শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় হাসপাতালে

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। ফাইল ছবি

জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। পেসমেকার পাল্টানোর জন্য ভারতের কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার হয়েছে তার।

পরিবারের সদস্যদের বরাতে কলকাতার বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার বলছে, তিন দিন আগে শীর্ষেন্দুকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে কোনো অসুস্থতার জন্য নয়।

হৃদযন্ত্রের জটিলতা এড়াতে শীর্ষেন্দুর বুকে পেসমেকার বসানো রয়েছে অনেকদিন ধরেই । চিকিৎসার নিয়ম অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় পরপর সেই পেসমেকার বদলাতেও হয়। লেখকের পেসমেকারটি পুরনো হয়ে গিয়েছিল। সেই পেসমেকার পাল্টানোর অস্ত্রোপচারের জন্যই এবার তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেই অস্ত্রোপাচার সফল হয়েছে। মাঝে কিছুটা শ্বাসকষ্ট শুরু হলেও এখন ভালো আছেন ৮৮ বছর বয়সী সাহিত্যিক।

হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে, তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল। কয়েকদিন পরেই ছেড়ে দেওয়া হবে দুই বাংলার জনপ্রিয় এই সাহিত্যিককে।

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের জন্ম বাংলাদেশের ময়মনসিংহে। সেখানেই তার জীবনের প্রথম ১১ বছর কাটে। পরে বাবার রেলের চাকরির সুবাদে শৈশবে ময়নমনসিংহ থেকে শীর্ষেন্দুর পরিবার ভারত চলে যায় এবং শৈশব-কৈশরের একটা সময়ে ভারতের নানা জায়গা ঘুরে তারা থিতু হন কলকাতায়। এছাড়া দেশভাগের সময় ময়মনসিংহ থেকে এই লেখকের পরিবারের অন্য সদস্যরাও কলকাতায় চলে যান।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর শীর্ষেন্দু প্রথম জীবনে স্কুল শিক্ষক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। তার লেখালেখি শুরু গল্প দিয়ে।

শীর্ষেন্দুর জীবনের প্রথম দুটি গল্প ফেরত এসেছিল দেশ পত্রিকার দপ্তর থেকে। তৃতীয়টি পাঠানোর পর তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যদি এটি ছাপা না হয়, তাহলে লেখালেখিই ছেড়ে দেবেন। ‘জলতরঙ্গ’ নামে সেই তৃতীয় গল্পটিই ছিল শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ছাপা হওয়া প্রথম লেখা। প্রকাশ হয় ১৯৫৯ সালে।

এর সাত বছর পরে একই পত্রিকার পূজাবার্ষিকীতে তার প্রথম উপন্যাস ‘ঘুণপোকা’ প্রকাশিত হয়। আর ছোটদের জন্য লেখা শীর্ষেন্দুর প্রথম গল্প ‘মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি’, যা তিনি লিখেছিলেন আনন্দমেলার তৎকালীন সম্পাদক ও কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর অনুরোধে, অনেকটা অনিচ্ছায়। কিন্তু তার প্রথম কিশোর উপন্যাসই লুফে নেয় প্রায় সব বয়সের পাঠক।

এরপর ‘ঝিলের ধারে বাড়ি’, ‘চক্রপুরের চক্করে’, ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’, ‘ছায়াময়','গোলমাল. 'ঢেকুর', 'দুই পালোয়ান', 'জয় পালোয়ান', 'কৌটার ভূত'সহ আরো অনেক লেখা শীর্ষেন্দু শিশু-কিশোরদের জন্য লিখেছেন গত ছয় দশক ধরে। বিশেষ করে পূজায় প্রতিবছর প্রকাশিত 'আনন্দমেলা পূজা সংখ্যায়' শীর্ষেন্দুর ছোটদের গল্প-উপন্যায় প্রকাশ হয়ে পড়ে অবধারিত।

ছোটদের জন্য লেখাগুলোয় একটি ভূত, থানার দারোগা, ডাকাত বা চোর, ব্যায়ামবীরএবংবৈজ্ঞানিক এই কয়েকটি চরিত্রকে শীর্ষেন্দু করেছেন স্থায়ী।

তার তিন বিখ্যাত কিশোর উপন্যাস গোঁসাইবাগানের ভূত, ছায়াময় ও মনোজদের অদ্ভুত বাড়ি নিয়ে বানানো হয়েছে তিনটি সিনেমা এবং তিনটিই বক্স অফিসে বাজিমাত করেছে।