মোংলা, পায়রা বন্দর এবং বাংলাদেশের শ্রমবাজারে প্রবেশে ভারতের চাপ

ভারতের নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনা। ২২ জুন, ২০২৪। পিআইডি

বাংলাদেশের শ্রমবাজার ভারতীয়দের জন্য উন্মুক্ত করাা এবং মোংলা ও পায়রা বন্দর ব্যবহারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত চাপ দিচ্ছে বলে সূত্রে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। আর আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়েছে, ঢাকা ও নয়াদিল্লি কমপ্রিহেনসিভ বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করেছে। এক বিবৃতিতে ভারতের প্রধালমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, উভয় পক্ষই অর্থনৈতিক সম্পর্ক এগিয়ে নিতে কমপ্রিহেনসিভ অর্থনৈতিক অংশীদারি চুক্তি (সেপা) নিয়ে আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো দ্য মিরর এশিয়াকে জানায়, ভারত বাংলাদেশকে শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে চাপ দিচ্ছে। সূত্রগুলো বলছে, বাংলাদেশ ভারতের এ দাবিতে নীতিগতভাবে রাজি হলেও কীভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। ভারতের প্রস্তাব অনুযায়ী দুই দেশের নাগরিকদের জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়ে থাকবে। এতে দুই দেশের নাগরিকরা সরাসরি কাজ ও চাকরির সুযোগ পাবে। বাংলাদেশের শ্রমবাজার ভারতীয় নাগরিকদের জন্য খুলে দেওয়া হলে তাদের নাগরিকরা বাংলাদেশে সব ধরনের কাজ করতে পারবে।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, অভিযোগ আছে ছয় লাখ ভারতীয় বাংলাদেশে অবৈধভাবে কাজ করে। যাদের বেশিরভাগই ভ্রমণ ভিসায় এসে কাজ করছেন। এদের বৈধ করার পাশাপাশি ভারতীয়দের নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টির জন্য এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। ভারত বেশ কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশ সরকারকে শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার বিষয়ে চাপ দিচ্ছে। কিন্তু সরকারিভাবে ভারতীয়দের বাংলাদেশে চাকরির সুযোগ দিলে বাংলাদেশিদের চাকরির সুযোগ কমবে, অনেকে চাকরি হারাবে এবং এতে বেকারত্ব বাড়বে।  

তারা আরো বলছেন, ভারতে বাংলাদেশিরা চাকরির সুযোগ কতটা পাবে, সে প্রশ্নও রয়েছে। এখানে কারিগরি, ভাষাগত দক্ষতার বিষয়গুলোও রয়েছে। 

এদিকে শনিবার দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে ভারতের প্রধানমনত্রী নরেন্দ্র মোদি শেখ হাসিনাকে বলেছেন, নতুন নতুন ক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতার জন্য একটি ভবিষ্যতমুখী ভিশন তৈরি করা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু না বললেও কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে, নীল অর্থনীতির (ব্লু ইকোনমি) নামে মোংলা ও পায়রা বন্দর ব্যবহারে জন্য ভারত দাবি জানিয়েছে। ভারতের এ আব্দার অনেক পুরানো হলেও বাংলাদেশ অনেকদিন ধরে এটা নিয়ে ইতস্তত করছিল চীনের কারণে। 

এর আগে মোংলা বন্দরে বিনিয়োগের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার চীনের কাছ থেকে ঋণ সহায়তা নিয়েছে। আর মোংলা বন্দরে একটি টার্মিনাল নির্মাণের কথা বিবেচনা করছে ভারত। 

শনিবার ঢাকা ও দিল্লি ১০টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছে। এ ছাড়া প্রতিরক্ষা উৎপাদন ও আধুনিকীকরণসহ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং ডিজিটাল যোগাযোগ, সমুদ্র এবং রেলওয়ে সংযোগের চুক্তিও হয়েছে।

দিল্লির পর শেখ হাসিনা যাচ্ছেন চীনে। দেশটি তিস্তা প্রকল্পে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। বাংলাদেশ তার ক্ষয়িষ্ণু বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ চাঙ্গা করতে চীনের কাছ থেকে ঋণ চায়। এদিতে তিস্তা প্রকল্পে চীনের উপস্থিতি ভালোভাবে নেবে না ভারত। এ বিষয়টি কীভাবে সামাল দেবে বাংলাদেশ তা তা হয়তো শেখ হাসিনার চীন সফরের পরই বুঝা যাবে।