আর্চার কে. ব্লাডের মতোই।