দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে ওদের পরিবারে এসেছে ঈদ

দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে ওদের পরিবারে এসেছে ঈদ

এসেছে খুশির ঈদ। তবে এই আনন্দ নেই তনু, অবন্তিকা আর জামালের পরিবারে। তাদের কাছে ঈদ এসেছে দুঃসহ স্মৃতি নিয়ে। কুমিল্লায় দুই ছাত্রী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা ও সোহাগী জাহান তনু এবং যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনের মৃত্যুর ঘটনা সারাদেশে সৃষ্টি করেছিল চাঞ্চল্য। তিনটি ঘটনারই তদন্ত এখনো শেষ করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফলে বিচার না পাওয়ার শঙ্কাও তৈরি হয়েছে ওদের পরিবারে। 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রী অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনাটি তদন্ত করছে থানা পুলিশ। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) করছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী তনু হত্যা মামলার তদন্ত এবং জামাল হত্যার ঘটনাটি তদন্ত করছে গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

অশ্রুসিক্ত অবন্তিকার মা
শিক্ষক পরিবারের একমাত্র বড় মেয়ে ছিলেন অবন্তিকা। ছোট ভাই অপূর্ব এ বছর এসএসসি পাস করেছেন। গত ১৫ মার্চ রাতে কুমিল্লা নগরীর বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন অবন্তিকা। 

মেয়েকে নিয়ে ঈদের স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে তাহমিনা শবনম বলেন, অবন্তিকার অষ্টম সেমিস্টারের ফলাফলে সিজিপিএ ৪.০০ এরমধ্যে ৩.৬৫ পেয়েছে। কত স্বপ্ন ছিল মেয়েটাকে নিয়ে। অবন্তিকার জন্মের পর কখনো তাকে ছাড়া আমরা ঈদ করিনি। গত বছরের ১২ এপ্রিল তার বাবা অধ্যাপক জামাল উদ্দিন মারা যান। এক বছরের মাথায় মেয়েটাকে হারালাম। এখন সারাক্ষণ কান্নাই সঙ্গী আমার।
 
হতাশা ও ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, এখনো জবির তদন্ত প্রতিবেদন বের হয়নি, পুলিশও চার্জশিট দেয়নি। জানি না বিচার পাব কি না। এর আগে কোতোয়ালি মডেল থানায় দুজনকে আসামি করে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেন তাহমিনা শবনম।

বছর ঘুরে ঈদ আসে ঈদ যায়, কষ্ট আরো বেড়ে যায়– তনুর মা
তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলছিলেন, দুর্ঘটনায় মেয়েটা মারা গেলে কিছুদিন কষ্ট পেতাম। তাকে তো হত্যা করা হলো। বিচার তো মনে হয় আর পাব না। 

ঈদের স্মৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন আনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, প্রতিটি ঈদ এলে কষ্টটা আরো বেড়ে যায়। তনু ছাড়া ঈদের আনন্দ নেই আমাদের পরিবারে। মামলার তদন্ত কী পর্যায়ে আছে তাও জানি না।

২০১৬ সালের ২০ মার্চ কুমিল্লা সেনানিবাসের একটি জঙ্গল থেকে তনুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন তার বাবা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন কোতোয়ালি মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। প্রথম দফা ময়নাতদন্তে মৃত্যুর কারণ বের না হওয়ায় ৩০ মার্চ কবর থেকে মরদেহ তুলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করা হয়। এতেও মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা যায়নি। মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ, জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সর্বশেষ ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে তদন্ত করছে পিবিআই। তবে আট বছরেও এই মামলার তদন্ত শেষ হয়নি।

তিন সন্তান নিয়ে অসহায় দিন কাটাচ্ছে জামালের পরিবার
গত বছরের ৩০ এপ্রিল কুমিল্লার দাউদকান্দির গৌরীপুরে বোরকা পরা তিন দুর্বৃত্ত গুলি করে যুবলীগ নেতা জামাল হোসেনকে হত্যা করে। তিনি তিতাস উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। তার স্ত্রী ও তিন শিশুসন্তান রয়েছে। বড় ছেলে অষ্টম শ্রেণি, মেজো ছেলে পঞ্চম ও মেয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।

জামালের স্ত্রী পপি আক্তার বলেন, কোরবানির ঈদে আপনজন ও প্রতিবেশীদের মাঝে মাংস বণ্টন করতেন জামাল। বিকেলে ঘুরতে বের হতেন। একদিকে ঈদের দুঃসহ স্মৃতি অন্যদিকে জামিনে বের হওয়া আসামিদের চোখ রাঙানিতে তিন সন্তান নিয়ে কোনো রকম বেঁচে আছি। মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। আসামিরা প্রভাবশালী, তাই বিচার পাব কিনা সেটাও জানি না।

ঘটনার দুদিন পর তিতাস উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সোহেল শিকদারসহ ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আসামিদের নামে দাউদকান্দি মডেল থানায় মামলা করেন পপি আক্তার।