উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ঈদ সেইন্ট মার্টিনে

বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ-বিচ্ছিন্ন অবস্থায় আছে সর্বদক্ষিণের প্রবাল দ্বীপ সেইন্ট মার্টিন। টেকনাফের সঙ্গে সেইন্ট মার্টিনের নৌযোগাযোগ এখনও স্থাপিত হয়নি। শুক্রবার বিশেষ ব্যবস্থায় কক্সবাজার থেকে একটি জাহাজে করে জরুরি খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হয়েছে দ্বীপটিতে। জাহাজে কোরবানির জন্য অল্প কিছু গরুও পাঠানো হয়েছে। কক্সবাজার সহ বিভিন্ন এলাকায় আটকে পড়া আড়াইশ মানুষও সেইন্ট মার্টিনে ফিরেছেন।

কিন্তু এতে অনিশ্চয়তা কাটেনি। সেইন্ট মার্টিনের অধিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দ্বীপটিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিশপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে। মজুতও কম। ফলে, দ্বীপবাসী তীব্র ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন। তাদের ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গিয়েছে।

একজন অধিবাসী জানান, কোরবানির ঈদের গরু ও ছাগল তারা টেকনাফ থেকে আনেন। কিন্তু এবার যোগাযোগ বন্ধ থাকায় কেউই কোরবানির পশু আনতে পারেনি। আগে যেখানে ৩০০’র বেশি গরু কোরবানি দেওয়া হতো এবার সেখানে ৫০টির কম গরু কোরবানি দেওয়া হয়েছে।

সীমান্তের ওপারে বার্মায় তীব্র সংঘর্ষ চলছে বার্মার সামরিক জান্তা ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে। এই ভীতিকর পরিস্থিতিতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় ঈদ পালন করছেন সেইন্ট মার্টিনের অধিবাসীরা।  সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেইন্ট মার্টিন নিয়ে তীব্র অসন্তোষ ও সমালোচনার পর সরকারের পক্ষ থেকে নানা আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই প্রতিক্রিয়া তৈরি না হলে সরকার নির্বিকার থাকতো বলেই তারা মনে করেন।

তবে সেইন্ট মার্টিন দ্বীপের সাথে বার্মার সীমান্ত এলাকায় এখনও কোস্টগার্ড, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বা নৌবাহিনীর টহল দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সেইন্ট মার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান দ্য মিরর এশিয়াকে বলেন, এই সীমানায় বিজিবি টহল থাকলে আমাদের যাতায়াত করতে সমস্যা হতো না। টহল এখন কমে গেছে। বিজিবি পিছু হটছে সেটা বলবো না। জান্তা সরকার নাকি বিদ্রোহীরা, কারা গুলি করছে জানি না। আমরা সরকারকে জানিয়েছি, আশা করি সরকার এই এলাকায় টহলের সিদ্ধান্ত অবশ্যই নেবে।

মুজিবুর রহমান বলেন, গত ছয় তারিখ সন্ধ্যায় আমাদের কিছু ট্রলারকে গুলি করছে, তারা ক্ষতি আমাদের করছে; কিন্তু মানুষ মরে নাই। গত ছয় তারিখ থেকে আমাদের ট্রলার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। বর্ষাকালে আমাদের কক্সবাজার যাওয়ার বিকল্প কোনো রুট নেই বলে বার্মার সীমান্ত ঘেঁষে চলাচল করতে হয়। এ নৌপথেই গুলির ঘটনা ঘটছে।

মুজিবুর রহমানের বাবা সেন্ট মার্টিন ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বলেন, আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছি, বিকল্প একটা রুট চালু করতে। যে রুট দিয়ে আমাদের বাবা-দাদারা চলাচল করেছে, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে সেন্ট মার্টিন রুট হলো সেই পথ।

সাগরের মোহনা থেকেই বার্মিজদের সাথে গণ্ডগোলটা শুরু হয়। মুজিবুর রহমান জানান, নাফ নদীতে আমাদের সীমান্তের ভেতরের অংশ ভরাট হয়ে গেছে অনেক জায়গায়, সে কারণে বর্মিজ সীমান্তের পাশ দিয়ে আসতে হয় আমাদের। নাফ নদীর মোহনা থেকে আমাদের যে সীমানা রয়েছে ওখানে বালি ভরাট হয়েছে, ওখানে ড্রেজিং করলে আমাদের আর কোন সমস্যা হবে না।

মুজিবুর রহমান বলেন, আমরা এখন যে রাস্তায় চলাচল করি, ওটা সীমান্তের কাছে বলে গুলির আশঙ্কা থাকে। আমরা বলেছি, যে বিকল্প পথ আছে, সেখানে ড্রেজিং করে দিলে, আমাদেরকে সীমান্তের পথে যেতে হবে না। নাফ নদীর মোহনা থেকে সাগরে আসার ২-৩ কিলোমিটার পথে ঝুঁকি রয়েছে এখনও।

মুজিবুর রহমান আরো বলেন, (বার্মার) যুদ্ধজাহাজ তাদের সাগরেই আছে, আমাদের সীমানায় নেই এখন। এখন পর্যন্ত যাতায়াত বন্ধ আছে আমাদের। কী কারণে নাব্যতা ঠিক করা হচ্ছে না, সেটা জানেন না বলেও জানান এই জনপ্রতিনিধি।

বিদ্রোহীদের বাংলাদেশ থেকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দেয়া হচ্ছে, সেজন্য তারা গুলি করছে- এমন অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে মুজিবুর বলেন, এটা সম্ভব না, এরকম কিছু হলে আমরা জানতাম।

চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, এই মূহূর্তে প্রায় দশ হাজার মানুষের ১৫ দিনের খাদ্য মজুদ আছে সেন্টমার্টিনে। বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের দু’টি জাহাজ সবসময় সেন্টমার্টিনেই থাকে।

রবিবার আইএসপিআর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ‘মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ মিয়ানমারের মূল ভূখণ্ড এবং তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় চলমান রয়েছে। আরও উল্লেখ্য যে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের কাছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের একাধিক জাহাজ মিয়ানমারের জাহাজের গতিবিধি পর্যবেক্ষণসহ বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় থেকে নিয়মিত টহল দিচ্ছে।’