কালো টাকা সাদা করার বিধান পুনর্বিবেচনা করা উচিত: মোমেন

ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার বিধান নিয়ে সংসদে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও  সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

বৃহস্পতিবার (২০) সংসদে তিনি এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বাজেটে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার ঘোষণার কারণে সৎ করদাতারা হতাশ হয়ে পড়েছেন।

২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় তিনি বলেন, আমি অবশ্যই মনে করি কালো টাকা সাদা করার সুযোগ পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।

এসময় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রাজস্ব বৃদ্ধি, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও হয়রানির চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেন মোমেন।

দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ খাদ্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় উল্লেখ করে পেঁয়াজ ও আলু উৎপাদনে উদ্বৃত্তের ইঙ্গিত দিয়ে সরকারি পরিসংখ্যান তুলে ধরেন মোমেন।

তিনি বলেন,‘২৮ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে স্থানীয়ভাবে ৩৪ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। একইভাবে আলুর উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১০৪ লাখ টন, যা চাহিদার তুলনায় ২৫ লাখ টন বেশি। যদি তাই হয়, তাহলে এসব পণ্যের দাম বাড়বে কেন? আমাদের পরিসংখ্যানে ভুল আছে।’


কর্মসংস্থান সংকট নিয়েও কথা বলেন তিনি। মোমেন বলেন, অপর্যাপ্ত স্থানীয় চাকরির কারণে অনেক নাগরিক বিদেশে সুযোগ খোঁজেন। ‘সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে মাত্র ৩ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ বেকার। তবে আমার অফিসে আসা ১০ জনের মধ্যে ৬ জনই চাকরি খুঁজছেন।’

মোমেন কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে বেসরকারি খাতের গুরুত্বের ওপর জোর দেন এবং ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঋণ গ্রহণের সম্ভাব্য প্রভাব তুলে ধরেন। তিনি সতর্ক করে বলেন,‘বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার এক লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে, যা বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের ঋণ থেকে বঞ্চিত করতে পারে। এ বিষয়ে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’

রাজস্ব আদায়ের বিষয়টিকে একটি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, ১৭ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে মাত্র ৩০-৩২ লাখ মানুষ করদাতা, যা প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় সর্বনিম্ন।

তিনি আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক কর পরিধির প্রস্তাব করেন, যাতে জাতীয় পরিচয়পত্রধারী সকল ব্যক্তিকে বার্ষিক আর্থিক বিবরণী জমা দিতে হবে। এই পদক্ষেপের ফলে করদাতার সংখ্যা বর্তমানের ৩০-৩২ লাখের পরিবর্তে দুই-তিন কোটিতে উন্নীত হতে পারে।

রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, পারিবারিক মর্যাদা বৃদ্ধি ও হয়রানি হ্রাসে রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে ব্যাপক প্রচারণা চালানোর আহ্বান জানান সাবেক এই মন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমলাদের একটি অংশ দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন, যা মানুষের হয়রানি তীব্রতর করছে। মুষ্টিমেয় কিছু দুর্নীতিবাজ আমলার কারণে গোটা আমলাতন্ত্রকে দোষারোপ করা হয়।’