বৃহস্পতিবার থেকে হজের ফিরতি ফ্লাইট শুরু

হজ শেষে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে দেশে ফেরার ফ্লাইট শুরু হবে বলে জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। চলতি বছর হজ করতে গিয়ে সৌদি আরবে মোট ২১জন হজযাত্রী মারা গেছেন। আজ বুধবার হজ পোর্টালে আইটি হেল্পডেস্কের প্রতিদিনের বুলেটিন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৪ হাজার ৫৬২ এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এজেন্সির মাধ্যমে ৮০ হাজার ৬৯৫ জনসহ ৮৫ হাজার ২৫৭ জন হজ করতে যান।

বুলেটিন থেকে জানা গেছে, মারা যাওয়া হজযাত্রীদের মধ্যে ১৮ জন পুরুষ ও তিনজন নারী। তাদের মধ্যে মক্কায় ১৬ জন, মদিনায় চারজন এবং মিনায় একজন মারা গেছেন। হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর পর যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তার নাম মো. আলমগীর হোসেন খান (৭৩), গত ১৬ জুন মিনায় মারা যান। বাকি তিনজনের নাম ও পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

হজ ডেস্কের তথ্যমতে, হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরুর আগে গত ১২ জুন বুধবার সৌদিতে দুজন মারা যান। তারা হলেন-মো. শাহ আলম (৭৭) ও সুফিয়া খাতুন (৬২)। তাদের বাড়ি যথাক্রমে কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ। চলতি হজ মৌসুমে সৌদি আরবে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে গত ১৫ মে মো. আসাদুজ্জামান নামে এক হজযাত্রী মারা যান।

মারা যাওয়া অন্য হজযাত্রীরা হলেন- নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার মো. আসাদুজ্জামান (৫৭), মো. ভোলা জেলা মো. মোস্তফা (৯০), কুড়িগ্রাম জেলার লুৎফর রহমান (৬৫), ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জের মুরতাজুর রহমান (৬৩), চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার মোহাম্মদ ইদ্রিস (৬৪), ঢাকা জেলার মোহাম্মদ শাহজাহান (৪৮), কুমিল্লা জেলার আলী ইমাম ভুঁইয়া (৬৫), কক্সবাজার জেলা মহেশখালী উপজেলার মো. জামাল উদ্দিন (৬৯), কক্সবাজার জেলা রামু উপজেলার মোহাম্মদ নুরুল আলম (৬১), কক্সবাজার জেলা চকরিয়া উপজেলার মাকসুদ আহমদ (৬১), ফরিদপুর জেলার মমতাজ বেগম (৬৩), ঢাকার রামপুরার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম (৫৭), গাইবান্ধা জেলা গোবিন্দপুর উপজেলার মো. সোলাইমান (৭৩), রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শাহজাদ আলী (৫৫) এবং রংপুরে তারাগঞ্জের গোলাম কুদ্দুস (৫৪)।

সৌদি আরবের আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি হজ করতে গিয়ে যদি মারা যান, তা হলে তার মরদেহ সৌদি আরবে দাফন করা হয়। নিজ দেশে আনতে দেওয়া হয় না। এমনকি পরিবার-পরিজনের কোনো আপত্তি গ্রাহ্য করা হয় না। মক্কায় হজযাত্রী মারা গেলে মসজিদুল হারামে জানাজা হয়।

এর আগে গত মাসের ৮ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর আশকোনা হজ ক্যাম্পে হজ কার্যক্রম-২০২৪-এর (হিজরি ১৪৪৫) উদ্বোধন করেন। প্রধান অতিথি হিসেবে হজ কার্যক্রমের উদ্বোধনের পর হজযাত্রীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তিনি। বাংলাদেশের জনগণের জন্য হজযাত্রীদের কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।

পরেরদিন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশি হজযাত্রীদের বহনকারী হজ ফ্লাইট শুরু হয়। এদিন সকাল ৭টা ২০ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৪১৯ জন হজযাত্রী নিয়ে প্রথম হজ ফ্লাইটটির (বিজি-৩৩০১) সৌদি আরবের জেদ্দার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। 

হজ কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ধর্মমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. এ হামিদ জমাদ্দার।

উল্লেখ্য চলতি বছর তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেই শুরু হয় হজ। ফলে এ বছর হজের সময় অন্তত সাড়ে ৫০০ হজযাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। যাদের বেশিরভাগেরই মৃত্যু হয়েছে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে। এর মধ্যে ৩২৩ জন মিসরের নাগরিক, যাদের বেশির ভাগ তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। অপরদিকে জর্ডানের অন্তত ৬০ জনের মৃত্যু হয়েছে। কূটনীতিকরা বলছেন, আম্মান কর্তৃক মঙ্গলবারের আগে দেওয়া এ সংখ্যা ছিল ৪১।

এএফপির তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত একাধিক দেশ থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে হজযাত্রী মৃতের সংখ্যা ৫৭৭। আল-মুয়াইসেমের মর্গে ৫৫০ জনের মরদেহ রয়েছে বলে জানিয়েছেন কূটনীতিকরা।

এদিকে সৌদি কর্তৃপক্ষ হজযাত্রী মৃত্যুর বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি। তবে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে গরমে অসুস্থ হয়ে ২ হাজারজনের বেশি হজযাত্রীর চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জানানো হয়েছে। গত বছর বিভিন্ন দেশের অন্তত ২৪০ হজযাত্রীর মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। যাদের অধিকাংশই ছিলেন ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক।

প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ মানুষ হজ করতে সৌদি আরব যান। চলতি বছর সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশ মিলিয়ে হজে অংশ নিয়েছেন মোট ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ১৬৪ জন। এর মধ্যে বিদেশি রয়েছেন ১৬ লাখ ১১ হাজার ৩১০ জন এবং সৌদি নাগরিক ও দেশটিতে অবস্থানকারী প্রবাসী মিলিয়ে হজে অংশ নিয়েছেন ২ লাখ ২১ হাজার ৮৫৪ জন।

সৌদি আরবের সরকারি পরিসংখ্যান অফিস ‘জেনারেল অথরিটি ফর স্ট্যাটিস্টিকস’ (জিএএসটিএটি) এ তথ্য প্রকাশ করেছে। সৌদি প্রেস এজেন্সির বরাতে সৌদি গেজেট হজে অংশগ্রহণকারীদের এ তথ্য জানিয়েছে।

জিএএসটিএটি বলছে, স্থানীয় ও বিদেশি মিলিয়ে এবার ৯ লাখ ৫৮ হাজার ১৩৭ জন পুরুষ হজে অংশ নিয়েছেন; নারী রয়েছেন ৮ লাখ ৭৫ হাজার ২৭ জন।

মোট অংশগ্রহণকারীর মধ্যে আরব দেশগুলো থেকে গেছেন ২২ দশমিক ৩ শতাংশ। এশিয়ার ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ, আফ্রিকার ১১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ইউরোপ, আমেরিকা, অষ্ট্রেলিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলের হজযাত্রী রয়েছেন ৩ দশমিক ২ শতাংশ।

এর মধ্যে সৌদি আরবে উড়োজাহাজে করে গেছেন ১৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩৪৫ জন, স্থলপথে ৬০ হাজার ২৫১ জন এবং সমুদ্রবন্দর হয়ে হজে গেছেন ৪ হাজার ৭১৪ জন। এবার বাংলাদেশ থেকে হজ করতে সৌদি আরব গেছেন ৮৫ হাজারের বেশি মানুষ।